মুড়াপাড়া হল নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার একটি ঐতিহাসিক গ্রাম ও ইউনিয়ন। শীতলক্ষ্যা নদীর কোলঘেঁষে গড়ে উঠা এ জমিদার বাড়িটির নাম করন করা হয়েছে এই গ্রামের নাম থেকে। ১৮৮৯ সালে রাম রতন ব্যানার্জী এখানে জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন পুরান ঢাকার তাঁতী বাজারের ব্যবসায়ী। মূলত সেই জমিদারীকে প্রসারিত করেন তার ছেলে বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জী। তিনি জমিদারী পান ১৮৯৯ সালে। বিজয় বাবুর দুই ছেলে জগদীশ ও আশুতোশ। বড় ছেলে হওয়ার সুবাদে পরবর্তী জমিদার হন জগদীশ ব্যানার্জী। তাদের জমিদারী মূলত তিন পুরুষেই সীমাবদ্ধ ছিল।
মতান্তরে রামরতন ব্যানার্জি ছিলেন নাটোরের রাজার এক বিশ্বস্ত কর্মচারী। তার সততার পুরস্কার হিসেবে তিনি মুড়াপাড়া এলাকায় বেশকিছু জায়গির সম্পত্তি লাভ করেন। পরে ১৯০৯ সালে জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জি এ বাড়ির কাজ সুসম্পন্ন করেন। তিনি এ এলাকার ক্ষমতাধর জমিদার হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় জগদীশ ব্যানার্জি এ দেশ ছেড়ে কলকাতায় চলে যান এবং বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। তারপর থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাড়িটি দখল নেন ও এখানে হাসপাতাল এবং কিশোরী সংশোধন কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে এখানে স্কুল এবং কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করা হত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটির দায়িত্ব গ্রহণ করে সেটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন। বর্তমানে এটি মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ নামে পরিচিত ।
১৭.৫০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির(Murapara Jamidar Bari) সদর দরজার সামনে দিয়ে বয়ে গেছে শীতলক্ষা নদী। সে সময় যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিলো নৌ-পথ, সে কথা মাথায় রেখেই বোধহয় বাড়িটি নদীর পাড় ঘেষে নির্মাণ করা হয়েছিলো। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা দুই তলা একটি দালানকে কেন্দ্র করে বিশাল আয়তনের এই বাড়ি। সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করেই বড় খোলা প্রান্তর। হাতের বামে দুইটি মন্দির কক্ষ, তার পেছনেই বিশাল আম বাগান। প্রান্তর পেরিয়ে গেলে বাঁধানো চারটি ঘাটবিশিষ্ট একটি পুকুর। পুকুরের সামনেই খোলা সবুজ মাঠ। জমিদার বাড়ির মূল ভবনের পেছনে পাকা মেঝের একটি উঠান। উঠানটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। কারণ এর চারপাশ দ্বীতল দালানদ্বারা বেষ্টিত। উত্তর পাশেরটি অন্দর মহলের মন্দির। ভবনের এই অংশের পেছনেও রয়েছে আরেকটি দালান। এই জমিদার বাড়িটিতে ৯৫টি কক্ষ মধ্যে রয়েছে বেশকিছু নাচঘর, আস্তাবল, মন্দির, ভাণ্ডার এবং কাচারি ঘর।
ভবনের সামনের পুকুরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, পানি কম বেশি হওয়ার ব্যাপারটি ছিল শীতলক্ষার সাথে সম্পর্কিত, কারণ এই পুকুর মাটির নিচ দিয়ে নদীর সাথে সম্পর্কযুক্ত।
একদিনের পিকনিকের জন্য দারুন জায়গা। চাইলে সকাল বেলা পানাম নগর ঘুরে এখানে আসতে পারেন,অথবা সরাসরি এখানেই আসতে পারেন। কাচপুর নেমে মুড়াপাড়াগামী বেবিট্যাক্সিতে চড়ে সরাসরি এখানে এসে মূল গেটে নামতে পারবেন। ঠিক পাশেই নদী, মন চাইলে শীতলক্ষার লক্ষ্মী শীতল জলে আপনিও শীতল হয়ে নিতে পারবেন। অথবা জমিদার বাড়ির সামনে পিছে দুইটি পুকুর, যেটায় খুশি নামতে পারবেন।বন্ধের দিনে আসলে ভালো হয়, তাতে কলেজের শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহনে ব্যাঘাত ঘটবে না। কাছেই মুড়াপাড়া বাজার। ওখানে গিয়ে হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন, কলেজের বিশাল সবুজ মাঠে খেলাধূলাও করতে পারবেন।
কীভাবে যাবেন
রুট ১ঃ ঢাকার সায়েদাবাদ, গুলিস্তান অথবা যাত্রাবাড়ী থেকে মেঘলা, গ্লোরী, আসিয়ান পরিবহন অথবা নরসিংদী ভৈরবগামী যেকোন বাসে রূপসী বাসস্ট্যান্ড অথবা ভুলতা নামতে হবে। তারপর রিকশাযোগে জমিদার বাড়ি। রূপসী বাসস্টেশন থেকে সিএনজি করে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি যাওয়া যায়। এছাড়া ডেমরাঘাট হয়ে উত্তর দিকের রাস্তা ধরে মাঝিনা ঘাট পাড় থেকে নৌকায় শীতলক্ষ্যা নদী পার হলেই জমিদার বাড়ি।
রুট ২ঃ কুড়িল ফ্লাইওভার এর নিচে প্রাইভেটকার পাবেন, ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৬০টাকা কাঞ্চনব্রিজ পর্যন্ত, গাড়ি থেকে নেমে একটু হেটে সামনে গেলেই সিএনজি পাবেন জনপ্রতি ভাড়া ৪০টাকা, সিএনজি আপনাকে নামিয়ে দিবে রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা ফেরি খাটে, ফেরি পার হতে পারবেন ফ্রি তে, ফেরি পাড় হয়ে রিক্সা অথবা অটো ভাড়া ১৫টাকা অটো ভাড়া ৫টাকা।