মহামায়া লেক ও সেচ প্রকল্প – চট্টগ্রাম

ছোট ছোট সবুজ পাহাড় আর মাঝখানে স্বচ্ছ পানির লেক। লেককে ঘিরে আছে পাহাড়, পাহাড়কে ধারন করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে লেক। এরকম সবুজ মায়ার মায়াময় স্থানের নাম মহামায়া লেক।

চট্রগ্রাম শহর থেকে ৪৫ কিঃ মিঃ দুরে ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ কৃত্রিম লেকটি।

প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটারের এ মহামায়ায় স্বচ্ছ পানির লেক, ঠান্ডা পানির ঝরনা ,সবুজ পাহাড় আর নীলাকাশসহ সব মায়াই আছে এ লেকে। দেখলে বিশ্বাস ই হবে না এটি কৃত্রিম লেক। লেকটি কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে ইকোপার্ক। আছে রাবার ড্যাম। পাহাড়ের কোলঘেঁষে আঁকাবাঁকা লেকটি দেখতে অপরূপ সুন্দর।

ছোট বড় অসংখ্যা পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এই মহামায়া লেক(Mahamaya Lake)। এই লেকের অন্যতম আর্কষণ হচ্ছে পাহাড়ি ঝর্ণা এবং এর স্বচ্ছ পানি। এর জলাধারের চারপাশে দেখলে মনে হবে সবুজের চাদর বিছানো রয়েছে।

কাজের ব্যস্ততা ভুলে প্রকৃতির সাথে কাটানোর জন্য শান্ত ও জন কোলাহল মুক্ত খুব সুন্দর একটা স্থান। নৌকা দিয়ে লেকে ঘুরাঘুরির পাশাপাশি ,আপনি চাইলে নিরিবিলি স্থানে বসে বর্শি দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন । অবশ্য এজন্য আপনাকে বর্শি আগে থেকে নিয়ে যেতে হবে।

মহামায়া লেকের নীল জলরাশিতে আপনি ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা বা ইঞ্জিন চালিত নৌকা দেখতে পাবেন। এই নৌকায় পরিবার পরিজন নিয়ে আপনি লেকের স্বচ্ছ পানিতে ঘুরতে পারেন এবং হারিয়ে যেতে পারেন লেকের অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে।

এই নৌকা ভ্রমণে খরচ হতে পারে ৫০০-১০০০ টাকা এবং জনপ্রতি প্রায় ৪০ টাকা।

নৌকাতে বসে মহামায়া লেকের চারপাশের পাহাড় ও বিশাল জলরাশি আপনাদের মুগ্ধ করে তুলবে। বিকেল বেলা সূর্য যখন অন্তিম নীলিমায় ডুবে যায় তখন লেকের পরিবেশটি খুবই চমৎকার লাগে।

পরিবার-পরিজন বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে পিকনিকের জন্য মহামায়া লেক দারুণ একটি স্থান। আপনি চাইলে এখানে রান্নাবান্না করেও খেতে পারবেন। লেকের পাড়ের বিশাল ভূমিতে চাইলে ছোট বড় সবাই মিলে বিভিন্ন খেলারও আয়োজন করতে পারেন।

মহামায়া লেকে যেতে যেতে বাসে দেখতে পাবেন সিতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য। তবে চন্দ্রনাথে যেতে আপনাকে আরেকটা দিন হাতে রাখতে হবে। একদিনে মহামায়া লেক ঘুরে আসতে চাইলে দিনের বাকি সময় টুকু চট্রগ্রামের  প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আইআইইউসির সুন্দর ক্যাম্পাস আর ভাটিয়ারির জন্য রেখে দিতে পারেন । ভাটিয়ারিতে পাবেন স্বচ্ছ পানির লেক আর সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত গলফ মাঠ ।

কিভাবে যাবেন

সড়ক পথে ঢাকা থেকে মহামায়া –

বিআরটিসি এর বাসগুলো ছাড়ে ঢাকা কমলাপুর টার্মিনাল থেকে। আর অন্যান্য এসি, নন এসি বাসগুলো ছাড়ে সায়দাবাদ বাস স্টেশন থেকে। যেমন সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক প্রভৃতি বাস করে আপনি যেতে পারেন। এসি বাসগুলোতে ভাড়া ৮৫০-১১০০ টাকা। আর এস আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলী, হানিফ, ঈগল প্রভৃতি পরিবহনের চেয়ারকোচ বাসে ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা। সবগুলো বাসই মিরসরাইতে থামে। মিরসরাই বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি অটোরিক্সা বা অন্য কোন বাহনে ঠাকুরদিঘী বাজারে এসে পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে মহামায়ায় প্রবেশ করতে হয়।

তবে ভাড়ার বিষয়টি আগে কথা বলে নিলে ভালো হয়। ঢাকা থেকে যদি মহামায়া লেক দেখতে আসেন তাহলে রাতের গাড়িতে উঠলে সকালবেলায় মহামায়া দেখে বিকেলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে পারবেন বা চট্টগ্রাম শহরটা ঘুরে রাতে ট্রেন বা বাসে করে চলে যেতে পারবেন। মহামায়া থেকে চট্টগ্রাম শহরে যেতে সময় লাগবে ২ ঘণ্টার মতো।

চট্টগ্রাম থেকে মহামায়া –

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার বাসগুলো অলঙ্কার, এ কে খান, কর্ণেলহাট বাস ষ্টেশন থেকে ছাড়ে । আর জেলার অভ্যন্তরের বিভিন্ন রুটের বাসগুলো মাদারবাড়ী, কদমতলী বাসষ্টেশন থেকে ছাড়ে। চট্টগ্রাম থেকে মিরসরাই আসতে হলে জেলার অভ্যন্তরীন রুটের বাসগুলোতে ভ্রমণ করতে হবে। অলংকার সিটি গেইট থেকে যেকোনো লোকাল বাসে করেওসময় লাগবে ১ ঘন্টা। ভাড়া ৪০ থেকে ৭০ টাকা। আর নিজে যদি আলাদা যেতে চান তবে সিএনজি অটো রিক্সা কিংবা মাইক্রোবাস করে যেতে পারবেন সেক্ষেত্রে ভাড়া আশা যাওয়া ১০০০ থেকে ১৪০০ নিতে পারে।

শহর থেকে গাড়িতে আপনাকে মিরসরাই থানার ঠাকুর দিঘী বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হাটা পথ, চাইলে  মিরসরাই বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি, অটোরিকশা বা অন্য কোনো বাহনেমহামায়ায় যাওয়া যায়। সাথে গাড়ি থাকলে আরো সহজ হবে।

ফেনী থেকে মহামায়া –

ফেনী শহর  থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে নোয়াখালী, কুমিল্লা পরশুরাম, চাঁদপুর ও ফেনীর বাস চলাচল করে। যে কোন বাসে করে আপনি মিরসরাই বা ঠাকুরদিঘী চলে আসতে পারেন।

রেলপথে চট্টগ্রাম:
ট্রেনে ঢাকা-চট্টগ্রামের রুটে মহানগর প্রভাতী ঢাকা ছাড়ে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে, চট্টলা এক্সপ্রেস সকাল ৯টা ২০ মিনিটে, মহানগর গোধূলি ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৩টায়, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে, তূর্ণা ঢাকা ছাড়ে রাত ১১টায়। ভাড়া ১৬০ থেকে ১১০০ টাকা। নতুন যোগ হয়েছে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। যা বিরতিহীন ভাবে চট্টগ্রামে যায়।

তার পর সেখান থেকে চট্টগ্রাম থেকে মহামায়ার নির্দেশিকা অনুসরন করুন।

খাবার ও থাকার ব্যবস্থা

মহামায়া লেকে যাওয়ার আগে সঙ্গে করে খাবার নিয়ে গেলে ভালো হবে। নতুবা  মিরসরাই বাজারে বেশ কিছু হোটেল আছে সেখান থেকে খাবার খেয়ে বা প্যাকেটে করে নিয়ে যেতে পারেন। ম

হামায়া লেকের আশপাশে থাকার মতো তেমন ভালো মানের কোনো হোটেল নেই। তবে মিরসরাই বারৈয়ারহাটে কিছু হোটেল আছে থাকার মতো।

আপনি চাইলে চট্টগ্রাম শহরে এসে থাকতে পারবেন। শহরের জিওসি মোড়, লাভলেইন, নিউমার্কেট, স্টেশন রোডে বেশ কিছু মানসম্পন্ন হোটেল আছে। আপনি পরিবার-পরিজন নিয়ে এই হোটেলগুলোতে থাকতে পারেন। এই হোটেলগুলোর খাবারের মানও বেশ ভালো ।

লেকে নামার আগে কিছু সতর্কতা-

  • আপনি সাঁতার না জানলে অবশ্যই লেকের পানিতে নামবেন না।
  • লেকের পানিতে অপচনশীল বা বোতলজাত দ্রব্য ফেলবেন না।

নৌকায় করে লেকে ঘুরলে নৌকার ভিতর বসেই প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করবেন।  নিজের ক্যামেরাটি নিয়ে যাবেন তাহলে লেকের বেশ কিছু সুন্দর ছবি আপনি ক্যামেরাবন্দি করতে পারবেন।

 

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: আবদুর রহমান,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 13, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.