ভারতেশ্বরী হোমস (Bharateswari Homes) টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরের অবস্থিত বাংলাদেশের নামকরা একটি নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নারীর ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষে প্রতিষ্ঠানটি ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন টাঙ্গাইলের জমিদার দানবীর হিসেবে খ্যাত রণদা প্রসাদ সাহা। তিনি প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন তার পিতামহী ভারতেশ্বরী দেবীর নামানুসারে। শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার জন্য ভারতেশ্বরী হোমসের নাম দেশজুড়ে সুবিদিত। এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ছাত্রীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা। এতে ছাত্রীদের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনার ব্যবস্থা আছে। প্রতিদিন ছাত্রীরা রুটিন করে ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠে দৈনিক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে দিনের কার্যক্রম শুরু করে আর ঘুমাতে যায় রাত ১০টায়। হোমসের প্রায় সব কাজই ছাত্রীরা নিজেরাই করে। প্রতিটি কাজের জন্য প্রতিটি শ্রেণী থেকে ৩০ জনের একটি দল তৈরি করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার ছাত্রী। এদের জন্য ৮ জন পুরুষসহ ৬৮ জন শিক্ষক।
ভারতেশ্বরী হোমস মেয়েদের একটি আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতেশ্বরী হোমস ঢাকা নগরী থেকে ৬৫ কিমি উত্তর-পশ্চিমে এবং টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে ৩০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে মির্জাপুর থানা সদরে অবস্থিত। নারীকে আপন ভাগ্য জয়ের অধিকার প্রদানের লক্ষ্যেই দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহা প্রপিতামহী ভারতেশ্বরী দেবীর নামে ভারতেশ্বরী হোমস প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হচ্ছে মেয়েদের চরিত্রবান, সৎ ও আদর্শ নাগরিকরূপে গড়ে তোলা, তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতা জাগ্রত করা। সংস্থাটি পারস্পরিক সহনশীলতা ও ত্যাগের মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ তৈরি করে সুস্থ সমাজ গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ।
ভারতেশ্বরী হোমসে ছাত্রীদের ক্রিড়াশৈলী প্রদর্শন রণদাপ্রসাদ সাহা উপলব্ধি করেছিলেন যে, শিক্ষাই জাতির উন্নতির সোপান। যে সমাজের নারীরা অগ্রগামী নয় ও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত, সে সমাজ কখনই বিকশিত হতে পারে না। আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকার অধিকার নারী-পুরুষ সবারই সমান। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ভারতেশ্বরী হোমস-এ শিক্ষার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও শরীরচর্চা একটি অপরিহার্য বিষয়।
ছাত্রীরা যাতে নানাভাবে বিকশিত হয়ে সমাজের প্রত্যেক স্তরে নিজেদের অভিযোজিত করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে এবং সেসঙ্গে সময়ের ও পরিবেশের প্রেক্ষাপটে নিজেকে চালনা করতে পারে এটাই ছিল মূল লক্ষ্য। আহার গ্রহণের আগে এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা প্রার্থনা করে ‘হে পরম করুণাময়, তোমার অশেষ কৃপায় আমরা অন্ন গ্রহণ করতে যাচ্ছি, এজন্য তোমার কাছে আমরা চিরঋণী। তোমার আশীর্বাদে কেউ যেন নিরন্ন না থাকে।’
ভারতেশ্বরী হোমস বাংলাদেশের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৬২ সাল থেকে এখানে উচ্চ মাধ্যমিক শাখা খোলা হয়। ১৯৭৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এবং ১৯৮৩ সালে তা পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। নিয়মিত পড়াশুনার পাশাপাশি ছাত্রীরা প্রতি সপ্তাহে নানা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার শিক্ষাদান ছাড়াও আছে ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব, বিতর্ক ক্লাব এবং আলোকিত মানুষ হওয়ার লক্ষ্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের শাখা। ১৯৯৭ সালে ভারতেশ্বরী হোমস-এ দেশের সর্ববৃহৎ শিশু-কিশোর ও তরুণদের সংগঠন হিসেবে গার্ল-ইন-স্কাউট প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে (২০১০) এখানে ৮১৫ জন ছাত্রী পড়াশোনা করছে এবং ২৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত আছেন।
কিভাবে যাবেন.
ভারতেশ্বরী হোমস ঢাকা নগরী থেকে ৬৫ কিমি উত্তর-পশ্চিমে এবং টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে ৩০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে মির্জাপুর থানা সদরে অবস্থিত।