গাজীপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে কালের সাক্ষী হয়ে প্রায় অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজবাড়ী (Bhawal Rajbari / Bhawal Estate)। প্রায় ৫ একর জায়গার ওপর নির্মিত রাজবাড়ীটি আয়তন এবং কক্ষের হিসাবে এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমিদারবাড়ী। আগের সময়ের মতো জমিদারি নেই, কিন্তু সেই আমলের জমিদারবাড়ীতে এখনো মিশে আছে জমিদারি। বাড়ির আঙিনায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অতীতের গল্পকথা। ভাওয়ালের জমিদারি বিলুপ্ত হলেও রয়ে গেছে সেই জমিদারবাড়ীটি। ভাওয়ালের সেই জমিদারের জমিদারি ঘুরে দেখতে গেলে পাবেন পুরনো স্মৃতির বেমিশাল স্বাদ।
ভাওয়াল রাজবাড়ী নির্মাণ শুরু করেন লোক নারায়ণ রায় আর সমাপ্তি টানেন রাজা কালী নারায়ণ রায়। এটি একটি বিশাল আকারের ও অক্ষত রাজ প্রাসাদ।
এ রাজবাড়ীর পশ্চিম পাশে রয়েছে বিশাল একটি দীঘি এবং সামনে রয়েছে বিশাল সমতল মাঠ। রাজবাড়ীটির পুরো এলাকাই সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। সীমানা প্রাচীরেও কারুকার্য খচিত, বেশ উঁচু। প্রধান ফটক থেকে প্রায় অর্ধ বৃত্তাকারের দুটো পথের যে কোনো একটা ধরে অগ্রসর হলেই মূল রাজপ্রাসাদ।
রাজবাড়ীর প্রবেশমুখে প্রশস্ত বারান্দা, এরপর একটি হলঘর। ওপরে ওঠার জন্য আগে শাল কাঠের প্রশস্ত সিঁড়ি ছিল, যা এখন নষ্ট হয়ে গেছে। নাটমন্দির রয়েছে বাড়ির মধ্যখানে। এটি লম্বালম্বি বড় টিনের ঘর। টিনের ঘরের ঠিক মাঝখানে মঞ্চটির অবস্থান। এখানে বাইজিদের নাচ-গানের আয়োজন করা হতো। আবার এ ঘরেই সব ধরনের অনুষ্ঠান হতো। জমিদার শিকারে গেলে যদি কাউকে মনে ধরত হাতি পাঠাতেন তাকে উঠিয়ে আনার জন্য। পশ্চিমের দোতলা ভবনে তার জন্য ঘর বরাদ্দ করতেন।
রাজবিলাস নামের একটি কামরা ছিল, যা জমিদারের মনোরঞ্জনের জন্য বরাদ্দ থাকত। এ ছাড়া রাজার বিশ্রামাগার হাওয়ামহলও ছিল একই ভবনের নিচতলায়। দক্ষিণ দিকের খিলানযুক্ত উন্মুক্ত কক্ষটি হচ্ছে ’পদ্মনাভি’। মাঝের বড় ঘরটির নাম ‘রানীমহল’। ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৩৬০টি কক্ষের ইতিহাস এ জমিদারবাড়ীটির।
ভাওয়াল রাজবাড়ী কীভাবে যাবেন
দেশের যে কোনো স্থান থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে শিববাড়ী মোড় নেমে রিক্সাযোগে রাজবাড়ী আসা যায়।
ঢাকা হতে যেতে হবে গাজীপুর চৌরাস্তা। সেখান হতে ডান দিকে রাস্তাটি গিয়েছে জয়দেবপুর সদর বরাবর। জয়দেবপুর সদর রেল ক্রসিং পার হয়ে সামান্য সামনে এগিয়ে গেলেই রানী বিলাসমনি স্কুল। এই স্কুলের ঠিক বিপরীত পাশেই ভাওয়াল রাজবাড়ীটি অবস্থিত।
আর রাজবাড়ী থেকে ১ কি.মি. উত্তরে এগিয়ে গেলে মিলবে রাজবাড়ী শ্মশান।