সমাধি ও এর লাগোয়া মসজিদের নির্মাণ কাল ১৬৬৪-৮৮ খৃষ্টাব্দ অনুমান করা হয়। সমাধিতে শায়িত বিবি মরিয়মকে তৎকালীন বাংলার মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খানের কন্যা এবং ইরান দখত এর বোন তুরান দখত হিসেবে ঐতিহাসিকরা ধারনা করেন।
বিবি মরিয়মের সমাধি নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ মহল্লায় বিবি মরিয়ম মসজিদের পূর্বদিকে অবস্থিত। চারদিকে প্রাচীর বেষ্টিত উঁচু ভিতের উপর একটি চতুর্ভুজাকৃতির বেদীর মধ্যস্থলে সৌধটি স্থাপিত। সৌধটি বর্তমানে ভগ্নপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। এক গম্বুজ বিশিষ্ট বর্গাকার এই ইমারতটির চারপাশ ঘিরে রয়েছে খিলান ছাদ বিশিষ্ট বারান্দা। খিলান ছাদ এখন ভেঙ্গে পড়লেও খিলান শোভিত প্রবেশপথসহ দেয়ালের অংশবিশেষ এখনও টিকে আছে। সৌধের মধ্যবর্তী বর্গাকার কক্ষে রয়েছে শ্বেত পাথরে লতাপাতার নকশা শোভিত তিন ধাপ বিশিষ্ট সমাধি। শিরোভাগে ইটের তৈরি কবর-ফলক। সৌধের চারপাশের বারান্দা জুড়ে রয়েছে জানা অজানা আম লোকের সমাধি।
সৌধে সমাহিত বিবি মরিয়মের পরিচয় নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। সৌধের খাঁড়া আকৃতির গম্বুজ এবং অপরাপর স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের নিরীখে আহমদ হাসান দানী এই সৌধকে ঢাকার লালবাগ দুর্গ প্রাঙ্গণে ইরান দখ্ত ওরফে বিবি পরীর সমাধিসৌধের সমগোত্রীয় বলে মনে করেন, এবং তিনি এই বিবি মরিয়মকে বাংলার মুগল সুবাদার শায়েস্তা খানের কন্যা এবং ইরান দখ্তের ভগ্নি তুরান দখ্তের সঙ্গে অভিন্ন বলে মনে করেন। কিন্তু সৈয়দ মোহাম্মদ তাইফুরের মতে এই সমাধিসৌধটি ঈসা খান মসনদ-ই-আলার পত্নী জনৈক মরিয়ম খাতুনের সমাধিরূপে নির্দেশিত। দুটি কারণে তাইফুরের মতকে কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। প্রথমত, হাজীগঞ্জ কেল্লা প্রাঙ্গণের অন্তর্ভুক্ত বর্তমান স্থলটি খিজিরপুরের সঙ্গে অভিন্ন এবং এই খিজিরপুর ছিল ঈসা খানের সুরক্ষিত দুর্গবেষ্টিত নগরী, সামরিক ও নৌঘাটি; দ্বিতীয়ত বিবি মরিয়মের সমাধিসৌধের স্থাপত্য রীতি প্রচলিত শায়েস্তাখানি স্থাপত্য রীতি থেকে ভিন্নতর।
স্থাপনাঃ
সমাধি সৌধটি সুউচ্চ প্রাচির দিয়ে ঘেরা একটি আয়তাকার প্রাঙ্গনের মাঝখানে ভুমি থেকে উচু ভিতের মাঝে নির্মিত। বর্গাকার ইমারতটিতে একটি গম্বুজ পরিলক্ষিত হয়। এছাড়াও ভবনের চারদিকে খিলান ছাদ বিশিষ্ট বারান্দা ঘিরে রয়েছে। সমাধি সৌধটি্র কেন্দ্রস্থলে চতুস্কোন কক্ষে রয়েছে তিন ধাপ বিশিষ্ট সমাধি। সমাধিটি শ্বেত পাথরে নির্মিত ও লতা পাতার নকশা অঙ্কিত। এছাড়া ও কবর ফলক ও সমাধি লাগোয়া বারান্দায় বেশ কয়েকটি সাধারন কবরও রয়েছে।
মসজিদঃ
সমাধি সৌধটি র পশ্চিম পাশে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ রয়েছে যার নির্মাণকাল সৌধটির সমসাময়িক অর্থাৎ ১৬৬৪-৮৮ সালে শায়েস্তা খাঁন নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করা হয়। এবং সমাধিতে শায়িত বিবি মরিয়ম এর নামেই একে বিবি মরিয়ম এর মসজিদ নাম করন করা হয়েছে।