বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাফল্য এবং মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড ও বিশ্বে বিভিন্ন মিশনের সফলতা সহ বিভিন্ন অস্ত্র-শস্ত্রের সংগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর (Bangladesh Samoric Jadughar/museum) সজ্জিত। ১৯৮৭ সালে ঢাকার মিরপুর সেনানিবাসের প্রবেশদ্বারে প্রথম সামরিক জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সামরিক জাদুঘরের গুরুত্ব এবং দর্শকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ১৯৯৯ সালে জাদুঘরটি স্থায়ীভাবে ঢাকার বিজয় সরণিতে স্থানান্তর করা হয়।
সামরিক জাদুঘরের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে ট্যাংক পিটি-৭৬। রাশিয়ার তৈরি এই ট্যাংকটি পানিতেও ভেসে চলতে সক্ষম। এই ট্যাংকটি ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকা থেকে বাংলাদেশ বাহিনী কর্তৃক পাকিস্তান দখলদার-বাহিনীর নিকট হতে উদ্ধার করা হয়।
সামরিক জাদুঘরের মাঠের উত্তর ও পূর্ব দিক দিয়ে সুসজ্জিত ভাবে আরও ১৬টি ট্যাংক ও কামান প্রদর্শিত হচ্ছে। এগুলো খোলা আকাশের নীচে কেবল পাকাভিটি করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে আছে –
- ৭৫ মি. মি. প্যাক হাউগান
- ট্যাংক এ আর ভি মার্ক-টু শেরমান এম-৩২ বি-১
- ট্যাংক ক্রুইজার আর এ এম জিপিও সেক্সটন
- ট্যাংক ক্রুইজার মিডিয়াম ৭৬ মি. মি. গান মার্ক-টু শেরমান
- মোটর গ্যারেজ ৪০ মি. মি. সাপোর্ট ক্রুইন এম ১৯ এ১, ১৭ পাউন্ডার ট্যাংক বিধ্বংসী গান
- ২৫ পাউন্ডার গান
- এস পি আর্টিলারী ২৫ পাউন্ডার সেঞ্জটন এম-৫
- ৩৭ মি. মি. কামানসহ ট্যাংক হালকা স্টুয়ার্ড মার্ক-৪ (পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সৌজন্যে প্রাপ্ত বলে পরিচিতি পর্বে উল্লেখ করা হয়েছে)
জাদুঘরের মাঠের পূর্ব প্রান্তে সুসজ্জিত ভাবে রাখা আছে –
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত ১০৫/৫২ সি এম ক্রুপ গান
- ১৯৭৩ সালে মিসর কর্তৃক আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ব্যবহৃত ব্যারেল ১০০ মি. মি. ট্যাংক গান
- অষ্টাদশ শতাব্দীর ৬টি ছোট-বড় কামান
জাদুঘরের মাঠের উত্তর ও পূর্ব দিকঃ – মাঠের উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রদর্শিত হচ্ছে মোটর লঞ্চ ‘এম এল সূর্যোদয়’। জাপান সরকার এটি অনুদান হিসেবে দেয়।
জাদুঘরের বিভিন্ন গ্যালারিঃ – মূল জাদুঘর ভবনের দোতলায় রয়েছে ৮টি গ্যালারি। গ্যালারিগুলোতে আছে –
- প্রথম গ্যালারিতে – হাত-কুঠার, তীর, ধনুকসহ আদিম যুগের অস্ত্রশস্ত্র প্রদর্শিত হচ্ছে।
- দ্বিতীয় গ্যালারিতে – ডিবিবিএল গান, এসবিবিএল গান, বিশেষ ব্যক্তিবর্গের ব্যবহৃত হাতিয়ারসহ যুদ্ধাস্ত্র।
- তৃতীয় গ্যালারিতে – এলএমজি, এসএমজিসহ মাঝারি অস্ত্র।
- চতুর্থ গ্যালারিতে – মর্টার, স্প্যালো, এইচএমজিসহ ভারী অস্ত্র সর্বসাধারণের জন্য প্রদর্শন করা হচ্ছে।
- পঞ্চম গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছে – সশস্ত্র-বাহিনীর শীত ও গ্রীষ্মকালীন পোশাক-পরিচ্ছদ, র্যাঙ্ক, ব্যাজ, ফিতা ইত্যাদি।
- ষষ্ঠ গ্যালারিতে (‘মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক) প্রদর্শিত হচ্ছে – মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার-বাহিনীর আত্মসমর্পণ দলিল, সেক্টর কমান্ডারগণের পোর্ট্রেট, কিছু ব্যবহার্য বস্তু ইত্যাদি।
- সপ্তম গ্যালারির নাম দেয়া হয়েছে ‘বিজয় গ্যালারি’। এতে সশস্ত্র বাহিনীর যেসব ব্যক্তি মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন সেসব বীরশ্রেষ্ঠদের পোর্ট্রেট ও সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
- অষ্টম গ্যালারিতে রয়েছে প্রাক্তন সকল সেনাপ্রধানের তৈলচিত্র, বীরশ্রেষ্ঠ-বীরপ্রতীকদের নামের তালিকা ইত্যাদি।
টিকেট ও সময়সূচীঃ
এই জাদুঘরে প্রবেশের জন্য কোন টিকেট লাগে না। সপ্তাহের পাঁচ দিন শনিবার, রবিবার, সোমবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার জাদুঘর খোলা থাকে।গ্রীষ্মকালে সকাল ১০.৩০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬.৩০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।শীতকালে ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।বুধবার এবং শুক্রবার জাদুঘরটি বন্ধ থাকে।
ফোন: (৮৮০-২) – ৯৮৭০০১১, (৮৮০-২) – ৮৭৫০০১১; এক্সটেনশন: ৭৫৪২
কিভাবে যাবেন –
ঢাকা শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে সিএনজি, বাস, ট্যক্সি করে বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর আসা যাবে। অথবা যে কোন উপায়ে ফার্মগেট, বিজয় বিজয় সরণি অথবা জিয়া উদ্যানের সামনে নেমে সেখাস থেকে পায়ে হেঁটেও বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর আসা যাবে।
জাদুঘরের ভেতরে প্রদর্শিত জিনিস নিয়ে এটিই সম্ভবত সবচেয়ে বিস্তৃত গাইড।