ঝালকাঠি, বরিশাল আর পিরোজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার ২৬ গ্রামের প্রায় ৩১ হাজার একর জমির উপর গড়ে ওঠেছে পেয়ারা বাগান (Guava Garden)। আর এ পেয়ারা চাষের সঙ্গে প্রায় ২০ হাজার পরিবার সরাসরি জড়িত। তাদের এ পেয়ারা বিক্রির জন্য বিখ্যাত ভীমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার (Vimruli Floating Market) ।
ঝালকাঠী জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলি গ্রামের আঁকাবাঁকা ছোট্ট খালজুড়ে সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। হাটটি সারা বছর বসলেও প্রাণ ফিরে পায় পেয়ারা মৌসুমে৷ সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। এ হাটকে তুলনা করা যায় থাইল্যান্ডের ফ্লোটিং মার্কেটের সাথে।
ভিমরুলির আশপাশের সব গ্রামেই অসংখ্য পেয়ারা বাগান। এসব গ্রামে দৃষ্টিপথে ধরা দেবে সবুজের সমারহ। এসব সবুজের বেশিরভাগ হোগলা, সুপারি, আমড়া আর পেয়ারার বন। এসব বাগান থেকে চাষীরা নৌকায় করে সরাসরি এই বাজারে নিয়ে আসেন।
ভিমরুলি হাট খালের একটি মোহনায় বসে। তিন দিক থেকে তিনটি খাল এসে মিশেছে এখানে। অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত এ মোহনায় মূলত বসে ভাসমান হাট (Vasoman Peyara Bazar)। ভাসমান হাটের উত্তর প্রান্তে খালের উপরের ছোট একটি সেতু আছে। সেখান থেকে হাট টি খুব ভালো করে দেখা যায়।পুরো খাল জুড়ে যেদিকে তাকাবেন শুধু নৌকা আর নৌকা। আকর্ষণীয় দিক হল এখানে আসা সব নৌকাগুলোর আকার আর ডিজাইন প্রায় একইরকম। মনে হয় যেন একই কারিগরের তৈরি সব নৌকা।
ভিমরুলির বাজারের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় হল দুপর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা। এ সময়ে নৌকার সংখ্যা কয়েকশ ছাড়িয়ে যায়।
কিভাবে যাবেন
বাসে যেতে চাইলে ঢাকার গাবতলী থেকে সাকুরা পরিবহনের এসি বাস যায় ঝালকাঠী। ভাড়া ৮শ’ টাকা। এছাড়া, ‘দ্রুতি’, ‘ঈগল’, ‘সুরভী’ ও ‘সাকুরা’ পরিবহনের নন এসি বাসও যায়, ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। এছাড়া ঢাকার সায়দাবাদ থেকে ঝালকাঠী সদরে যাওয়ার জন্য রয়েছে ‘সুগন্ধা’ পরিবহনের বাস।
ঝালকাঠী জেলা সদর থেকে মোটরবাইকে এই হাটে যেতে সময় লাগে প্রায় আধাঘণ্টা। আর ইঞ্জিন নৌকায় গেলে সময় লাগে এক ঘণ্টা। ঝালকাঠী লঞ্চঘাট কিংবা কাঠপট্টি থেকে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। ১০ জনের চলার উপযোগী একটি নৌকার সারাদিনের ভাড়া ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা।
অথবা সদরঘাট থেকে বরিশালের লঞ্চে চড়ে বরিশাল পৌঁছে যান। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে ভিমরুলী গিয়ে টলার ভাড়া করে ঝালকাঠি পেয়ারা বাজার চলে যাবেন। আর অবশ্যই সব জায়গায় সব বাহনে দরদাম করে তারপর উঠবেন।
অথবা ঢাকার সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ছয়টায় বিআইডব্লিউটিএ’র রকেট-স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’, ‘পিএস অস্ট্রিচ’, ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস টার্ন’ ছাড়ে।
সপ্তাহের দিনগুলোতে পালাক্রমে ছাড়ে স্টিমারগুলো। ভাড়া প্রথম শ্রেণির কেবিনে জনপ্রতি ১ হাজার ২শ’ ৫০ টাকা। দ্বিতীয় শ্রেণির কেবিনে জনপ্রতি ৭৬০ টাকা। তৃতীয় শ্রেণির ডেকে জনপ্রতি ১৯০ টাকা।
এছাড়া সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ৬টায় ঝালকাঠীর উদ্দেশে ছেড়ে যায় ‘এমভি টিপু’ এবং ‘এমভি সুন্দরবন-২’ লঞ্চ। ভাড়া দ্বৈত কেবিন ১ হাজার ৮শ’ টাকা। একক কেবিন ১ হাজার টাকা এবং ডেকে জনপ্রতি ২শ’ টাকা।
কোথায় থাকবেন:
সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় আবার ঝালকাঠী থেকে ফিরে আসতে পারেন। থাকতে চাইলে জেলা শহরের সাধারণ মানের হোটেলই একমাত্র ভরসা। এ শহরের দু’একটি হোটেল হল কালিবাড়ি রোডে ‘ধানসিঁড়ি রেস্ট হাউস’, বাতাসা পট্টিতে ‘আরাফাত বোর্ডিং’, সদর রোডে ‘হালিমা বোর্ডিং’ ইত্যাদি। ভাড়া ১শ’ থেকে ২৫০ টাকা। এছাড়া স্বরূপকাঠির মিয়ার হাটে হোটেল ইফতিতে থাকতে পারেন। একদম নদীর পাড় ঘেষে গড়ে ওঠা সাধারণ মানের এ হোটেলটিতে থাকাও হবে একটা অভিজ্ঞতা। তবে ভালো কোনো হোটেলে থাকতে চাইলে যেতে হবে বরিশাল সদরে। ঝালকাঠী থেকে যার দূরত্ব প্রায় বিশ কিলোমিটার।
যখন যাবেন: জুলাই, আগষ্ট, সেপ্টেম্বর মাস পেয়ারার মৌসুম। পেয়ারার মৌসুম শেষ হলে আসে আমড়ার মৌসুম। এ অঞ্চলে আমড়ার ফলনও সর্বত্র। আর সবশেষে আসে সুপারি।