জমিদারী নেই রয়েছে জমিদার বাড়ি। জমিদার বাড়ি মানেই অপূর্ব কারুকাজ করা বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে সৌন্দর্যের ছোঁয়া। ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা। অন্য জমিদারবাড়ির চেয়ে একটু হলেও বাড়তি সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায় টাংগাইলের নাগরপুর উপজেলার (Nagarpur) পাকুটিয়া জমিদার বাড়িতে (Pakutiya Jamidar Bari)। এখানে পাশাপাশি রয়েছে চমৎকার কারুকার্যখচিত বেশ কয়েকটি ভবন। প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে যা পর্যটকদের দৃর্ষ্টি কাড়ে।
অগাধ বিত্তের মালিক জমিদার অভিজাত শ্রেণীর ভোগবিলাসী জীবনযাপনের কথা সর্বজনবিদিত। প্রজাদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থের একটি বড় অংশ জমিদাররা ব্যয় করতো নিজেদের প্রমোদ ও বিলাসিতায়। টাংগাইলের নাগরপুর উপজেলার পাকুটিয়াতে জমিদাররা গড়ে তুলেছিল দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য কৌশলে বহুব্যয়ে নির্মিত প্রাসাদোনুপম বাসভবন। কালের সমুদ্রে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জমিদার শ্রেণীর প্রতিভু হয়ে যা ধবংসস্তূপের মাঝে আজও টিকে আছে।
ঊনিশ শতকের দিকে লন্ডন ও কলকাতা থেকে আনা নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয় দুইতলা বিশিষ্ট বেশ কয়েকটি অট্টালিকা। পাকুটিয়া জমিদার বাড়ির ৩টি ভবন টিকে আছে আজও অবিকৃত অবস্থায়।
ঢাকা থেকে পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি টাংগাইল না হয়ে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া হয়ে গেলে দূরত্ব অনেক কম। সাটুরিয়া উপজেলার সিমান্তবর্তী নাগরপুরের পাকুটিয়া এলাকায় এ জমিদার বাড়ির অবস্থান। বাড়ির সামনে রয়েছে বিশাল মাঠ। পাশাপাশি জমিদারবাড়ির কয়েকটি দোতলাবিশিষ্ট ভবন রয়েছে। শৈল্পিক কারুকার্য খচিত পাকুটিয়া জমিদার বাড়ির ভবনগুলো দেখলে এখনো আশ্চর্য হতে হয়। বাড়ির প্রথম ভবটির উপরে রয়েছে দুটি নারীর বড় আকৃতির শোয়া মূর্তি। আর তার পাশ্বে জমিদার বাড়ির উপরে ছোট ছোট করে নানা মূর্তি স্থাপন করা রয়েছে। যদিও বর্তমানে অধিকাংশ মূর্তি ভেঙে পড়ছে। জমিদার বাড়ির মাঝে খোদাই করে লেখা রয়েছে, ১৯১৫ শ্রীযুক্ত বাবু ভপেন্দ্র মোহন রায়, ১৩২২ সন, ২রা বৈশাখ, ১৫ই এপ্রিল। বাড়িটি বর্তমানে পাকুটিয়া বি.সি.আর.জি ডিগ্রি কলেজ-এর প্রশাসনিক ভবন ও ক্লাস রুম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এ ভবনের সামনে রয়েছে মাঠের পাশে দোতলা টিনের ও কাঠের তৈরি একটি রঙ্গ মঞ্চ। এ মঞ্চে পাকুটিয়ার জমিদাররা সে সময় বিখ্যাত নাচনেওয়ালিদের এনে নাচাতো বলে শোনা যায়। এ মঞ্চের দোতলায় বসে জমিদাররা তাদের নাচ দেখতো।
পাকুটিয়া জমিদার বাড়ির প্রথম ভবনটির ডানপাশে জমিদার বাড়ির দ্বিতীয় দোতলা ভবন। এ ভবনের একতলা ও দোতলার ছাদে ছোট বড় নানা আকৃতির পরী সহ নানা মূর্তি স্থাপন করা রয়েছে।
ভবনের মাঝে খোদাই করে লেখা রয়েছে, ১৯১৫ সন, শ্রীশ্রী বিষ্ণু দাস কবীন্দ্র ঠাকুর, শ্রীশ্রী চবন ভরসা। ১৫ই এপ্রিল-এর নিচেই লেখা শ্রীযুক্ত বাবু যোগেন্দ্র মোহন মন্ডল, ১৩২২ সন, ২রা বৈশাখ। এ ভবনটিতে বর্তমানে পাকুটিয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কার্যক্রম চলছে। এর পাশে আরেকটি দোতলা ভবন। এ ভবটির উপরেও নানা পরী ও নারী মূর্তি স্থাপন করা রয়েছে। এ ভবনটিতে বর্তমানে সাধারণ মানুষ বসবাস করছে।
জমিদার বাড়ির আশেপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বড় কূপ বা কুয়া। জমিদার বাড়ির রান্না সহ নানা কাজে এ সকল কূয়ার পানি ব্যবহার করা হতো।
কালের আবর্তে তৎকালীন ক্ষমতাবান পাকুটিয়ার জমিদাররা বড় বড় বাড়িসহ মূল্যবান জিনিসপত্র রেখে ভারতে চলে যায়। তখন থেকে এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোক এ সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করে চলছে। বিশাল এ সম্পত্তি দীর্ঘদিন অরক্ষিত থাকায় চুরি হয়ে গেছে মূল্যবান অনেক জিনিসপত্র। বর্তমানে ভবনগুলো নানা মানুষের দখলে। পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি গেলে খানিকটা সময়ের জন্য আপনি চলে যেতে পারেন অতীতে।
স্থানীয় মানুষের দাবি প্রতœতত্ব অধিদপ্তর যদি পাকুটিয়া জমিদার বাড়িটি অধিগ্রহণ করে এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণ ও সংস্কার করে তবে এ জমিদার বাড়িটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি টাংগাইল না হয়ে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া হয়ে গেলে দূরত্ব অনেক কম। সাটুরিয়া উপজেলার সিমান্তবর্তী নাগরপুরের পাকুটিয়া এলাকায় এ জমিদার বাড়ির অবস্থান।
অবস্থান
টাংগাইল নাগরপুরের।