অ্যাডভ্যাঞ্চার প্রিয় ট্রাভেলারদের কাছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ও জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান গুলো চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুন্ড এলাকায় অবস্থিত। পাহাড়, সাগর ও প্রাকৃতিক ঝর্ণায় ভরপুর এই এলাকার মোটামুটি নতুন আকর্ষন ঝরঝরি ঝর্ণা (Jhorjhori Waterfalls)। স্থানীয় অদিবাসীদের নিকট যা মূর্তি ঝর্ণা নামেও পরিচিত।
চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলার পন্থিছিলার হাজীপাড়া গ্রাম পেরিয়ে এগিয়ে গেলেই পাহাড়ের গভীরে এই ঝরঝরি ঝর্ণা বা মূর্তি ঝর্ণার অবস্থান।
পাহাড়ি ঝর্ণায় যাওয়ার পথগুলো হয় রোমাঞ্চ প্রিয় ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অন্যরকম ভাললাগার। যা এক কথায় মনোমুগ্ধকর হাইকিং-ট্রেইল। সেই রূপের নির্যাস নিতেই বর্ষায় পর্যটকরা ছুটে আসেন এই বুনো ঝর্ণার ধারে। যেখানে জোঁক ও পথের পাথুরে পিচ্ছিলতা এনে দেয় ভিন্নরকম শিহরণ।
অসাধারণ ঝরঝরি ঝর্ণা ট্রেইল ধরে প্রায় এক ঘণ্টা হাটলে সর্বপ্রথম যে ঝর্ণা চোখে পড়ে এর নাম ঝরঝরি ঝর্ণা । বাম দিক দিয়ে আরো উপরের দিকে যেতে থাকলে দেখা মিলে অনেক দারুন দারুন কিছু খুম এবং ক্যাসকেড। ঝরঝরি ঝর্ণার উপরের দিকে যাওয়া বেশ কঠিন ও কষ্টকর তাই বর্ষার শেষের দিকে যাওয়াই সবচেয়ে ভাল।
ঝরঝরি ঝর্ণা কিভাবে যাবেন?
ঢাকা হতে চট্টগ্রামের বাসে বা রেলে চড়ে সিতাকুন্ডের পন্থিছিলা। সেখান থেকে হাজীপাড়া গ্রামের রেললাইন পার হয়ে কানীছড়া ধরে এগিয়ে যাবেন।
ঢাকা থেকে বাসে/ট্রেনে/এয়ারে চট্টগ্রাম চলে যেতে হবে আগে। সেখান থেকে সীতাকুন্ড। সীতাকুন্ড থেকে বাস কিংবা লেগুনাতে ১০ মিনিট লাগবে পন্থিশীলা বাজার।
পন্থিছিলা হতে কিছুদূর যাওয়ার পর রেললাইন পাবেন। রেললাইনে উঠে হাতের বামপাশ বরাবর ৫-৭ মিনিট হাটার পর একটা মাটির রাস্তা পাবেন। সেই রাস্তা ধরে প্রায় ২০ মিনিট পর ঝিরি পথের দেখা পাবেন। এর কিছুক্ষণ পর পাহাড়ে উঠতে হবে। পাহাড়ে উঠার পথটা কিছুটা দেবতা পাহাড়ের মত। এই পথটা একটু ভয়ংঙ্কর। এর পর ৩০ মিনিট হাটার পর পাবেন ঝরঝরির প্রথম ঝর্না এবং আরো ২০ মিনিট পর ২য় ঝর্ণা পাবেন। যেটা সিঁড়ির মত দেখা যায়। এইটুকু রাস্তা যেতে জোঁক, সাপে ভরা পাথুরে পিচ্ছিল পথ অতিক্রম করতে হবে।
এরপর প্রায় দেড় ঘন্টা বুনো দুর্গম অন্ধকার পথ হাঁটার পর মানুষ আকৃতির একটা মূর্তির দেখা মিলবে যার উপর ঝর্ণার পানির নীচেই অবস্থিত। ঝর্ণার পানির ভিতর দিয়ে উপরে উঠে যেতে হবে এবং এই ট্রেইলের সবচেয়ে বড় ঝর্নার দেখা পাবেন।
ঝরঝরি ট্রেইল শেষ করতে আসা যাওয়াতে ৫.৩০-৬ ঘন্টা সময় লাগবে। ঝরঝরি ট্রেইলে গেলে সাথে করে বাজার থেকে খাবার কিনে নিয়ে যাবেন এবং দুপুরবেলার খাবার অর্ডার দিয়ে যাবেন।
এই দিকটাতে সাথে একটা গাইড থাকা ভালো। বাজারে গিয়ে লোকাল কাউকে গাইড হিসেবে নিয়ে নিন। গাইড ছাড়াও যাওয়া যাবে তবে তা অনেক সময় পথ হারাবার জন্য যথেষ্ট। গাইড চার্জ আপনার খুশির ওপর নির্ভর। এতে তার বাড়িতে ব্যাগ রাখা সহ কাপড় পাল্টানোর জন্যও সুবিধা পাবেন।
– ব্যক্তিগত মাতামত
কোথায় থাকবেন
চট্টগ্রামে নানান মানের হোটেল আছে। নীচে কয়েকটি বাজেট হোটেলে নাম ঠিকানা দেয়া হলো। এগুলোই সবই মান সম্পন্ন কিন্তু কম বাজেটের হোটেল।
১. হোটেল প্যারামাউন্ট, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম : নুতন ট্রেন স্টেশনের ঠিক বিপরীতে । আমাদের মতে বাজেটে সেরা হোটেল এটি। সুন্দর লোকেশন, প্রশস্ত করিডোর (এত বড় কড়িডোর ফাইভ স্টার হোটেলেও থাকেনা)। রুমগুলোও ভালো। ভাড়া নান এসি সিঙ্গেল ৮০০ টাকা, ডাবল ১৩০০ টাকা, এসি ১৪০০ টাকা ও ১৮০০ টাকা। বুকিং এর জন্য : ০৩১-২৮৫৬৭৭১, ০১৭১-৩২৪৮৭৫৪
২. হোটেল এশিয়ান এসআর, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম : এটাও অনেক সুন্দর হোটেল। ছিমছাম, পরিছন্ন্ হোটেল। ভাড়া : নন এসি : ১০০০ টাকা, নন এসি সিঙ্গেল। এসি : ১৭২৫ টাকা। বুকিং এর জন্য – ০১৭১১-৮৮৯৫৫৫
৩. হোটেল সাফিনা, এনায়েত বাজার, চট্টড়্রাম : একটি পারিবারিক পরিবেশের মাঝারি মানের হোটেল। ছাদের ওপর একটি সুন্দর রেস্টুরেন্ট আছে। রাতের বেলা সেখানে বসলে আসতে ইচ্ছে করবেনা। ভাড়া : ৭০০ টাকা থেকে শুরু। এসি ১৩০০ টাকা। বুকিং এর জন্য -০৩১-০৬১৪০০৪
৪. হোটেল নাবা ইন, রোড ৫, প্লট-৬০, ও,আর নিজাম রোড, চট্টগ্রাম। একটু বেশী ভাড়ার হোটেল। তবে যারা নাসিরাবাদ/ও আর নিজাম রোড এলাকায় থাকতে চান তাদের জন্য আদর্শ। ভাড়া : ২৫০০/৩০০০ টাকা। বুকিং এর জন্য – ০১৭৫৫ ৫৬৪৩৮২
৫. হোটেল ল্যান্ডমার্ক, ৩০৭২ শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম : আগ্রাবাদে থাকার জন্য ভালো হোটেল। ভাড়া-২৩০০/৩৪০০ টাকা। বুকিং এর জন্য: ০১৮২-০১৪১৯৯৫, ০১৭৩১-৮৮৬৯৯৭