পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটক পেছনে ফেলে সামনে এগোলে আবুল হাসনাত রোড। এর ডান দিকে আবুল খায়রাত রোড। এই রোড মিলেছে নূর বকস রোডে। মাঝখানে আছে নাবালক মিয়া লেন। স্টিল দিয়ে তৈরি করা মূল ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখা মেলে লাল রঙের জমিদারবাড়ি।
বাড়িটির দুটি অংশ। আরেক অংশ সাদা রঙের। বাড়ির সামনেই মৌসুমি ফুলের বাগান। ভেতরে একটি ফোয়ারা (তবে এখন এটি চালু নেই)। বাগানের পর বাহারি নকশা করা আর্মেনিয়ান স্থাপত্যরীতির লাল রঙের বাড়ি। চুন–সুরকিতে গাঁথা চওড়া দেয়াল, খড়খড়ি লাগানো দরজা-জানালা, ছাদে ফুল, লতাপাতার নকশা করা রেলিং—সবকিছুই যেন কালের সাক্ষী হয়ে আছে। সামনে লাল রঙের একতলা ভবনটি বাহিরমহল এবং ভেতরে সাদা রঙের দোতলা অন্দরমহল। এই দুই অংশ মিলিয়ে তিন বিঘা আয়তনের জমিদারবাড়িটিতে এখন বসবাস করছেন আবুল খায়রাতের ষষ্ঠ প্রজন্মের সদস্যরা। বাকি তিন বিঘা ছিল খোলা জায়গা, আর পারিবারিক কবরস্থান।
জানা যায়, আঠারো শতকের দিকে ঢাকা ও সোনারগাঁয়ের জমিদার ছিলেন মৌলভী আবুল খায়রাত মোহাম্মদ। সে সময় তিনি ছয় বিঘা জমির ওপর এই বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়িটির বয়স প্রায় ২০০ বছর। পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ির লাল রঙের দোতলা বাড়িটির পাশের চারটি সড়কের নাম এই বাড়ির সদস্যদের নামে—নূর বকস রোড, আবুল খায়রাত রোড, আবুল হাসনাত রোড ও নাবালক মিয়া লেন। বহু যুগের স্মৃতিবিজড়িত ওই বাড়ির পরিচিতি ‘জমিদার সাহেব বাড়ি’ (Jamidar Shaheb Bari) নামে। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে বাড়িটির একাংশ এখনো টিকে আছে।
বাহিরমহলে বসবাস করছেন জিয়াউল হক ওরফে নাবালক মিয়ার বংশধরেরা। আর অন্দরমহলে থাকেন আবুল হাসনাতের বংশধরেরা। ১৯৫০-৬০ সালের দিকে দুই মহলের সামনের প্রশস্ত বাগানের মাঝ দিয়ে দুই পরিবারের সদস্যরা দেয়াল তুলে বাহিরমহল ও অন্দরমহলকে আলাদা করেন।
জমিদারবাড়ির এই বাগানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি। বাগানের ফোয়ারার পাশে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল নাবালক মিয়ার নাতি আবু মোহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, এই পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কবি কাজী নজরুল ইসলামের। ঢাকায় এলে কবি এই বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণ করতেন। এই বাগানে বসেই তিনি ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই’ ও ‘কে বিদেশী মন উদাসী’র মতো কালজয়ী গান রচনা করেছিলেন।
জমিদারবাড়ির বাহিরমহল ঘুরে দেখা গেল, মূল ভবনের ভেতরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকা আসবাব ও অন্যান্য জিনিসপত্র। অতিথিকক্ষে পুরোনো সোফা, পালঙ্ক, আলমারি, বই রাখার তাক, ফুলদানি, তাসের টেবিল। আর দেয়ালজুড়ে টাঙিয়ে রাখা আছে বংশপরম্পরায় পরিবারের সদস্যদের ছবি। পাশে বিশাল ‘হলরুম’। জানানো হলো, যুক্তফ্রন্ট গঠনের পর বিভিন্ন সময় এই কক্ষে বৈঠক করেছেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ তৎকালীন নেতারা।
কিভাবে যাবেনঃ
পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটক পেছনে ফেলে সামনে এগোলে আবুল হাসনাত রোড। এর ডান দিকে আবুল খায়রাত রোড। এই রোড মিলেছে নূর বকস রোডে। মাঝখানে আছে নাবালক মিয়া লেন। স্টিল দিয়ে তৈরি করা মূল ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখা মেলে লাল রঙের জমিদারবাড়ি।