প্রায় সোয়া দু’ শ বছরের পুরনো স্থাপত্য শেরপুরের ঘঘড়া লস্কর ‘খান বাড়ী’ জামে মসজিদটি আজো ঠাই দাড়িয়ে আছে কালের সাক্ষ্যি হয়ে। মসিজদটি আজো অক্ষত অবস্থায় মসজিদটি’র বাইরে থেকে বিশাল আকার দেখা গেলেও ভিতরে খুব বেশী বড় নয়। এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের উত্তর এবং দক্ষিন পাশে রয়েছে দুটি জানালা। মসিজিদের ভিতর ইমাম বাদে তিনটি কাতারে ১২ জন করে মোট ৩৬ জন মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মসজিদের বাইরের অংশে অর্থাৎ বারান্দায় আরো প্রায় অর্ধশত মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন । মসজিদের আকার বা পরিধি যাই হোক না কেন মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করার সময় নিজেকে মনে হয় দু’ শ বছর পেছনে চলে গেছি। কেমন জানি এক অদ্ভুত অনুভূতি। নিজে উপস্থিত হয়ে নামাজ না পড়লে বিশ্বাস করানো বা বোঝানো সম্ভব নয়।
স্থাপত্যকলার অনুপম নিদর্শন ঐতিহাসিক ‘খান বাড়ী’র মসজিদটি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার হাতিবান্দা ইউনিয়নের ঘাগড়া লস্কর গ্রামে অবস্থিত। কালের আবর্তে এ মসজিদের নাম ঘাগড়া লস্কর খান মসজিদ(Ghagra Laskar Khan Mosjid) হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে। শেরপুর জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। মসজিদের গায়ে বর্তমানে যেসব নির্দশন পাওয়া গেছে সে অনুসারে ধারনা করা হয়, বক্সার বিদ্রোহীদের নেতা হিরোঙ্গি খাঁর বিদ্রোহের সময় মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। আজিমোল্লাহ খান মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদটির দরজার উপর মূল্যবান কষ্টি পাথরের উপর খোদাই করে আরবি ভাষায় এর প্রতিষ্ঠাকাল উল্লেখ করা হয়েছে হিজরি ১২২৮ বা ইংরেজী ১৮০৮ সাল। মসজিদটির গঠন পদ্ধতি ও স্থাপত্য কৌশল শিল্পসমৃদ্ধ ও সুদৃশ্য। এর ভিতরে রয়েছে দুটো সুদৃঢ় খিলান। এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটি বর্গাকার। যার দৈর্ঘ্য ২৭ ফুট প্রস্থও ২৭ ফুট উভয়দিকই সমান। মসজিদের মাঝখানে বড় গম্বুজের চারপাশ ঘিরে ছোট-বড় বারটি মিনার। এরমধ্যে চারকোণায় রয়েছে চারটি। মসজিদে দরজা রয়েছে মাত্র একটি। ভিতরে মেহরাব ও দেয়াল অঙ্কিত রয়েছে বিভিন্ন কারুকাজের ফুলদানী ও ফুল। মসজিদের দেয়ালের গাথুনী ৪ ফুট পাশ, যা চুন ও সুরকি দিয়ে গাথা। তৎকালীন খান বাড়ীর লোকজনসহ গ্রামের অনেকে ৫৮ শতক জায়গার উপর মসজিদটি ওয়াকফ করে দেয়। এরমধ্যে মসজিদটির মূল ভবন ও বারান্দা রয়েছে ১৭ শতকের উপর এবং ৪১ শতকের উপর জমিতে রয়েছে কবরস্থান। মসজিদের বর্তমান ইমাম হাফেজ মো. রুহুল আমীন জুম্মাসহ ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ান।
প্রায় দুই যুগ আগে মসজিদের সর্বশেষ ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালনা কমিটি হলেও ওই কমিটি’র সভাপতি গোলাম মোস্তফা খান অনেক আগেই মৃত্যু বরণ করেন। তার স্থলে কাউকে আজও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বা নতুন কোন কমিটি গঠন করা হয় নি। বর্তমানে কামরুজ্জামান খান এবং কোষাধক্ষ্য মামুন খান পেশাগত কারণে দীর্ঘদিন থেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন। মসজিদের গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় কাজ বা কোন সিদ্ধান্ত তাদের মতামতের ভিত্তিতেই হয়ে থাকে।
গত প্রায় ১৫ বছর আগে জাতীয় যাদুঘর এর প্রতœতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটির দায়িত্ব গ্রহন করেন। কিন্তু একজন কেয়ারটেকার নিয়োগ, একটি সতর্কবাণী লাগানো ও দায় সারাভাবে বছরে একবার রং করা ছাড়া আর কোন ভূমিকা পালন করেনি। মসজিদটির মেঝে ডেবে যাচ্ছে, দেয়ালে ফাটল ধরছে। দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা না নিলে কালের এ নীরব সাক্ষী হয়তো নীরবেই হারিয়ে যাবে বলে স্থানীয়রা আশংকা করছেন।
কিভাবে যাবেন
শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার হাতিবান্দা ইউনিয়নের ঘাগড়া লস্কর গ্রামে অবস্থিত।