বান্দরবান শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরের বান্দরবান-রুমা সড়কের পাশেই ফারুকপাড়া নামক স্থানে শৈলপ্রপাত (Shaila Propat) অবস্থিত। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি এ শীতল পানির প্রবাহ ঢালু পাথরের প্লেট দিয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ছে। যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সৃষ্টি। ঝর্ণার হিমশীতল পানি এখানে সর্বদা বহমান। এই ঝর্ণার পানিগুলো খুবই স্বচ্ছ এবং হীম শীতল।
প্রায় সারাবছরই দেশী বিদেশী পর্যটকে থাকলেও বর্ষাকালে শৈল প্রপাতের প্রবাহ বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সংখ্যাও। তবে বর্ষাকালে এ ঝর্ণার দৃশ্য অপরুপ সুন্দর দেখা গেলেও ঝর্ণাতে নামা দুস্কর। শীত সময়ও পর্যটকদের আনাগোনা বেশ লক্ষ করা যায়।
এ প্রপাতের আশপাশের পাহাড়ে বম সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। শৈল প্রপাতকে কেন্দ্র করে রাস্তার ধারে ও স্পটের পাশেই গড়ে উঠেছে একটি হস্তশিল্প ও কাপড়ের মার্কেট।
এখানে বম নারীদের নিজ হাতে তৈরি উলের মাফলার, কম্বল, চাদর ও হাঁতে তৈরি টুকিটাকি পাওয়া যায়। মূল রাস্তা ও প্রপাতের সিড়ি গোড়ার একটু সমতলে এ রকম প্রায় ২০টি দোকান রয়েছে। প্রায় সব দোকানেই বিক্রেতা বম নারী বা তরুণী।সব পোশাকই উল ও কাপড়ের। পণ্যের মধ্যে মাফলার ১৫০ থেকে ২০০ টাকা এবং চাদরের মূল্য ৫০০ টাকা।এছাড়াও বম পাড়ার বয়স্কা কিছু নারী ও পুরুষকে দেখা গেলো পাহাড়ে নিজেদের উৎপাদিত বিভিন্ন ফল বিক্রি করতে।
স্থানীয় বমদের বিশ্বাস; বগা লেক থেকেই এর উৎপত্তি। প্রতিদিনই এ প্রপাত দেখতে বিপুলসংখ্যক লোকজন আসেন। প্রপাত মূল সড়ক থেকে অনেক নিচে। এজন্য সিঁড়ি করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৬০টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হবে প্রপাতটি দেখতে।
রাস্তার পাশেই এ ঝরনা দেখতে কোনো প্রবেশ ফি বা টিকিটের কোনো ব্যবস্থা নেই।
বিপুল জলরাশি বয়ে নিয়ে নিরবধি চলা এ প্রপাতের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে দিনের আলো থাকা পর্যন্ত।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে এস. আলম, সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ইউনিক, হানিফ, শ্যামলি, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দারবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি এসব বাসের ভাড়া যথাক্রমে নন এসি ৫৫০ টাকা ও এসি ৯৫০-১৫০০ টাকা। ঢাকা থেকে বাসে বান্দরবান যেতে সময় লাগে ৮-১০ ঘন্টা।
ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম গামী সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিতা, মহানগর গোধূলি এইসব ট্রেনে করে চট্রগ্রাম যেতে পারবেন। শ্রেনীভেদে ভাড়া ৩৫০ থেকে ১২০০টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে আকাশ পথে সরাসরি চট্রগ্রাম আসতে পারবেন।
চট্টগ্রামের বদ্দারহাট থেকে পূবালী ও পূর্বানী নামের দুটি বাদ বান্দারবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ দুটি বাসে জনপ্রতি ২২০ টাকা ভাড়া লাগে। চট্রগ্রামের ধামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ২০০-৩০০ টাকা ভাড়ায় বাসে করে বান্দরবান আসতে পারবেন।
বান্দরবান থেকে সিএনজি/জীপ/চান্দের গাড়ি তে করে শৈলপ্রপাত যেতে পারবেন। শুধু শৈলপ্রপাত দেখতে গেলে যাওয়া আসা সহ খরচ পরবে ৫০০-৮০০ টাকা। এছাড়া আপনি চিম্বুক বা নীলগিরি গেলে যাওয়ার পথেই রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়েই বেড়াতে বা দেখতে পারবেন শৈল প্রপাত। তাই শৈলপ্রপাতকে উদ্দেশ্য করে আলাদা ভাবে এখানে যাবার প্রয়োজন নেই।
কোথায় থাকবেন:
বান্দরবানে অসংখ্য রিসোর্ট, হোটেল, মোটল এবং রেস্টহাউজ রয়েছে। যেখানে ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন। বান্দরবানের সকল হোটেল গুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন।