চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের(Shah Amanat International Airport) গোড়াপত্তন চল্লিশের দশকের শুরুতে এয়ারফিল্ড হিসাবে।
মূলতঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রপক্ষের যুদ্ধবিমানের জ্বালানি সরবরাহের কাজে ব্যবহারের জন্যই এই এয়ারফিল্ড তৈরি করা হয়, পরে যা ধীরে ধীরে বিমানবন্দরে রূপ নেয়।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এটি একটি বাণিজ্যিক অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হিসাবে ব্যবহার শুরু হয়। বাংলাদেশ বিমান মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই ও সৌদি আরবে যাত্রী পরিবহন শুরু করলে এ বিমানবন্দর ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপ নেয় ১৯৯০ সালে। তবে আর্ন্তজাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইকাও) এ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতি দেয় আরও প্রায় ২৩ বছর পর ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর।
তারও আগে জাপানি সংস্থা জাইকার আর্থিক ও কারিগরী সহয়তায় এই বিমানবন্দর আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয় ১৯৯৮ সালের মার্চ মাসে। ৫৭০ কোটি টাকা (৫১.৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যয় এই কাজ শেষ হতে সময় লাগে প্রায় দুই বছর-২০০০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০০১ সালে চট্টগ্রাম এম এ হান্নান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যাত্রা শুরু করে নতুন অবয়বে।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এই বিমানবন্দরের নাম ছিল চট্টগ্রাম এম এ হান্নান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কিন্তু বিএনপি সরকার দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এলে চট্টগ্রামের এই বিমানবন্দরের নাম পাল্টে রাখে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
আগের পুরাতন বিমানবন্দরের বেশিরভাগ রানওয়ে এবং স্থাপনা বিমান বাহিনীকে হস্তান্তর করে বানানো হয়
আন্তর্জাতিক মানের নতুন স্থাপনা, রানওয়ে, আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ একটি আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের যাবতীয় সব সুবিধাদি। চার তলা উচ্চতার প্রায় নয় হাজার ৬৪৩ বর্গফুট আয়তনের এই বিশাল বিমানবন্দর ভবনে একই সাথে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজের যাত্রী উঠানো-নামানোর সব ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক আন্তর্জাতিক এবং খ্যাতনামা এয়ারলাইন্স সংস্থার উড়োজাহাজ ওঠানামা শুরু না করায় এক পর্যায়ে আধুনিক এই বিমানবন্দরের সুবিধাধির ৪০ শতাংশই অব্যবহৃত পড়ে থাকতে শুরু করে। এ কারণে সরকার এই বিমানবন্দর পরিচালনার ভার থাই এয়ারওয়েজ ইন্টারন্যাশনালের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দীর্ঘ মেয়াদি ইজারা দেওয়ার মাধ্যমে এই বিমানবন্দরকে লাভজনক করার পাশাপাশি চট্টগ্রাম দিয়ে বেশি সংখ্যক যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে এ অঞ্চলকে পর্যটকদের আকর্ষণের মূল জায়গা হিসাবে গড়ে তোলার পাকাপাকি ব্যবস্থা হয়।
এখন আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি চট্টগ্রামের এই বিমানবন্দর দিয়ে মালামালও পরিবহন হচ্ছে বিশ্বের নানা গন্তব্যে। এমিরাত স্কাই কার্গো আর ইত্তেহাদ কার্গো এই মালামাল নিচ্ছে। আর আন্তর্জাতিক রুটে বিমান ছাড়াও এয়ারএরাবিয়া, ফ্লাই দুবাই, মালিন্দা এয়ারলাইন্স ও ওমার এয়ার যাত্রী নিচ্ছে বিশ্বের নানা গন্তব্যে।
কিভাবে যাবেন
এই বিমানবন্দরটি চট্টগ্রাম শহরের জিইসির মোড় থেকে ২০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে ১৮.৫ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত।