মাগুরা শহর হতে প্রায় সাত কিলোমিটার পশ্চিমে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের উত্তর পাশে ইছাখাদা গ্রামে হজরত পীর মোকররম শাহ (র:) দরগাহ(Mokarram Ali Shah (R) Dargah)। দরগাহের উত্তর পাশ দিয়ে পূর্ববাহিনী নবগঙ্গা নদী। নদী পাড়ের বৃক্ষ লতাদির পত্রপল্লবে স্নিগ্ধ ছায়াচ্ছন্ন মৃত্তিকার মমতাময়ী বুকে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন বিখ্যাত ইসলাম ধর্ম প্রচারক ও মহান আধ্যাত্মিক সাধক হজরত পীর মোকাররম আলী শাহ (র:)। বিখ্যাত ধর্ম প্রচারক ও মুসলিম শাসক খান জাহান আলী (র:) বারজন শিষ্যসহ যশোরের বারবাজারে উপনীত হন আনুমানিক ১৪০০ খ্রি: এবং এখান থেকেই তাঁর কাযর্ক্ষেত্রের দ্বার উদ্ঘাটিত হয়। পরবর্তীতে তিনি যশোর হয়ে বাগেরহাট গমণ করেন। সেখানে তাঁর ধর্মপ্রচার ও কর্মকান্ডের ব্যাপ্তির সাথে শিষ্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬০ জনে উন্নীত হয়। সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহ এর শাসনামলে (১৪৪২-১৪৬০ খ্রি:) তাঁর প্রধান প্রধান কীর্তি স্থাপিত হয়।
হজরত খান জাহান আলী (রহঃ) এর অন্যতম শিষ্য হজরত পীর মোকররম শাহ (র:) সম্ভবত: বারবাজার হতে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ইছাখাদা গ্রামে এসে ইসলাম প্রচারে ব্রতী হন। তিনি এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদের ভগ্নাবশেষ মাত্র এখন বিদ্যমান আছে। ঐ সময় নির্মিত ঈদগাহের মেহরাব এখনও বিদ্যমান। তিনি এখানে দু’টি পুকুর খনন করেন যা কালের পরিক্রমায় এখন অনেকাংশে ভরাট হয়ে যায়। সম্প্রতি এই পুকুর দুটি খননসহ মাজারের পবিত্রতার প্রতি লক্ষ্য রেখে পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। মহান সাধক হজরত পীর মোকররম আলী শাহ (র:) এর অনেক অলৌকিক ক্ষমতার কথা জনশ্রুতি থেকে জানা যায়। প্রতি বছর ৩রা মাঘ এখানে পবিত্র ইসালে সওয়াব অনুষ্ঠিত হয়। এখানে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে আলীম শ্রেণী পযর্ন্ত এখানে লেখা পড়ার সুযোগ রয়েছে। হজরত পীর মোকাররম আলী শাহ্ (র:) দরগাহ মাগুরা সদর উপজেলার এক ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যিক মহিমামন্ডিত দর্শনীয় স্থান। পত্রপল্লবের স্নিগ্ধতায় নবগঙ্গার তীর ঘেঁষে এই দরগাহ শরীফের শান্ত নির্জনতা মরমীভাবনায় ভাবুকচিত্তকে ভরিয়ে তোলে। ভক্ত হৃদয়ের আশা আকাঙ্খাকে ধারণ করে এই দরগাহ মাগুরার ঐতিহ্যের এক অনুপম নিদর্শন।
যাতায়াতঃ
মাগুরা জেলা শহর হতে ০৭ কিলোমিটার পশ্চিমে মাগুরা-ঝিনাইদহ বিশ্বরোডে ইছাখাদার ডান দিকে নবগঙ্গা নদীর তিরে হজরত পীর মোকাররম আলী শাহ (র:) এর দরগাহ অবস্থিত। বাস, টেম্পু ও ভ্যানযোগ যাতায়াত করা যায়।
তথ্য প্রদানকারীঃ জনাব আসফাকুল হায়দার