বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া খাতুন (বেগম রোকেয়া)-এর পৈত্রিক বাড়ি পায়রাবন্দ(Pairaband)।এই মহীয়সী নারী জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর এখানেই এই পায়রাবন্দ গ্রামে। সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের এর ঘড়ের জন্ম উনার। তাঁর মাতা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী।
পায়রাবন্দ রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার একটি ইউনিয়ন। রংপুর সদর হতে খুব সহজেই রিকসা বা ব্যাটারী চালিত অটোতে এখানে ঘুরে আসা যায়। বা আপনি ইচ্ছা করলে বাসেও আসতে পারেন। যারা কোন কাজে নিজস্ব পরিবহনে রংপুর যাচ্ছেন বা রংপুর হতে গাইবান্ধা-বগুড়া রোডে ফিরে আসছেন, তারা ইচ্ছে করলেই এই বিখ্যাত স্থানটি ঘুরে আসতে পারে মাত্র ১৫-২০ মিনিটে। খুন ভালো কাটবে সময়টা।
এখানেই রয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদ কার্যলয়, পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গণকেন্দ্র পাঠাগার ও রোকেয়া কলেজ।
উনার বাড়ির পাশে সরকারী ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা হয়েছে একটি গেস্ট হাউজ ও বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন স্মরণে বাংলাদেশ সরকার একটি গণউন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। উনার পৈতৃক ভিটায় ৩ দশমিক ১৫ একর ভূমির ওপর নির্মিত হয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র। এতে অফিস ভবন, সর্বাধুনিক গেস্ট হাউজ, ৪ তলা ডরমেটরি ভবন, গবেষণা কক্ষ, লাইব্রেরি ইত্যাদি রয়েছে। স্মৃতিকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়।দুটি ভবন রয়েছে। একটি প্রশাসনিক আর অপরটি মূল ভবন। মূলত এটি “বিকেএমইএ” এর ট্রেনিং ইনস্টিউট। এখানে প্রশিক্ষণার্থীদের বিভিন্ন ট্রেনিং দেয়া হয়। বিকেএমই নামে ট্রেনিং সেন্টারে তরুণদের প্রশিক্ষদেওয়া হয়। তারপর বিভিন্ন জায়গায় তাদের কর্মসংস্হানের ব্যবস্থা করা হ্য়। সম্পূর্ণ বিনা খরচে যে কেউ এখান থেকে বিভিন্ন হাতের কাজের ট্রেনিং নিতে পারে। সবচেয়ে বড় ব্যপার হল এখানে থাকার জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা আছে।
কম্পাউন্ডের ভিতরে ঢুকে এগিয়ে গেলেই বেগম রোকেয়ার পিতলের চকচকে একটি ভাষ্কর্য/মূর্তি চোখে পড়বে।
অনেক বড় জায়গা নিয়ে এই স্মৃতিকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বাহিরটা অনেক সাজানো-গোছানো এবং পরিষ্কার। খুব সুন্দর সাজানো বাগান আছে যা আপনার মন কেড়ে নেবে।
বর্তমানে পৈত্রিক বাড়িটির আর কিছুই প্রায় অবশিষ্ট নেই, শুধুমাত্র বিলুপ্তপ্রায় কিছু ইটের দেয়ালের গাথুনি ছাড়া। আসলে ওটাকে বাড়ি বলা ভুল হবে। ওটা একটা বাড়ির ধ্বংসাবশেষ।মূল বাড়ির অংশটি বর্তমানে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেয়া, অবশ্য যেকেউ ইচ্ছে করলেই সেখানে প্রবেশ করতে পারেন। গেতে তালা দেওয়া থাকে। একজন কেয়ারটেকার আছেন উনাকে খুঁজে বের করে ভিতরে ঢুকতে পারবেন। আরও রয়েছে বেগম রোকেয়া ক্রাফটস যেখানে আপনি পাবেন ভূমিহীন ও দুস্থ মহিলাদের তৈরী (মূলতঃ পাটজাত) বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী।
তৎকালীন মুসলিম সমাজব্যবস্থা অনুসারে রোকেয়া ও তাঁর বোনদের বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয়নি, তাদেরকে ঘরে আরবী ও উর্দু শেখানো হয়। তবে রোকেয়ার বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের আধুনিকমনস্ক ছিলেন। তিনি রোকেয়া ও করিমুননেসাকে ঘরেই গোপনে বাংলা ও ইংরেজি শেখান।
১৮৯৬ সালে ১৬ বছর বয়সে রোকেয়ার বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। বিয়ের পর তিনি ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ নামে পরিচিত হন। তাঁর স্বামী মুক্তমনা মানুষ ছিলেন, রোকেয়াকে তিনি লেখালেখি করতে উৎসাহ দেন এবং একটি স্কুল তৈরির জন্য অর্থ আলাদা করে রাখেন। রোকেয়া সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯০২ সালে পিপাসা নামে একটি বাংলা গল্পের মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্যজগতে পদার্পণ করেন।
১৯০৯ সালে সাখাওয়াত হোসেন মৃত্যুবরণ করেন। সেসময় তিনি ‘নারীর অধিকার’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখছিলেন।
এছাড়াও, মহিয়সী বাঙালি নারী হিসেবে বেগম রোকেয়ার অবদানকে চীরস্মরণীয় করে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসনের জন্য “রোকেয়া হল” নামকরণ করা হয়।