নুহাশ পল্লী (Nuhash Polli) ঢাকার অদুরে গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামে ৪০ বিঘা জায়গার উপর প্রয়াত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ কর্তৃক নির্মিত বাগানবাড়ী। এটি এটি নুহাশ চলচিত্রের শুটিংস্পট ও পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র। নুহাশ পল্লীতে ঢুকে মাঠ ধরে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই হাতের বাঁ-পাশে শেফালি গাছের ছায়ায় নামাজের ঘর। এর পাশেই তিনটি পুরনো লিচুগাছ নিয়ে একটি ছোট্ট বাগান। লিচু বাগানের উত্তর পাশে জাম বাগান আর দক্ষিণে আম বাগান। ওই লিচুবাগের ছায়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ।
রাজধানীর অদূরে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে এক দুর্গম এলাকায় প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নুহাশ পল্লী গড়ে তুলেছেন। সেখানকার নানা স্থাপনা আর অসংখ্য ফলজ, বনজ গাছের পাশাপাশি তিনি বানিয়েছেন ঔষধি গাছের বাগান। সব মিলিয়ে মনের মতো করেই ছেলের নামে রাখা নুহাশ পল্লীকে এক স্বপ্নজগত করে তুলেছেন হুমায়ূন আহমেদ। তাই আড়াইশ প্রজাতির সবুজ গাছের সেই নন্দন কাননে বারবারই ছুটে গেছেন তিনি।
নুহাশ পল্লীতেই হুমায়ূন আহমেদ গড়ে তুলেছেন স্যুটিং স্পট, দিঘি আর তিনটি সুদৃশ্য বাংলো। একটিতে থাকতেন আর বাকি দুটি ছিল তার শৈল্পিক চিন্তাধারার আরেক রূপ। শানবাঁধানো ঘাটের দিঘির দিকে মুখ করে বানানো বাংলোর নাম দিয়েছেন ‘ভূত বিলাস’। দুর্লভসব ঔষধি গাছ নিয়ে যে বাগান তৈরি করা হয়েছে তার পেছনেই রূপকথার মৎস্যকন্যা আর রাক্ষস। আরো রয়েছে পদ্মপুকুর, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল।
কিংবদন্তী কথাসাহিত্যক হুমায়ুন আহমেদ ব্যক্তিগত উদ্যোগে নুহাশ পল্লী প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার ধানমণ্ডিতে তার বাসস্থান হলেও তিনি সুযোগ পেলই নুহাশ পল্লীতে চলে আসতেন সময় কাটাতে। কখনো আসতেন সপরিবারে, কখনো আসতেন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে রাতভর আড্ডা দিতে। প্রতি বছর ১লা বৈশাখে নুহাশ পল্লীতে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হতো।
কি কি আছে নুহাশপল্লীতে :
এখানে ২৫০ প্রজাতির দূর্লভ ঔষধি, মসলা জাতীয়, ফলজ ও বনজ গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছের গায়ে সেটে দেয়া আছে পরিচিতি ফলক, যা দেখে গাছ চেনা যাবে সহজেই। সবুজ মাঠের মাঝখানে একটি বড় গাছের উপর ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে। উদ্যানের পূর্ব দিকে রয়েছে খেজুর বাগান। বাগনের এক পাশে “বৃষ্টি বিলাস” নমে অত্যাধুনিক একটি বাড়ি রয়েছে। নুহাশ পল্লীর আরেক আকর্ষণ “লীলাবতী দীঘি”। দীঘির চারপাশ জুড়ে নানা রকমের গাছ। রয়েছে সানকাধানো ঘাট। পুকুরের মাঝখানে একটি দ্বীপ। সেখানে অনেকগুলো নরিকেল গাছ।
এছাড়া এখানে দেখা মিলবে হুমায়ূন আহমেদের আবক্ষ মূর্তি ও সমাধিস্থল, পদ্মপুকুর, সরোবরে পাথরের মৎসকন্যা, প্রাগৈতিহাসিক প্রানীদের অনুকীর্তি, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল যেখানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (Sunil Gangopadhyay) এবং হুমায়ূন আহমেদ একসঙ্গে জলে নেমেছিলেন, দাবার গুটির প্রতিকৃতি, টি-হাউসসহ নানা রকম দৃষ্টিনন্দন সব স্থাপত্য। ভূত বিলাস, বৃষ্টিবিলাসসহ তিনটি বাংলো রয়েছে এই বাগানবাড়িটিতে।
নুহাশ পল্লীতে প্রবেশ ও অন্যান্য ফি –
এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নুহাশ পল্লী সকল দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন খোলা থাকে। ১২ বছরের উপরে জনপ্রতি টিকেট লাগবে ২০০ টাকা।
নভেম্বর থেকে মার্চ মূলত পিকনিকের জন্য ভাড়া দেয়া হয়। প্রতিদিন পিকনিকের জন্য ১টি গ্রুপে সর্বোচ্চ ৩০০ জন আসতে পারবে। সরকারি ছুটির দিনে পিকনিকের জন্য গুনতে হবে ৬০ হাজার টাকা, অন্যদিন ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া সরকারি ছুটির দিনে পিকনিকের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাড়া পড়বে ৫০ হাজার টাকা, অন্যদিনগুলোতে ভাড়ার জন্য গুনতে হবে ৪০ হাজার টাকা।
যোগাযোগের ঠিকানা : সাইফুল ইসলাম বুলবুল, ব্যবস্থাপক, নুহাশ পল্লী। মোবাইল: ০১৭১২০৬০৯৭১ ০১৭৩৮৭০৪০১০
কিভাবে যাবেন:
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গুলিস্তান থেকে প্রভাতী-বনশ্রী বাসে হোতাপাড়া বাজারে নেমে সেখান থেকে ছোট টেম্পুতে করে পৌঁছে যেতে পারবেন নুহাশ পল্লীতে দূরত্ব ৮ কিলোমিটার । এছাড়া নিজস্ব গাড়িতে করে নুহাশ পল্লীতে যেতে পারেন।