কেশবপুরের হনুমান গ্রাম – যশোর

দেশের অন্য কোথাও খুব একটা দেখা না গেলেও যশোরের কেশবপুরে প্রায় ৪০০ হনুমান বাস করে। কেশবপুরের ভবঘুরে প্রজাতির কালোমুখী হনুমান(Keshabpur Hanuman Gram) বাঙালিদের কাছে নতুন করে পরিচয় করে দেবার মত কিছু নয়।মানুষ জেনে গেছে। এমনকি এসব হনুমানের কথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গেছে। বর্তমানে শ্রীরামচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ অনুচর এককালের ‘গ্রেট মাঙ্কি’ বলে খ্যাত লংকা বিজয়ী বীর হনুমান কালের আবর্তে আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে। প্রজাতি বিলুপ্তির ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৩০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আরও ১৮টি প্রজাতি বিলুপ্ত হতে চলেছে।

গত কয়েকশ’ বছর যাবৎ কেশবপুর সদর ও পার্শ্ববতী এলাকার ১০-১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিরল প্রজাতির এই হনুমান বসবাস করছে। বেসরকারি সংস্থা পিসের হিসেব মতে, বর্তমানে ওই এলাকায় প্রায় ৪০০ হনুমান রয়েছে। কেশবপুর বাজারের সাহাপাড়া, পশু হাসপাতাল, উপজেলা অফিস, শ্রীগঞ্জ বাজার, ব্রহ্মকাঠি, রামচন্দ্রপুর প্রভৃতি এলাকা হনুমানদের বিচরণক্ষেত্র। কিন্তু আশ্রয়, খাদ্য সংকট, প্রতিকূল আবহাওয়া ও বৈরী পরিবেশের শিকার হয়ে বিলুপ্তির চরম শিখরে চলে এসেছে এরা। অথচ নিকট অতীতেও এই হনুমানগুলো বাংলাদেশের জীববৈচিত্রের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো।

 

বিবর্তনঃ

নৃ-তত্ত্ববিদদের মতে প্রায় ৪ কোটি বছর আগে হনুমান প্রজাতির জন্ম। জন্মলগ্ন থেকে তারা নানা ঘাত প্রতিঘাত অতিক্রম করে বংশ পরস্পরায় পৃথিবীতে টিকে আছে। আচার-আচরণ ও বুদ্ধিমত্তায় প্রাণীকূলের অনেক প্রজাতির তুলনায় এরা উন্নত। আমাদের বাংলাদেশে এদের ৮টি প্রজাতি বিপদজনক অবস্থা অতিক্রম করছে। প্রজাতিগুলো হচ্ছে বানর, লজ্জাবতী বানর, উল্টোলেজী বানর, লজ্জাবতী বানর, কালোমুখো হনুমান বা ভবঘুরে হনুমান, মুখপোড়া বা লাল হনুমান, কালোমুখো হনুমান ও উল্লুক। পৃথিবীর একমাত্র বাংলাদেশের কেশবপুরে এবং ভারতের নদীয়া জেলাতে এ কালোমুখ ভবঘুরে হনুমান বসবাস করে।

 

সংগ্রামী জীবনঃ

৩০/৪০ বছর আগে প্রায় ৫ সহস্রাধিক হনুমান কেশবপুরের গ্রামাঞ্চলে গাছে, ডালে, জঙ্গলে নির্ভয়ে চলাচল করতো। কিন্তু এই সংখ্যা এখন ৪/৫ শ’তে নেমে এসেছে। বিলুপ্তির এ হার অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ থেকে এই প্রজাতি অদূর ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে।
বেশ কিছুদিন থেকে এখানকার হনুমানগুলো দেশান্তরী হতে শুরু করেছে। হনুমান এক সময় যে পরিবেশে বাস করত, বংশ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চালাত তা এখন আর অবশিষ্ট নেই। তাই এই হনুমান খাদ্যের অভাবে জীবন বাঁচানোর তাগিদে দেশান্তরী হচ্ছে। এক সময় কালোমুখী হনুমানগুলোর জন্য এ অঞ্চলে প্রচুর ফলজ ও বনজ বৃক্ষ ছিল। প্রজননকালীন সময় এবং গর্ভকালীন আশ্রয়ের জন্য প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি প্রাচীন সমবটবৃক্ষে পরিপূর্ণ ছিল এ এলাকা। বর্তমানে মানুষের অপরিণাদর্শী কর্মকান্ডে হনুমানকুল আশ্রয়হীন ও বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এতে বংশ বিস্তার হ্রাস পেতে পেতে হনুমানের সংখ্যা হাতে গোনার পর্যায়ে চলে এসেছে।

 

জীবনযাপন ও আচার-আচরণঃ

প্রজাতিগত দিক দিয়ে হনুমানের মধ্যে কয়েকটি শ্রেণী রয়েছে। এই প্রজাতি আদিম যুগ থেকে মনুষ্য জীবনধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু পরিবেশগত কারণে এরা আজ দুর্গম জঙ্গলের বাইরে এসে অসহায় জীবনযাপন করছে। মহাভারতের রামভক্ত কেশবপুরের হনুমানের বর্তমানে নেই খাবার, নেই আশ্রয়, নেই শীত নিবারণের ব্যবস্থা। প্রজনন আর গর্ভকালীন নিরাপত্তার জন্য নেই প্রয়োজনীয় বনাঞ্চল। মোট কথা, তাদের নানা সমস্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। এই অবস্থায় এসব হনুমানের বংশ বিস্তার কমতে শুরু করেছে। চাহিদা অনুযায়ী খাবার না পেয়ে তারা ক্রমেই হিংস্র হয়ে উঠছে। ফসলের ক্ষেত বা ফলবাগানে হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 25, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.