উয়ারী-বটেশ্বর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। উয়ারী-বটেশ্বর (Wari Bateshwar) মাটির নিচে অবস্থিত একটি দুর্গ-নগরী। বিশেষজ্ঞদের ধারণা অনুযায়ী এটি প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনো। তবে, ২০০০ খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কৃত কিছু প্রত্ন নিদর্শনের কার্বন-১৪ পরীক্ষার প্রেক্ষিতে উয়ারীর বসতিকে খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
উয়ারী ও বটেশ্বর ছিল দুটি আলাদা জায়গা, যেখানে বসবাস ছিল বিখ্যাত গঙ্গারিডি জাতির। উয়ারী-বটেশ্বর ছিল একটি দুর্গনগর, নগর বা একটি নগরকেন্দ্র। উয়ারী-বটেশ্বরে আড়াই হাজার বছরের প্রত্ন নিদর্শন আবিষ্কারের কাহিনী একটি জনপদের অস্তিত্বের কথা প্রমাণ করে দেয়। এখন পর্যন্ত প্রায় সব প্রত্নতত্ত্ববিদই একে ওই জনপদের রাজধানী বলে আখ্যায়িত করেছেন। স্বীকৃতি দিয়েছেন রৌপ্যমুদ্রা প্রাপ্তির স্থান হিসেবে উয়ারী-বটেশ্বরে।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননে উয়ারীতে পাওয়া গেছে চারটি মাটির দুর্গ-প্রাচীর। দুর্গ প্রাচীরের পাঁচ-সাত ফুট উঁচু ধ্বংসপ্রাপ্ত কিছু অংশ এখনো টিকে আছে। এ ছাড়া দুর্গের চারদিকে রয়েছে পরিখা। যা কি না এখনো তার অস্তিত্বের জানান দেয় রেখে যাওয়া রেখাগুলো দিয়ে। দুর্গের পেছনে অসম রাজার গড় নামে একটি মাটির বাঁধ রয়েছে। এটি ব্যবহৃত হতো রাজা ও তাঁর রাজ্যের প্রতিরক্ষার কাজে।
উয়ারী দুর্গনগরীর কাছাকাছি এ যাবৎ আবিষ্কৃত অর্ধশতাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্পট থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রত্নবস্তুর দেখা পাওয়া যায়। এগুলো দেখলে অচিরেই বলা যায়, এখানকার অধিবাসীরা ছিল কৃষিজীবী। তাদের উৎপাদিত ফসল নগরে বসবাসরত রাজা, রাজকর্মচারী ও ধনীদের খাদ্যচাহিদা পূরণে ব্যবহার করা হতো।
দেখতে পাবেন স্বল্প মূল্যবান পাথরের গুটিকা, কাঁচের গুটিকা, রৌপ্যমুদ্রা, টিনমিশ্রিত ব্রোঞ্জ নির্মিত কিছু পাত্র। ধাতুর তৈরি অস্ত্রগুলো দেখলে কল্পনা করে ফেলবেন সেই সভ্যতার ইতিহাস।
মাটির দেয়ালগুলোতে দেখতে পাওয়া যায় তখনকার কারিগরি শিল্প। গঙ্গারিডির জীবনযাপন পদ্ধতি সম্পর্কেও পেয়ে যাবেন ধারণা।
প্রায় সবসময়ই চলতে থাকে খননকাজ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি বিদেশি সংস্থাও এখানে খননকাজ অব্যাহত রাখে।
উয়ারী-বটেশ্বর কীভাবে যাবেন
সায়েদাবাদ কিংবা মহাখালী থেকে সরাসরি যেতে পারবেন নরসিংদীর বেলাবোতে। সায়েদাবাদ থেকে মনোহরদী পরিবহনে মরজাল বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। ভাড়া ১০০ টাকা। সেখান থেকে হেঁটে বা রিকশায় উয়ারী-বটেশ্বর। মহাখালী থেকেও যেতে পারেন বাদশা কিংবা চলন বিল পরিবহনে। ভাড়া একই।
কী খাবেন
বিশেষ কিছু খেতে হলে উয়ারী বটেশ্বরে পাবেন না। হেঁটে কিংবা ছবি তুলে যখন ক্লান্ত হয়ে যাবেন নিয়ে নিতে পারেন একটু চা বিরতি। পাশেই রয়েছে বেশ কিছু চায়ের টং। আসার সময় মরজাল বাসস্ট্যান্ড থেকে পেট পুরতে পারেন নরসিংদীর বিখ্যাত কলা খেয়ে। নিয়ে নিতে পারেন কয়েক হালি গন্ধরাজ লেবু।