আলীকদম উপজেলা সদর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ দিকের পাহাড়ের নাম ‘আলীর পাহাড়’ (Alir Pahar / Hill) । এই আলীর পাহাড়েই রহস্যজনক ৪টি সুড়ঙ্গের অবস্থান। এসব সুড়ঙ্গ নিয়ে প্রচলিত আছে নানা রূপকথা ও ভৌতিক কল্পকাহিনী। একই সাথে আছে সত্য কাহিনীও। স্থানীয়দের নিকট এটি ‘আলীর সুরঙ্গ’ (Alir Shurongo) বা ‘আলীর সুরম’ নামে সর্বাধিক পরিচিত।
খাল পেরিয়ে, পাহাড় টপকে, দুই পাহাড়ের মাঝখানের দুর্গম ঝিরিপথ দিয়ে আলীর সুড়ঙ্গ পর্যন্ত যেতে হয়। বন্ধুর এই পথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
আলীকদমের মংচপ্রুপাড়া দিয়ে স্বচ্ছ পানির তৈন খাল পেরুলেই আলীর পাহাড়। এরপর কখনো ওপরে ওঠা, কখনো একেবারে নিচে নামা। মাঝে বাঁশের সেতু দিয়ে ঝিরি পার হলে সুড়ঙ্গে যাবার পথ। দু’পাশেই পাহাড়। পাহাড়ের গা যেন শিল্পীর চারুকর্ম, চুইয়ে পড়ছে হিম ঠাণ্ডা পানি। পুরো পরিবেশটাই সবুজে মোড়া। অনেক উপর থেকে পাহাড় আর বৃক্ষের ফাঁক দিয়ে কখনো কখনো আসছে সুর্যের আলোকচ্ছটা।
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা দুটো উঁচু পাহাড়ের একটির মধ্যভাগে আলীর সুড়ঙ্গে ঢোকার প্রবেশমুখ। নিচ থেকে প্রবেশমুখ পর্যন্ত ওঠানামার জন্য রাখা হয়েছে একটি লোহার সিঁড়ি। সিঁড়ি ভেঙে সুড়ঙ্গের মুখে পা রাখতেই মনে হবে এভারেস্ট জয় করেছি।
সুড়ঙ্গের ভেতরে ঘুটঘুটে গা ছমছমে অন্ধকার তাই টচ লাইট বা আগুনের মশাল নিয়ে প্রবেশ করতে হয়। এর মধ্যে এক ঝাঁক বাদুড় উড়ে গিয়ে ভয়টা আরও বাড়িয়ে দিবে। তবে কারো কোনো ক্ষতি করে না এরা। সুড়ঙ্গের নিচে জমে থাকা অল্পস্বল্প পানিতে পথটি পিচ্ছিল।
আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাহলে এই গুহার সামনে দিয়ে দ্বিতীয় গুহার দিকে যাবেন। প্রথম গুহার নীচ থেকে দ্বিতীয় গুহার নীচে যেতে ২০ মিনিটের মত লাগবে। আপনি ইচ্ছে করলে নীচ থেকে দড়ি ছাড়া গুহায় উঠতে পারবেন। তবে নিরাপত্তা জনিত কারণে দড়ি ব্যবহার করতে পারেন। তাই যাবার সময় ৪০ ফুটের মত দড়ি নিতে পারেন। দ্বিতীয় এই গুহা দেখে আপনি যে পথে বের হবেন ইচ্ছে করলে প্রথম গুহা দেখে সেই পথ দিয়ে এই গুহায় প্রবেশ করতে পারবেন। এই পথটি অপেক্ষাকৃত সহজ।
যেভাবে যেতে হবে
ঢাকা থেকে কক্সবাজার যে কোনো বাসে চড়ে চকরিয়া বাস টার্মিনাল নামতে হবে। ঢাকা থেকে নন এসি বাস ভাড়া নিবে ৭৫০ টাকা। সেখান থেকে বাসে চড়ে যেতে পারবেন আলীকদম। আলীকদম উপজেলা সদরের পাশেই সেনাজোন। সেনাজোন থেকে নৌকায় আলীর সুড়ঙ্গে (Ali’s Tunnel)। সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসা যায়। সুড়ঙ্গে ঢুকতে হলে স্থানীয় আদিবাসীদের গাইড হিসেবে নিতে হবে।
অথবা ট্রেনে চট্রগ্রাম গিয়ে চট্রগ্রাম থেকে বাসে চকরিয়া যেতে পারেন । চট্রগ্রাম থেকে চকরিয়া জন প্রতি বাস ভাড়া ১৭০ টাকা। চকরিয়া বাস টার্মিনাল থেকে মাতামুহুরী পরিবহণ সার্ভিসের বাস প্রতিদিন সকাল ৭.৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬.৩০ পর্যন্ত আলিকদমের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আলিকদম থেকে প্রতিদিন সকাল ৭.০০ শুরু করে বিকেল ৫.৩০ পর্যন্ত চকরিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। দুই দিক থেকেই ৪০ মিনিট পর পর গাড়ী ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৬০ টাকা। সময় লাগে ১ ঘন্টা ৪০ মিনিটের মতো। চকরিয়া থেকে আলীকদম চাঁদের ( জিপ ) গাড়িতে আসতে পারবেন। লোকাল ভাড়া জন প্রতি ৬৫ টাকা। রিজার্ব ভাড়া এক পথ ১২০০-১৪০০ টাকার মত।
বাসে গেলে দুই ঘণ্টা। আর চাঁদের গাড়িতে গেলে ৩০ মিনিট বা ৪০ মিনিট কম লাগবে। দুয়ের মাঝে ভাড়ার তফাৎ মাত্র ১০ টাকা।
অথবা বান্দরবন হয়েও আলীকদম যাওয়া যায়। ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম হতে বান্দরবন যাবার জন্য অহরহ বাস পাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেনঃ
আপনি ইচ্ছে করলে ঢাকা থেকে রাতের বাসে গিয়ে চকরিয়া নেমে এক দিনে আলীর সুড়ঙ্গ, রূপমুহুরী ঝর্ণা দেখে আবার রাতের বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারবেন। চট্রগ্রাম থেকেও একদিনে দেখে আসতে পারবেন । তারপরও যদি থাকতে হয়। আলীকদমে থাকার তেমন ভাল ব্যবস্থা নাই। জেলা পরিষদেরে একটি ডাক বাংলো আছে যার অবস্থান বাস স্ট্যান্ড থেকে স্বল্প দুরত্বে পান বাজারে ও ব্যক্তি মালিকানা একটি বোর্ডিং আছে যার অবস্থান আলীকদম বাজারে। বোর্ডিং এর মান তেমন ভাল না। ডাক বাংলোতে মোট ১০ টি রুম আছে । ভাড়া – নীচ তলার ৫ টি প্রতিটি ৫০০ টাকা করে। দ্বিতীয় তলার ৫ টি প্রতিটি ১০০০ টাকা করে। জিয়া বোর্ডিং এ দুই বিছানার রুম ভাড়া- ৪৫০ টাকা ।
জিয়া বোর্ডিং এ যোগাযোগঃ মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন (০১৮২৮৯৩৩৬৩৩, ০১৮২৮৯৩৩৬৩৩, ০১৫৫৩৬০৩৯১৫ )
কোথায় খাবেনঃ
আলীকদমের খাবার হোটেল গুলো মাঝারি মানের। খুব বেশী কিছু আশা করা ভুল হবে।
গাইডঃ
আলীর সুড়ঙ্গে আগে গিয়ে না থাকলে অবশ্যই গাইড নিবেন । গাইড হিসেবে ওদের নিতে পারেন। খুশি হয়ে যা দিবেন তাতেই ওরা খুশি। সাদ্দাম -০১৮৩১৫০৭২৯৩ / ০১৮২৮৯৩৩৬৩৩, খালেক – ০১৮৩৭৮৩৭৫৯১।