পানিহাটা-তারানি পাহাড় – শেরপুর

নদী, পাহাড়, বন, আর ঝর্ণা এই চারে অপরূপা পানিহাটা। কিন্তু সৌন্দর্য্যের ভাগটা শুধু পানিহাটাই নিতে পারেনি। এর একটা অংশে ভাগ বসিয়েছে তারানি গ্রামের পাহাড়। অবশ্য পানিহাটা নামেই পরিচিতেরা জানেন। তাই দর্শণার্থীদের জন্য পানিহাটা-তারানি দুটোই উপভোগ্য। শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার এবং শেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার পানিহাটা-তারানি পাহাড় (Panihata Tarani Pahar / Hill) পর্যটন কেন্দ্রটি প্রকৃতিপ্রেমীদের অন্যতম আকর্ষণ।

উত্তরে নীলাভ-সবুজ তুরা পাহাড়কে আবছা আবরণে জড়িয়ে নিয়েছে কুয়াশার মতো মেঘ কখনো বা কুয়াশা নিজেই। দূরের টিলাগুলো কেবলই লুকোচুরি খেলে এরই আড়ালে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ছোট ছোট পাহাড়গুলোকে ফাঁকি দিয়ে তুরা পাহাড়ের অববাহিকা থেকে সামনে সোজা এসে পশ্চিমে চলে গেছে পাহাড়ি নদী ভোগাই। একপাশে তার কাশবন আর অপর পাশে শত ফুট উঁচু দাঁড়িয়ে থাকা সবুজে জড়ানো পাহাড়।

নদীর টলটলে স্বচ্ছ পানির নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে নুড়ি পাথরগুলো। সামনের একশ গজ দূরে ভারত অংশে পিঁচঢালা আকাবাঁকা রাস্তা পূর্ব থেকে পশ্চিমে চলে গেছে পাহাড়ের বুকচিরে। আর মাঝেমধ্যেই হুসহাস করে ছুটে চলছে মালবাহী ট্রাকগুলো। চতূর্দিকে ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড়ের সাড়ি। পূর্ব দিকের কয়েকটি পাহাড়ের গা ঘেঁষে ভোগাই নদীতে এসে মিশেছে ছোট একটি পাহাড়ি ঝর্ণা । সেগুন, গজারী আর আকাশমনির বাগানে ঘুরতে ঘুরতে শোনা যাবে পাখ-পাখালির কিচির মিচির। রয়েছে নানা প্রজাতির পাহাড়ি গাছ-গাছরা। কখনো কখনো বিশেষ করে, ধানে থোর আসার সময় কিংবা ধান পাকার সময় দূরের গহীন পাহাড় থেকে বন্যহাতির আওয়াজও মিলে মাঝেমধ্যেই। কখনো বা দূর থেকে তাদের দেখাও মেলে ভাগ্যবানদের।

এখানেই রয়েছে খ্রিষ্টানদের উপাসনালয়, ছোট একটি চিকিৎসা কেন্দ্র, বিদ্যালয় আর ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য হোস্টেল। সেখানে শিশু-কিশোরদের কোলাহল। সামান্য পূর্বদিকটায় এগুলে উপজাতিদের বসবাসস্থল ফেক্কামারী। উপজাতীয়রা মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় পড়ে থাকার নাম ‘ফেক্কা’। আর তাই পাড়াটি পানিহাটার অংশ হলেও ফেক্কামারী নামে স্থানীয়রা ডাকেন। প্রায় ৪৫-৫০টি পরিবার পাহাড়বেষ্ঠিত এ পাড়ায় মিলেমিশে বসবাস করে। সহজেই আপন করে নেয় তারা সবাইকে।

ফেক্কামারীর কিছুটা পূর্বদিকে পানিহাটা বিল। বিলের চতূর্পাশ ঘেঁষে রয়েছে পাহাড়ের সাড়ি। এ বিলকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে ফিসারী। বাইরে থেকে কেউ বুঝতেই পারবে না যে এতটুকু ভিতরে একেবারে জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন এমন নান্দনিক দৃশ্য বা ঘুরে দেখার মতো জায়গা থাকতে পারে। তারানী পাহাড়ের ঢালে ভোগাই নদীর ঠিক উল্টো পাশে মেঠোপথের গা ঘেঁষে রয়েছে পাহাড়বেষ্ঠিত সবুজ গালিচা বিছানো খেলার প্রশস্ত মাঠ। যেখানে বিকেল হলেই পাহাড়ি বালকরা মেতে ওঠে খেলায়। সন্ধ্যা অব্দি চলে তাদের কোলাহল।

দর্শনার্থীরা চাইলে এ মাঠে বসেই খাওয়া-দাওয়া বা আড্ডা দেওয়ার কাজও সাড়তে পারেন অনায়াসেই। এসব মিলে প্রকৃতি প্রেমীদের প্রতিনিয়ত আকর্ষণ করে অপরূপা পানিহাটা-তারানি পাহাড়।

কোথায় থাকবেন

নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় থাকার ব্যবস্থা আছে।

 

কিভাবে যাবেন –

ঢাকার মহাখালী থেকে বিলাস পরিবহনের বাসে নালিতাবাড়ী যাওয়া যায়। সময় লাগে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। ভাড়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। নালিতাবাড়ী শহর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে পানিহাটা যেতে সময় লাগে ৩৫ থেকে ৪৫ মিনিট। মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার যাতায়াত ভাড়া দুই শ থেকে আড়াইশ টাকা।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: মার্চ 8, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.