হাইল হাওর – মৌলভিবাজার

হাওর (Haor) পিরিচ আকৃতির বৃহৎ ভূ-গাঠনিক অবনমন। প্রধানত বৃহত্তর সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে হাওর(Hail haor) দেখা যায়। এই হাওরগুলি নদী ও খালের মাধ্যমে জলপ্রবাহ পেয়ে থাকে। শীতকালে হাওরগুলি বিশাল, দিগন্তবিস্তৃত শ্যামল প্রান্তরের রূপ নেয়, আবার বর্ষাকালে কুলহীন সমুদ্রের আকার ধারণ করে। হাওর শব্দটি সংস্কৃত শব্দ ‘সাগর’-এর বিকৃত রূপ বলে ধারণা করা হয়।

ভূ-গাঠনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হাওরের উৎপত্তি এবং মধুপুর সোপান গঠনের সঙ্গে এর যোগ রয়েছে বলেও মনে করা হয়। বিল অবনমিত হয় না, কিন্তু হাওর অববাহিকা অবনমিত হয়। একসময় মেঘনা ও এর শাখানদীসমূহ দ্বারা গঠিত প­াবনভূমির স্থায়ী ও মৌসুমি হ্রদ নিয়েই গঠিত হয়েছিল হাওর অববাহিকা, যেখানে প্রচুর বৈচিত্র্যপূর্ণ জলজ উদ্ভিদ থাকত। কিন্তু ক্রমান্বয়িক অবক্ষেপণের কারণে অববাহিকাগুলির গভীরতা কমে গিয়ে চরা জেগে সেখানে হোগলা, নলখাগড়ার ঝোপ গজিয়ে ওঠে। এর ফলে একদিকে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর খাদ্য ও আশ্রয়ের আদর্শ স্থান হয়ে ওঠে হাওর অঞ্চলগুলি, অন্যদিকে পরিযায়ী পাখিদের আকর্ষণীয় আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। আবার পরিযায়ী পাখিদের মলমুত্রে সমৃদ্ধ হয়ে উর্বর জলমহালগুলি উদ্ভিদ প­াঙ্কটন (Phytoplankton) ও দীর্ঘ লতাগুল্মের জন্ম দেয়, যা ইউট্রোফিকেশন (eutrophication) প্রক্রিয়াকে অংশত সাহায্য করছে।

অববাহিকাটি উত্তরে মেঘালয় পর্বতমালা (ভারত), দক্ষিণে ত্রিপুরার পাহাড় (ভারত) এবং পূর্বদিকে মণিপুরের (ভারত) উচ্চভূমি দিয়ে ঘেরা। বিশাল এই পলিগঠিত সমভূমিতে ছয় সহস্রাধিক স্থায়ী অগভীর জলমহাল রয়েছে, যা বিল নামে পরিচিত এবং এই এলাকাকে মৌসুমি বন্যায় প­াবিত বৃহৎ অঞ্চল ঘিরে রয়েছে।

পার্শ্ববর্তী ভারতের অসংখ্য পাহাড়ি নদী এই পলিভূমিতে প্রচুর পানি সরবরাহ করে। বর্ষাকালে ৬ মিটার পর্যন্ত গভীর বিস্তীর্ণ বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকে এই অঞ্চল। শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ পানি সরে যায়। দুই একটি বিলের অগভীর পানিতে গজিয়ে ওঠে প্রচুর পরিমাণে বৈচিত্র্যময় জলজ উদ্ভিদ। টানা খরা মৌসুমের শেষের দিকে পানি সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে অতি উর্বর পলিমাটির বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ধানের ব্যাপক ফলনের তোড়জোড় চলে। এই অববাহিকায় রয়েছে প্রায় ৪৭টি বড় হাওর এবং বিভিন্ন মাপের প্রায় ৬,৩০০ বিল। এগুলির মধ্যে প্রায় ৩,৫০০ স্থায়ী ও ২,৮০০ অস্থায়ী বা ঋতুভিত্তিক বিল।

অবস্থান ও আয়তনঃ

হাইল হাওর সিলেটের মৌলভিবাজার জেলার সদর ও শ্রীমঙ্গল এবং হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত।এতে রয়েছে ১৪ টি বিল এবং পানি নিস্কাশনের ১৩ টি নালা।এই হাওরটির মোট আয়তন ১০ হাজার হেক্টর; যার ৪ হাজার হেক্টর প্লাবন ভূমি, ৪ হাজার ৫১৭ হেক্টর হাওর, ১ হাজার ৪০০ হেক্টর বিল, ৪০ হেক্টর খাল এবং ৫০ হেক্টর নদী।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 27, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.