হরিপুর জমিদার বাড়ি – ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামে তিতাস নদীর পূর্বপ্রান্তে হরিপুর (জমিদার বাড়ি) বড় বাড়ি (Haripur Zamidar Bari) । বাড়িটিকে কেউ বলে রাজ বাড়ি, বড়বাড়ি আবার কেউ বলে জমিদার বাড়ি।

বর্তমানে এটা অর্পিত সম্পত্তি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক লোক আসে বাড়িটি দেখতে। প্রতি বছরই নাটক, সিনেমার শুটিং করতে এখানে লোকজন আসে। প্রয়াত নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্রের কয়েকটি চিত্র এখানে শুটিং হয়েছে।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে বাড়িটির অবস্থান। বাড়ির বাইরে থেকে কিছুই বোঝার উপায় নেই। অনেক বড় বারান্দা ডিঙিয়ে মূল বাড়ি। নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত বাড়িটি। বাড়ির বাইরের অবয়বটি অবিকল রয়ে গেছে। কারুকাজ খচিত দেয়াল, স্তম্ভ ও কার্নিশ। কিন্তু খুব কাছে গেলে বোঝা যায়, এ বাড়ির জীর্ণ ও ভগ্নদশা।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বাস করছেন জমিদারের পুরোহিতদের বংশধররা। বসবাসকারীরা সাধারণ মানের দরজা লাগিয়ে বসবাস করছে। ৩০টি পরিবার রয়েছে এখানে। জানা যায়, প্রায় ১৭৫ বছর আগে জমিদার গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরী ও কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী বাড়িটি নির্মাণ করেন। ১৩৪৩ বাংলার ১২ চৈত্র (দোল পূর্ণিমা) কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর পর্যায়ক্রমে বাড়িটির উত্তরাধিকার হন হরিপদ রায় চৌধুরী ও শান্তি রায় চৌধুরী। তাদের কাছ থেকে বাড়ির মালিকানা ও জমিদারি আসে উপেন্দ্র রায় চৌধুরী ও হরেন্দ্র রায় চৌধুরীর। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হলে তারা কলকাতায় চলে যান। যাওয়ার সময় পুরোহিতদের রেখে যান।

বাড়িটির দেয়ালের অধিকাংশ পলেস্তারা খসে পড়ছে আর সেখানে জমেছে শেওলা। দৃষ্টিনন্দন কারুকাজের অল্প কিছুই বিলীন হতে বাকি আছে। প্রায় ৪৮০ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত তিনতলা জমিদার বাড়িটিতে প্রায় ৬০টি কক্ষ, রং মহল, দরবার হল, ধানের গোলা, গোয়ালঘর, রান্নার ঘর, নাচ ঘর, মল পুকুর, খেলার মাঠ, মন্দির ও সীমানা প্রাচীর রয়েছে।

বিশাল আয়তনের বাড়িটির পুরো ভবনের কোথাও কোনো রডের গাঁথুনি নেই। লাল ইট সুরকির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি ভবনের দুপাশে দুটি সুউচ্চ গম্বুজ সগর্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। দোতলায় উঠার ছয় দিকে ছয়টি সিঁড়ি ও তিনতলায় উঠার দুই দিকে দুটি সিঁড়ি রয়েছে। বাড়তি পশ্চিম-উত্তর কোণে ছয়টি বেডরুম এবং মল পুকুরের পূর্বপাড়ে চারটি ও পশ্চিম পাড়ে চারটি বেডরুম রয়েছে। বাড়ির পশ্চিম দিকে তিতাস নদীর পাড়ে শান বাঁধানো ঘাটের উত্তর দিকে কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী ও দক্ষিণ দিকে গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরীর সমাধি মঠ রয়েছে।

কিভাবে যাবেন

নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর গ্রামে তিতাস নদীর পূর্বপ্রান্তে হরিপুর (জমিদার বাড়ি) কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি (জমিদার বাড়ি) বড়বাড়ি।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: আবদুর রহমান,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: এপ্রিল 7, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.