সাজেক ভ্যালী – রাঙ্গামাটি

বর্তমান সময়ে পর্যটকদের কাছে যে কয়টি দর্শনীয় স্থান সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তার মধ্যে রাঙামাটি জেলায় সাজেক ভ্যালী অন্যতম। বাংলাদেশের একটি অন্যতম সুন্দর সাজেক ভ্যালী (Sajek Valley) এমন একটি জায়গা যেখানে ভাগ্য ভাল হলে ২৪ ঘণ্টায় আপনি প্রকৃতির তিনটা রূপই দেখতে পারবেন। কখনো খুবই গরম একটু পরেই হটাৎ বৃষ্টি এবং তার কিছু পরেই হয়তো চারদিকে ঢেকে যাবে কুয়াশার চাদরে ।

আকবাকা পাহাড়ী পথ বেয়ে মেঘের রাজ্যের ভিতর দিয়ে সাজেক যাওয়া সত্যিই অসাধারন। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন। সাজেক যদিও রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত তবে যাতায়াতের সহজ পথ খাগড়াছড়ি-দিঘিনালা রোড। রাঙামাটির অনেকটা অংশই দেখা যায় সাজেক ভ্যালি থেকে। খাগড়াছড়ি থেকে ৬৯ কি.মি. এবং বাঘাইছড়ি উপজেলা থেকে ৩০ কি.মি. দুরের সাজেকের পুরোটাই পাহাড়ে মোড়ানো পথ। প্রকৃতির এই রুপ যেন রাঙামাটির ছাদ! নয়নাভিরাম অরণ্যভূমি আর পাহাড়ের বন্ধনে যেখানে মেঘের দল প্রেমে মেতে থাকে।

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে পরবে বেশ কিছু পাহাড়ী বাজার যেখানে সকালের নাস্তা খাওয়া যাবে। এর মধ্যে বাঘাইহাট বাজার, মাছালং বাজার অন্যতম। মাছালং বাজার এলাকা সাজেক ইউনিয়নের প্রধান কেন্দ্রস্থল। এখান থেকে সাজেকের দূরত্ব ১৮ কি.মি.। পাশের সীমান্ত ঘেঁষা ভারত থেকে আসা মাছালং নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে এই বাজার।

যাওয়ার পথে দেখা যাবে পাহাড়ী লোকালয়, ঝুম চাষ, বিভিন্ন নদী, আর্মি ও পুলিশ ক্যাম্প। এর বাইরে পুরোটা পথ জুড়ে সবুজ পাহাড়, যা নিজেকে আবৃত করে রাখে কুয়াশার নরম চাদরে। কুয়াশার ঘনত্ব ভেদ করে মাঝে মাঝে গাড়ি চালানো বেশ কষ্টকর হয়। যাওয়ার পথে মোট চারটি আর্মি ও পুলিশ ক্যাম্প এ রিপোর্ট করতে হবে।

রুইলুই পাড়া সাজেক উপত্যকার মূল কেন্দ্র। সাজেক ভ্যালীর বিজিবি ক্যাম্প থেকে ১ কি.মি. আগে রুইলুই পাড়ায় লুসাই, পাংখোয়া, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস। পাড়ার সবগুলো বাড়ির রং লাল-সবুজ। এছাড়া সাজেক থেকে ২০/২৫ মিনিটের হাঁটা পথ কংলাক পাড়া। পাংখোয়াদের বসবাস এখানে। সব মিলিয়ে ১০ টি পরিবারের ১০০ সদস্যের বসবাস হবে। বিশাল পাথরখণ্ডের পাদদেশেই কংলাক পাড়ার অবস্থান। কংলাকের পাথরচূড়ায় দাঁড়িয়ে পুরো সাজেক উপত্যকা চমৎকারভাবে এক নজরে দেখা যায়। কংলাক পাড়া রাঙ্গামাটি জেলার অন্যতম উচ্চতম স্থান, যার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০০ ফিট উপরে। কংলাক পাড়া থেকে আকাশ পরিষ্কার থাকলে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। এই লুসাই পাহাড় থেকে বাংলাদেশের কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তি হয়েছে যা রাঙ্গামাটি হয়ে চট্টগ্রামের ভিতর দিয়ে এসে বঙ্গোপসাগড়ের সাথে মিলেছে।

রাতে এই দুর্গম পাহাড়ের চুড়ায় যখন সোলারের কল্যাণে বাতি জ্বলে উঠে তখন সৃষ্টি হয় অসাধারণ এক পরিস্থিতি । অনেক বাচ্চারা রোড লাইটের নিচে বই নিয়ে বসে পড়ে অথবা ঐ টুকু আলোর ভিতরেই খেলায় মেতে উঠে । সাজেকে ৩টা হ্যালি প্যাড আছে ৩টার সৌন্দর্য তিন রকম । এছাড়া রুইলুই পারা হতে হেটে আপনি কমলং পারা পর্যন্ত যেতে পারেন এই পারাটিও অনেক সুন্দর এবং অনেক উচুতে অবস্থিত । কমলার সিজনে কমলা খেতে ভুলবেন না । সাজেকের কমলা বাংলাদেশের সেরা কমলা । বাংলাদেশ আর্মিদের দারা রুইলুই পারার অধিবাসীদের জন্য একটা ছোট তাত শিল্প গরে তোলা হয়েছে । সুন্দর সুন্দর গামছা ,লুঙ্গী পাওয়া এখানে ।

কখন যাবেনঃ – শুধুই ঘুরাঘুরির জন্য হলে শীতকাল যাওয়া সবচেয়ে ভালো। আর আপনি যদি এডভেঞ্চার প্রিয় হন আর পাহাড়ের সত্যিকারের সৌন্দর্য দেখতে চান তবে বর্ষাকালে আসুন।

কেথায় থাকবেন –

সাজেকে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের রিসোর্ট আছে যাতে আপনি নিশ্চিত্রে নিরাপদে পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে থাকতে পারবেন।

রুইলুই পাড়া/ সাজেক রিসোর্ট : এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত রিসোর্ট। যা সাজেকে অবস্থিত। যার দ্বিতীয় তলায় চারটি কক্ষ আছে। ভি আই পি কক্ষ ১৫,০০০ টাকা। অন্যটি ১২,০০০ টাকা। অপর দুইটি ১০,০০০ টাকা করে প্রতিটি। খাবারের ব্যবস্থা আছে। যোগাযোগ : খাগড়াছড়ি সেনানিবাসের গিরি থেবার মাধ্যমে বুকিং দিতে হবে। যার নম্বর : ০১৮৫৯০২৫৬৯৪। আরেকটি নম্বর : ০১৮৪৭০৭০৩৯৫। সাজেকের সকল রিসোর্টের নাম ও মোবাইল নাম্বার দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

 রুন্ময়ঃ – এটি সাজেকে অবস্থিত। এর নীচ তলায় তিনটি কক্ষ আছে। প্রতিটির ভাড়া ৪৪৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে ২ জন থাকতে পারবেন। ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। উপরের তলায় দুইটি কক্ষ আছে ভাড়া ৪৯৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে দুই জন থাকতে পারবেন। এটাতেও ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। চারটি তাবু আছে প্রতি তাবুতে ২৮৫০ টাকা দিয়ে চার জন থাকতে পারবেন। যোগাযোগ : ০১৮৬২০১১৮৫২।

 আলো রিসোরঃ – এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এটিতে মোট ৬ টি রুম আছে। ডাবল রুম ৪ টি ( ২টি খাট করে) । যার প্রতিটির ভাড়া ১০০০ টাকা। সিংগেল রুম ২ টি । প্রতিটির ভাড়া ৭০০ টাকা । যোগাযোগ : পলাশ চাকমা – ০১৮৬৩৬০৬৯০৬।

 ইমানুয়েল রিসোর্টঃ – এটিতে ৮ টি রুম আছে। সব গুলো কমন বাথ। রুম প্রতি ভাড়া ১৫০০ টাকা ও ৭০০ টাকা। ১৫০০ টাকার রুমে দুইটি ডাবল বেড আছে। ৬ জন থাকতে পারবেন। ৭০০ টাকার রুমে ২ টি বেড আছে। যোগাযোগ: ০১৮৬৫৩৪৯১৩০, ০১৮৬৯৪৯০৮৬৮( বিকাশ) এই রিসোর্টটা একদম সাধারণ একটা রিসোর্ট ,বন্ধু বান্ধব বা যাদের থাকা নিয়ে কোন অভিযোগ নেই তারা এখানে থাকতে পারেন মেয়ে বা পরিবারের জন্য এটা আদর্শ রিসোর্ট নয় ।

সারা রিসোর্টঃ – এটি রুইলুই পাড়ায় অবস্থিত। এর মালিক রুইলুই পাড়ার কারবারী মনা দাদা। এখাণে ৪ টি রুম আছে। তিনটি এটাচ বাথ। একটি কমন বাথ। প্রতি রুমের ভাড়া ১০০০ টাকা। ৪ টি নিলে ৩৬০০ টাকা। প্রতি রুমে একটি খাট আছে। ২ জন থাকা যাবে। রুম গুলো একটু ছোট। টিনের তৈরী। সোলার আছে। যোগাযোগ: ০১৫৫৪৫৩৪৫০৭।

রুইলুই পাড়া ক্লাব হাউজঃ – এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এখানে ১৫ জনের মত থাকতে পারবেন। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা করে দিতে হবে। নিজেরা রান্না করে খেতে পারবেন। এর কেয়ার টেকার মইয়া লুসাই দাদা সব ব্যবস্থা করে দিবে। লক্ষন নামেও একজন আছে, প্রয়োজনে আপনাদের সহযোগীতা করবে। এখানে দুইটি টয়লেট আছে। একটি ফ্রি ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যটির জন্য ২০০ টাকা প্রদান করতে হবে। যোগাযোগ : মইয়া লুসাই – ০১৮৩৮৪৯৭৬১২। লক্ষন – ০১৮৬০১০৩৪০২।

সাজেক রিসোর্ট ,রুন্ময় রিসোর্ট আর আলো রিসোর্ট আপনার পরিবার বলেন আর মেয়ে মানুষ বলেন সবার জন্যই পারফেক্ট । আর ইমানুয়েল রুইলুইপাড়া ক্লাব হাউজ এগুলো পরিবার বা মেয়েদের থাকতে অসুবিধা হতে পারে । এগুলো বন্ধু বান্ধব বা যাদের থাকা নিয়ে কোন অভিযোগ নেই যেখানে রাইত সেখানেই কাইত টাইপ তাদের জন্য পারফেক্ট ।

কোথায় খাবেনঃ

সাজেক রিসোর্ট, রিসোর্ট রুনময়,টেন্ট এবং আলো রিসোর্টে থাকলে খাবারের ব্যাবস্থা রিসোর্ট থেকেই হবে।ক্লাব হাউজে থাকলে সেখানকার কেয়ারটেকার কে দিয়ে খাবারের ব্যাবস্থা করতে পারবেন।এছাড়া যারা ক্যাম্পিং করবেন বা বাহিরে থাকবেন তারা মারুতি হোটেলসহ আরো দুএকটা আদিবাসী পরিচালিত হোটেলে খেতে পারবেন,তবে দুই ঘন্টা আগেই খাবার অর্ডার করতে হবে।খরচ হবে প্রতিবেলা ১৫০-২০০টাকা।রিসোর্ট রুনময় এবং আর্মি পরিচালিত ক্যান্টিনে অর্ডার করলেও ওরা খাবার করে দেবে তবে এখানে দাম তুলনামূলক একটু বেশি হবে।

খাবার ব্যাবস্থার জন্য পূর্বেই যোগাযোগ করে নিতে পারেন। মানুষ কম হলে ওইখানে গিয়েও করতে পারেন । ভাত + সবজি বললে রিসোর্টের তত্যাবধানে যিনি আছেন তিনি ব্যাবস্থা করতে পারেন মাছ/ মাংস পথে মাচালং বাজার থেকে নিয়ে গেলে ভাল হয়। সব চেয়ে ভাল হয় এক রাত সাজেক থাকলে ।

কিভাবে যাবনঃ

খাগড়াছড়ি থেকে আপনি তিন মাধ্যমে সাজেক পৌছাতে পারবেন । চান্দের গাড়ী,সিএনজি এবং মটরসাইকেলে ।

সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো খাগড়াছড়ি শহর থেকে জীপগাড়ি (লোকাল নাম চাঁন্দের গাড়ি) রিজার্ভ নিয়ে ঘুরে আসা । ভাড়া নিবে ৪৫০০-৫৫০০ টাকা । এক গাড়িতে ১৫ জন বসতে পারবেন । লোকসংখ্যা বেশি হলে অবশ্যই চান্দের গাড়ী নিয়ে মজা করতে করতে যেতে পারবেন । এক্ষেত্রে কথা হলো ৪-৫ হাজার টাকা নিবে যদি আপনি দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসেন কিন্তু আপনি যদি রাতে থাকেন সেক্ষেত্রে আমি আপনাকে দুইটা রাস্তা দেখিয়ে দিতে পারি ,এক সাজেক গিয়ে গাড়ী ছেড়ে দিবেন কিন্তু ড্রাইভারের নাম্বারটা রেখে দিবেন বলবেন ফোন দিলে যেন চলে আসে । দ্বিতীয় রাস্তাটা হলো সাজেকে রাতে থেকে তারপর যখন চলে আসবেন সেদিন দেখবেন অনেক চান্দের গাড়ী যাত্রী নামিয়ে খালী চলে যাচ্ছে সেগুলোতে কম দামেই্ শহরে চলে আসতে পারবেন ।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 26, 2018

সাজেক ভ্যালী – রাঙ্গামাটি, সম্পর্কে পর্যটকদের রিভিউ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.