লোহাগড়া মঠ – চাঁদপুর

চাঁদপুর শহরে ঐতিহাসিক অনেক  নিদর্শন আছে, কিন্তু পরিচর্যার অভাবে সেগুলোর বেশীরভাগই হারিয়ে গেছে, বাকিগুলো হারিয়ে যাবার পথে। যেমন নীলকুঠি এবং জমিদারবাড়ি সংরক্ষণের অভাবে একেবারে বিলীন হয়ে গেছে। অথচ ২০১৩ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এই জায়গা দুটি টিকে ছিল। যে দু’একটা ঐতিহাসিক স্থান টিকে আছে তাদের মধ্যে লোহাগড়া মঠ (Lohagor Moth) অন্যতম।

চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার চান্দ্রা বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে ‘লোহাগড়া’ গ্রামের মঠটি কিংবদন্তীর সাক্ষী হিসেবে এখনো দন্ডায়মান। পরম প্রতাপশালী জমিদার পরিবারের দু’ভাই ‘লোহা’ ও গহড়’ এতোই প্রভাবশালী ছিলো যে, এরা যখন যা ইচ্ছা তা-ই করতেন এবং তা প্রতিফলিত করে আনন্দ অনুভব করতেন। এই দুই ভাইয়ের নামানুসারে গ্রামের নাম রাখা হয় ‘লোহাগড়’।

ডাকাতিয়া নদীর কূলে তাদের বাড়ির অবস্থানের নির্দেশিকা স্বরূপ সুউচ্চ মঠটি নির্মাণ করেন। তাদের আর্থিক প্রতিপত্তির নিদর্শন স্বরূপ মঠের শিখরে একটি স্বর্ণদন্ড স্থাপন করেন। এই স্বর্ণদন্ডের লোভে মঠের শিখরে ওঠার প্রচেষ্টায় কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন বলে শোনা যায়। এই বৃহৎ স্বর্ণদন্ডটি পরবর্তীকালে ঝড়-তুফানে মঠ শিখর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নদীতে পড়ে যায় এবং নদী তটের জমি চাষ করার সময় একজন কৃষক পেয়েছিলেন বলে জানা যায়। লোকমুখে শোনা যায়, এই স্বর্ণদন্ডটি প্রায় আড়াই মণ ওজনের ছিলো।

জনৈক ব্রিটিশ পরিব্রাজক লোহাগড় গ্রাম পরিদর্শনে গেলে তাদের আভিজাত্য দেখে বিমুগ্ধ হন। কথিত আছে, ওই পরিব্রাজকের জন্যে নদীর কুল হতে তাদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা, যার প্রস্থ ২ হাত, উচ্চতা ১ হাত, দৈর্ঘ্য ২০০ হাত সিকি ও আধুলি মুদ্রা দিয়ে নির্মাণ করেন। (এটি বর্তমানে বিলুপ্ত) সাধারণ মানুষ এদের বাড়ির সামনে দিয়ে ভয়ে চলাফেরা পর্যন্ত করতো না। বাড়ির সামনে দিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে নৌকাগুলো নিঃশব্দে যাতায়াত করতে হতো।

লোহাগড়ের এই দুই ভাইয়ের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান। এখানে মাটির নিচে গহবর এখনো বিদ্যমান। মঠটি এখন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বহু মানুষ মঠটি দেখতে আসে।

 

বর্ষাকালে রাস্তার অবস্থা তুলনামূলক বেশী খারাপ এবং চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় শীতকাল এই জেলা ভ্রমণের জন্য সঠিক সময়। লোহাগড়া মঠে খুব ভোরবেলা রওনা দিলে রাস্তার পাশের খেজুর গাছ থেকে একদম ফ্রেশ খেজুর রস পেয়ে যেতে পারেন।

কিভাবে যাবেন

লোহাগড়া মঠ চাঁদপুর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যোগাযোগের ব্যবস্থা খারাপ হবার জন্য আপনাকে শহর (বড় স্টেশন) থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে ঐখানে পৌঁছাতে হবে, ভাড়া যাওয়া আসা মিলে ৪০০ টাকা, এর চেয়ে বেশী তারা চাইবে, কিন্তু আপনাকে দামাদামি করতে হবে।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 20, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.