লালবাগ কেল্লা – ঢাকা

পুরান ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী অঞ্চল লালবাগে ১৭ শ শতকে নির্মিত লালবাগ কেল্লা(Lalbagh Kella) অবস্থিত। লালবাগ কেল্লা বাংলাদেশের মোগল আমলের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন, যাতে একই সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টিপাথর, মার্বেল পাথর আর নানান রঙ-বেরঙের টালি। লালবাগ কেল্লা ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো ঐতিহাসিক নিদর্শনে এমন বৈচিত্র্যময় সংমিশ্রণ পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত।

লালবাগ কেল্লার নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র মুহাম্মদ আজম শাহ। তিনি বুড়িগঙ্গার তীরে এ প্রাসাদ-দুর্গ নির্মাণকাজে হাত দেন। পিতার নামানুসারে এর নাম রাখেন আওরঙ্গবাদ কেল্লা বা আওরঙ্গবাদ দুর্গ। পরবর্তী সময়ে নাম হয় লালবাগ কেল্লা। অনেকে মনে করেন, এ এলাকায় লাল গোলাপের বাগান ছিল। সেই থেকে এলাকার নাম এবং এলাকার নামে নামকরণ হয় লালবাগ কেল্লার।

তিনশ বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলা এই দুর্গ তার স্থাপত্য কৌশল, ঐতিহ্য আর সৌন্দর্যের কারণে এখনো তা জনসাধারণের কাছে দর্শনীয় স্থান। কেল্লার ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে কেল্লার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। লালবাগ কেল্লায় রয়েছে পাতাবাহার আর ঝাউগাছের সারি। রঙ্গন, গোলাপ, গাদাসহ রকমারি ফুলের গাছ।

লালবাগ কেল্লার তিনটি বিশাল দরজার মধ্যে যে দরজাটি বর্তমানে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া, সেই দরজা দিয়ে ঢুকলে বরাবর সোজা চোখে পড়বে পরী বিবির সমাধি। লালবাগ কেল্লা চত্বরে আরো রয়েছে দরবার হল ও হাম্মামখানা, উত্তর-পশ্চিমাংশের শাহি মসজিদ। ঢাকায় এত পুরোনো মসজিদ খুব কমই আছে।

লালবাগ কেল্লার দরবার হল ও হাম্মামখানাটি বর্তমানে সর্বসাধারণের দেখার জন্য একটি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে, যা পূর্বে নবাব শায়েস্তা খাঁর বাসভবন ছিল আর এখান থেকেই তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন।

জাদুঘরটিতে দেখার মতো অনেক কিছুই রয়েছে। মোগল আমলের বিভিন্ন হাতে আঁকা ছবির দেখা মিলবে সেখানে, যেগুলো দেখলে যে কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারবে না। জাদুঘরে রয়েছে মোগল আমলের পাণ্ডুলিপি, মৃৎশিল্প, কার্পেট, হস্তলিপি ও রাজকীয় ফরমান। শায়েস্তা খাঁর ব্যবহার্য নানান জিনিসপত্রও সেখানে সযত্নে আছে। তা ছাড়া তৎকালীন বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, পোশাক, সে সময়কার প্রচলিত মুদ্রা রয়েছে জাদুঘরে। তিনশ বছরের পুরোনো স্থাপনা ও সে সময়ের সম্রাটের ব্যবহৃত নানা জিনিস দেখতে পারাটা সৌভাগ্যের, সে সঙ্গে বিস্ময়েরও বটে। লালবাগ কেল্লায় সম্রাটের ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখতে দেখতে আপনিও হারিয়ে যাবেন মোগল শাসকদের আমলে।

লালবাগ কেল্লা খোলার ও বন্ধের সময়সূচি –

গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেল্লা খোলা থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রোববার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধদিবস কেল্লা বন্ধ থাকে। এ ছাড়া সব সরকারি ছুটির দিন লালবাগ কেল্লা বন্ধ থাকে।

লালবাগ কেল্লার টিকেট মূল্যঃ

কেল্লার মূল ফটকের পাশে টিকেট কাউন্টার থেকে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দিয়ে টিকেট নিয়ে কেল্লার ভিতরে প্রবেশ করতে হয়।

বাংলাদেশী দর্শনার্থীদের জন্য জনপ্রতি ১০.০০ টাকা এবং বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য জনপ্রতি ১০০.০০ টাকা ।

৫ বছর বয়সের নীচে বাচ্চাদের জন্য কোন টিকেট লাগবেনা।

বর্তমানে লালবাগ কেল্লা পরিচিতি একটি গাইড বই পাওয়া যায় যার মূল্য ৩১.০০ টাকা (বাংলায় সংকলিত)। পূর্বে বিদেশী পর্যটকদের জন্য ইংরেজী সংকলন লালবাগ কেল্লা গাইড পাওয়া যেত, যা বর্তমানে পাওয়া যায় না।

লালবাগ কেল্লা কিভাবে যাবেনঃ

লালবাগ কেল্লায় যেতে হলে, গুলিস্তান গোলাপ শাহ্ এর মাজার থেকে টেম্পুযোগে মাত্র ৬ টাকায় যাওয়া যাবে লালবাগ কেল্লায়। ইসলামবাগ ও কিল্লার মোড়গামী দু’ধরনের টেম্পো দিয়ে দিন রাত সব সময় যাওয়া যায় লালবাগ কেল্লায়। এছাড়াও নিউমার্কেট কিংবা গুলিস্তান এলাকা থেকে সরাসরি রিক্সায় যাওয়া যায় লালবাগ কেল্লায়। ভাড়া পড়বে ৩০-৪০ টাকা।

আর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সামনে (শাহবাগ) থেকে ১০ টাকা ভাড়ায় বিশেষ বাস সার্ভিস রয়েছে লালবাগ কেল্লা পরিদর্শনে আগ্রহীদের জন্য। এছাড়াও যারা কম টাকায় কেল্লা পরিদর্শন করতে চান তারা সদরঘাট ভায়া গুলিস্তান গোলাপ শাহ্ এর মাজার হয়ে যেতে পারেন। ভাড়া লাগবে মাত্র ৫ টাকা। গুলিস্তান থেকে ভাড়া লাগবে মাত্র ২ টাকা। তারপর ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে ৫ মিনিট পায়ে হেঁটে অথবা ১০ টাকা রিকশা ভাড়ায় যাওয়া যাবে লালবাগ কেল্লায়।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: আবদুর রহমান,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: মার্চ 5, 2018

লালবাগ কেল্লা – ঢাকা, সম্পর্কে পর্যটকদের রিভিউ।

  1. বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এবং লালবাগ কেল্লায় যেতে চাচ্ছি।
    এক সাথে যেন দুইটাই দেখা হয়ে যায়। কম খরচে।
    হযরত শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কিভাবে যাব?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.