মনিপুরী রাজবাড়ি – সিলেট

সিলেট নগরের মির্জাজাঙ্গালে অবসি’ত মনিপুরী রাজবাড়ী(Manipuri Rajbari) প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নির্দশন। রাজবাড়ীর নির্মাণ শৈলী এ অঞ্চলের কৃষ্টি-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাজা গম্ভীর সিংয়ের স্মৃতিধন্য এই বাড়িটি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে স্বকীয়তা হারালেও আকর্ষণ হারায়নি। বাড়ীর প্রধান ফটক, সীমানা দেয়াল, মনোহর কারুকাজের সিড়ি ও বালাখাঁনার ধ্বংসাবশেষ বর্তমান মনীপুরী রাজবাড়ীর স্মৃতিসম্বল। পর্যটকদের কাছেও রয়েছে বাড়িটির বিশেষ কদর। ঊনবিংশ শতাব্দীতে সিলেট নগরীর মির্জাজাঙ্গালে রাজবাড়ীটি স্থাপিত হয়। তৎকালীন মনিপুরী রাজ্যের তিন সহোদর রাজা চৌর্জিৎ সিং, মার্জিত সিং ও গম্ভীর সিং রাজবাড়ীটি তৈরী করে এখানে বসবাস করেন।

পরে চৌর্জিৎ সিং ও মার্জিত সিং কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ এলাকায় বসতী স্থাপন করলেও রাজা গম্ভীর সিং থেকে যান মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীতে। ১৮২৬ সালে বৃটিশ সরকারের সহযোগিতায় বার্মার সাথে যুদ্ধ করে মনিপুর রাজ্য পুরুদ্ধারের আগ পর্যন- রাজা গম্ভীর সিং সপরিবারে এখানেই অবস্থান করেন।

ইতিহাসে ১৮১৯-১৮২৬ সাল মনিপুরীদের কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। ১৮২২ সালে মনিপুরী রাজ্যের সাথে বার্মার যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ লোক মারা যায়। অসংখ্য মনিপুরী পরিবার নিজ আবাসভূমি ছেড়ে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়। তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজা চৌর্জিৎ সিংও কাছাড়ে পালিয়ে যান। রাজ্যভার গ্রহণ করেন তার সহোদর মার্জিত সিং। এক পর্যায়ে মার্জিত সিং বার্মিজদের কাছে পরাজিত হন। পরিশেষে চৌর্জিৎ, মার্জিত ও গম্ভীর তিন ভাই একত্রে পুনরায় চলে আসেন মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীতে।

তৎকালীন বৃটিশ উপনিবেশ শাসকদের আশ্রয়ে এখানেই তারা বসতী স্থাপন করেন। বৃটিশ সরকারের অনুরোধে সিলেটে সশস্ত্র খাসিয়াদের দমনে মনিপুরী সৈন্যবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন সিলেটে অবস্থান করার কারনে মনিপুরিদের সাংস্কৃতিক সম্ভারের নানা দিক এ অঞ্চলে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

মনিপুরী সম্প্রদায়ের ইতিহাস-আবেগ-অনুভূতির অন্যতম স্থান মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীর সংস্কারের জন্য আজঅবধি কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। রাজা কতৃক নির্মিত প্রাসাদের তিন চতুর্থাংশের কোন অসি-ত্ব নেই। বর্তমানে মনিপুরী ঠাকুর ও ব্রাহ্মণ পরিবারের লোকজন বংশ পরম্পরায় বসবাস করছেন রাজবাড়ীতে।

পূর্বসুরী রাজার রেখে যাওয়া নানা বস্তুকে স্বর্ণালী স্মৃতি হিসেবে ধারণ করে আছে পরিবারগুলো। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- একমণ ওজনের মন্দিরের একটি ঘন্টা যার গায়ে মনিপুরী ভাষায় লেখা আছে, ‘‘শ্রীহট্ট কুনোঙ্গী শ্রী মহাপ্রভুদা শ্রীলশ্রী পঞ্চযুক্ত মনিপুরে স্বরচন্দ কীর্ত্তি সিংহ মহারাজন্য কৎখিবী সরিকনি ইতিশকাব্দা ১৮০০ তারিখ ১৮ জৈষ্ঠ্য’’।

দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষার্থে এই সুপ্রাচীন, ঐতিহাসিক রাজবাড়ির সংস্কার ও পুরাকীর্ত্তির সংরক্ষনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। এতে করে এদিকে যেমন মনিপুরী সম্প্রদায়ের গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তির স্থান রক্ষা হবে তেমনি অগনিত কাল টিকে থাকবে স্থাপত্যশৈলীর এই অনুসঙ্গ।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 27, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.