সিরাজগঞ্জ জেলায় উল্লাপাড়া উপজেলায়, প্রায় পাঁচশ বছরের পুরানো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নবরত্ন মন্দির। উল্লপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নে এই মন্দিরের অবস্থান। হুবহু কান্দজীর মন্দিরের মত দেখতে এ মন্দিরটি ষোড়শ বা স্বপ্তদশ শতকে নির্মিত হয়েছে বলে জানা যায়। পোতাজিয়ার প্রভাবশালী রায় পরিবারের পারিবারিক মন্দির হিসেবে নবরত্ন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পোতাজিয়ার জমিদার চন্ডিপ্রসাদ রায়’র বংশধররা এই নবরত্ন মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ নবরত্ন মন্দির স্থানীয়ভাবে দোলমঞ্চ নামে পরিচিত।
কারুকার্যমন্ডিত নবরত্ন মন্দিরটি ৩ তলা বিশিষ্ট। এই মন্দিরে আশে পাশে আরও তিনটি মন্দির রয়েছে। পোড়ামাটির ফলক সমৃদ্ধ ৯টি চূড়া থাকায় এটিকে নবরত্ন মন্দির বলা হয়। বর্তমানে ৯টি চূড়ার প্রায় সবগুলোই ধ্বংসপ্রায়। একসময় মন্দিরের মূল স্তম্ভের উপরে পোড়ামাটির সুশোভিত চিত্র ফলক। ফুল, ফল, লতাপাতা আর দেবদেবীর মূর্তি খচিত এই ফলক মর্ধ্যযুগীয় শিল্পকর্মে পরিপূর্ণ ছিল। সংস্কার ও কালের বিবর্তনে ওইসব এখন নেই বললেও চলে।
বর্গাকার এই মন্দিরের আয়তন প্রায় ১৬ স্কয়ার বর্গমিটার। বর্গাকার মন্দিরের মূল কক্ষটি বেশ বড়। নীচতলায় ২টি বারান্দা বেষ্টিত একটি গর্ভগৃহ। এর বারান্দার বাইরের দিকে ৭টি এবং ভিতরের দিকে ৫টি প্রবেশ পথ। দিনাজপুরের কান্তজি মন্দিরের সঙ্গে প্রবেশ পথের সংখ্যার পার্থক্য দিয়ে এই মন্দিরকে সহজে চিনে নেয়া যায়।গর্ভগৃহের পূর্ব ও দক্ষিন দিকে ২টি প্রবেশ সুরঙ্গ পথ আর মন্দিরের ২য় তলায় কোন বারান্দা নেই। মন্দিরের প্রবেশ পথ পূর্ব দিকে, কুঠুরীর উত্তরে ওপরে উঠার সিড়ি। ভিতর থেকে মূল ভবনের উপরের ছাদ গোলাকার গম্বুজ।
এ মন্দিরের প্রতিটি ইট ঘিয়ে ভেজে তৈরি করা হয়েছিল বলে স্থানীয়ভাবে শোনা যায়। নবরত্ন মন্দিরটি ‘সংরক্ষিত ঐতিহাসিক স্থান’ হিসেবে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ গ্রহণ করে ১৯৮৭ সালে কিছু সংস্কার করেছে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে টিআর ট্রাভেলস ও এসআর ট্রাভেলসের এসি বাস যায় ভাড়া ৫শ’ থেকে সাড়ে পাঁচশ টাকা। এছাড়া একই জায়গা থেকে টিআর ট্রাভেলস, এসআর ট্রাভেলস, শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শাহ সুলতান পরিবহন, বিআরটিসির বাস চলে বগুড়ার পথে। ভাড়া ৩শ’ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা।
ঢাকা থেকে ওই মন্দিরে যেতে হলে সিরাজগঞ্জ রোড গোল চত্বর পেরিয়ে বগুড়া রোডে হাটিকুমরুল বাজারে নামতে হবে। সিরাজগঞ্জ রোড গোল চত্বর থেকেও ভ্যান যোগে সরাসরি ওই মন্দির প্রাঙ্গণে যাওয়া যায়। সিরাজগঞ্জ রোড চত্বরে নামলে সেখান থেকে কম দামে স্থানীয় প্রসিদ্ধ গামছা ও লুঙ্গি কিনে থাকেন অনেক পর্যটক। পাশেই রয়েছে ফুড ভিলেজ-২ ও অন্যান্য বিভিন্ন হোটেল, সেখান থেকে মিষ্টি ও দই কেনা যাবে।
আশেপাশে হাইওয়েতে কমদামের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা আছে। সিরাজগঞ্জে অবস্থিত রবীন্দ্রনাথের কুঠি বাড়ি, বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক, ইলিয়ট ব্রিজ, যমুনা পাড়ের হার্ড পয়েন্ট ও চায়না বাঁধসহ আরও দর্শণীয় স্থান দেখতে হলে রাত্রিযাপন করতে হবে সিরাজগঞ্জ শহরে।
এয়ারকন্ডিশনড ও সাধারণ মানের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল রয়েছে সিরাজগঞ্জ শহরে। ঢাকাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে সকাল সকাল রওয়ানা দিয়ে দিনে গিয়ে দিনে ফিরেও আসা যাবে।