ধনবাড়ী মসজিদ – টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি উপজেলা ও পৌরসভায় ধনবাড়ি নওয়াব শাহী জামে মসজিদ বা ধনবাড়ী মসজিদ (Dhanbari Mosque/Masjid) অবস্থিত। প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের ধারক ও বাহক টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি নওয়াব শাহী জামে মসজিদ ইসলামী ঐতিহ্য ও কালের সাক্ষী হয়ে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। এটি ধনবাড়ী উপজেলার ঐতিহাসিক স্থাপত্যের অন্যতম নির্দশন।

ষোড়শ শতাব্দীতে সেলজুক তুর্কি বংশের ইসপিঞ্জার খাঁ ও মনোয়ার খাঁ দুই ভাই ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটির প্রথম খণ্ড (এক কক্ষ বিশিষ্ট মসজিদ) নির্মাণ করেন। জনশ্রুতিতে জানা যায়, সম্রাট আকবরের সময় এ দুই ভাই ধনবাড়ির অত্যাচারী জমিদারকে পরাজিত করার পর এ অঞ্চলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।

বাংলাভাষার প্রথম প্রস্তাবক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, যুক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ধনবাড়ির বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী প্রায় ১১৫ বছর আগে এ মসজিদটি সম্প্রসারণ করে আধুনিক রূপ দেন।

মসজিদের ভেতরের দেয়ালে কড়ি পাথরের লতাপাতা আঁকা ও মোজাইক  সহ অসংখ্য রঙিন নকশা পরিলক্ষিত হয় প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন এ  মসজিদটিতে। মসজিদটি দেয়ালের বাইরের অংশেও রয়েছে সিমেন্ট আর কড়ি পাথরের টোরাকাটা নকশা।

মসজিদটি প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপরে অবস্থিত। সংস্কারের আগে মসজিদটি ছিল আয়তাকার। তখন এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৩.৭২ মিটার (৪৫ ফুট) এবং প্রস্থ ছিল ৪.৫৭ মিটার (১৫ ফুট) কিন্তু সংস্কারের পর মসজিদটির আকার রীতিমতো পরিবর্তিত হয়ে যায়।

বর্তমানে এটি একটি বর্গাকৃতির মসজিদ এবং সাধারণ তিনগম্বুজ বিশিষ্ট আয়তাকৃতির মোঘল মসজিদের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। সংস্কারের পর মসজিদের প্রাচীনত্ব কিছুটা লোপ পেলেও এর চাকচিক্য ও সৌন্দর্য অনেক বেড়েছে। সুন্দর কারুকার্যময় এ মসজিদের পূর্বদিকে বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলানযুক্ত তিনটি প্রবেশপথ, এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণে আরো একটি করে সর্বমোট পাঁচটি প্রবেশ পথ রয়েছে।

মসজদিটির চর্তুদিক থেকে ৪টি প্রবেশ পথ এবং ৯টি জানালা রয়েছে। ৩৪টি ছোট ও বড় গম্বুজ রয়েছে। বড় ১০টি মিনারের প্রত্যেকটির উচ্চতা ছাদ থেকে প্রায় ৩০ ফুট সুউচ্চ। মসজিদের দোতলার মিনারটির উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। মসজিদটির ৫ ফুট উচ্চতা এবং ৩ ফুট প্রস্থের মেহরাব (যেখানে বসে ইমাম খুতবা পাঠ করেন) দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং সুপ্রাচীন।

মসজিদটির অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য হলো সুউচ্চ ৩০ ফুট উচ্চতার মিনারের চূড়ায় ১০টি তামার চাঁদ মিনারের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

মসজিদের সংরক্ষিত কক্ষে শোভা পাচ্ছে ১৮টি হাড়িবাতি। যা নারিকের তৈল দ্বারা আলোর কাজে ব্যবহৃত হতো। রয়েছে মোঘল আমলে ব্যবহৃত ৩টি ঝাড়বাতিও।

মসজিদ নির্মাণে চুন, সুরকি, সাদা সিমেন্ট, কড়ি পাথর, লোহার খাম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। এ মসজিদের পাশেই রয়েছে শান বাঁধানো ঘাট ও কবরস্থান। যেখানে দাফন করা হয়েছে নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী।

মসজিদর পাশে রয়েছে ৭ বিঘা আয়তনের এক বিশাল দীঘি এবং দিঘির অন্য পাড়ে অবস্থিত ধনবাড়ি নবাব মঞ্জিল। নবাব নওয়াব আলী মৃত্যুর আগে তার এ স্টেট ওয়াকফ করে যান। ওয়াকফকৃত সম্পদেই মসজিদ ও পাশে অবস্থিত মাদ্রাসা, ঈদগাহ ইত্যাদি পরিচালিত হয়ে আসছে।

সুপ্রাচীন এ মসজিদটিতে একসঙ্গে ২০০ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাচীন আমলের মানুষের ইবাদত-বন্দেগি ও ইসলামি ঐতিহ্যের স্মৃতিচিহ্ন ধারণকারী ধনবাড়ি নওয়াব শাহী মসজিদটি ইসলামী ঐতিহ্য ও কালের সাক্ষী এবং সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা-ধনবাড়ী সরাসরি বাস সার্ভিস চালু আছে। বিনিময়, মহানগর কিংবা শুভেচ্ছা পরিবহনে ধনবাড়ী  পৌঁছাতে পারবেন  ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা হতে পারে।

ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে অনেকটাই কাছে এ মসজিদ, ইচ্ছে করলে হেঁটে কিংবা রিকশায় পৌঁছাতে পারেন সেখানে। বাসস্ট্যান্ড থেকে পায়ে হেটে ৫/৭ মিনিট লাগবে ধনবাড়ি নওয়াব শাহী জামে মসজিদ / ধনবাড়ী মসজিদ ।

তথ্যসূত্র - https://goo.gl/bQfkxp

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: আবদুর রহমান,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 6, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.