তাজহাট জমিদারবাড়ী – রংপুর

তাজহাট জমিদারবাড়ী(Tajhat Zamidarbari) ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম স্মারক। ঐতিহাসিক প্রাসাদটিকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস। দেশের সুবিশাল ও অনন্য সুন্দর স্থাপনাগুলোর মধ্যে তাজহাট জমিদারবাড়ী অন্যতম। বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। পর্যটকদের জন্য এটি আকর্ষণীয় স্থান। ঐতিহাসিক সংগ্রহশালার প্রাসাদটি ভ্রমণপ্রিয় মানুষকে মুগ্ধ করবে।

বাংলাদেশজুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। অপূর্ব স্থাপত্যিক নিদর্শন আর জমিদারবাড়ীর ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি জড়িয়ে থাকা ইতিহাস সংবলিত তাজহাট জমিদারবাড়ীটি চমত্কার একটি দর্শনীয় স্থান। তাজহাট জমিদারবাড়ী ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম স্মারক। ঐতিহাসিক প্রাসাদটিকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস। দেশের সুবিশাল ও অনন্য সুন্দর স্থাপনাগুলোর মধ্যে তাজহাট জমিদারবাড়ী অন্যতম। স্থাপত্যশৈলীতে ঢাকার আহসান মঞ্জিলের সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে। বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। রংপুর শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে তাজহাট গ্রামে অবস্থিত। প্রাসাদটি বিংশ শতাব্দীর মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায় নির্মাণ করেন। মহারাজা গোপাল রায় ছিলেন হিন্দু ধর্মের অনুসারী এবং একজন স্বর্ণকার ব্যবসায়ী। পর্যটকদের জন্য এটি আকর্ষণীয় স্থান। ঐতিহাসিক সংগ্রহশালার প্রাসাদটি ভ্রমণপ্রিয় মানুষকে মুগ্ধ করবে।

উত্তরবঙ্গের রংপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অন্যতম স্মারক তাজহাট জমিদারবাড়ী। যদিও তাজহাট এখন পরিচিত জমিদারবাড়ীটির জন্য কিন্তু অতীতে তাজহাট বিখ্যাত ছিল সুন্দর ‘তাজ’ বা মুকুটের কারণেই। এ ‘তাজ’ ভারতবর্ষের প্রায় সব রাজা ও জমিদারের কাছে ছিল প্রিয়। প্রাসাদটিতে অসংখ্য পুরাকীর্তি ও প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন রয়েছে। তাজহাট জমিদারবাড়ীর ওই প্রাসাদটি প্রায় ২১০ ফুটের মতো প্রশস্ত ও চার তলার সমান উঁচু। এর গঠনশৈলী প্রাচীন মুঘল স্থাপত্যের মতো। প্রাসাদের মধ্যখানে বিশাল একটি গম্বুজ ও দুই পাশে ছড়িয়ে থাকা প্রধান ইমারতের উত্তর অংশের মাঝামাঝি ২য় তলায় ওঠানামার জন্য সুন্দর কাঠের তৈরি ২২টি ধাপ বিশিষ্ট সিঁড়ি রয়েছে। এ ছাড়া প্রাসাদটির পেছনের দিক থেকে ২য় তলায় ওঠানামার জন্য লোহার নকশাকৃত ঝুলন্ত মজবুত সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়িগুলোর রেলিং দেখতে অসম্ভব সুন্দর। ফুলগাছের মতো দেখা যায়। প্রাসাদটির সামনে থেকে ২য় তলায় ওঠানামার জন্য একটি বিরাট গ্যালারির মতো সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়িটিকে তিনটি স্তরে বিভক্ত দেখা যায়। প্রথম স্তরে ১টি ধাপ বিরাজমান, ২য় স্তরে ওঠার সময় একটু সমান অবস্থান নেমে আবার ১৪টি ধাপ অতিক্রম করে একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন আয়তাকার প্লাটফরম, যা দ্বিতীয় তলার ছাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যাকে ৩য় স্তর হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। দালানগুলো দেখতে একটা মসজিদের অবয়ব। তবে রাজবাড়ী যেই দিক থেকে বাংলাদেশের অন্য সব প্রাসাদের থেকে আলাদা তা হলো এর সিঁড়িগুলো। সর্বমোট ৩১টি সিঁড়ি আছে, যার প্রতিটাই ইতালীয় ঘরানার মার্বেল পাথরে তৈরি। সিঁড়ি থেকে উঠে জাদুঘর পর্যন্ত পুরোটাই একই পাথরে তৈরি।

ঐতিহাসিক এই জমিদারবাড়ীটির ইতিহাস বেশ বৈচিত্র্যময়। কথিত আছে মহারাজা গোবিন্দ লালের পুত্র গোপাল লাল তাজহাট জমিদারবাড়ীটির নির্মাতা। মূলত এ বংশের প্রতিষ্ঠাতা মান্নানলাল রায় সুদূর পাঞ্জাব থেকে রংপুরের বিশিষ্ট সমৃদ্ধ স্থান মাহিগঞ্জে স্বর্ণ ব্যবসা করার জন্য এসেছিলেন। গোবিন্দলাল ১৮১৯ সালে জমিদারবাড়ীর উত্তরাধিকারী হন। তিনি ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা ও খুব জনপ্রিয় শাসক ছিলেন। তার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অবদানের জন্য ১৮৮৫ সালে ‘রাজা’, ১৮৯২ সালে ‘রাজা বাহাদুর’, ১৮৯৬ সালে ‘মহারাজা’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তিনি এখানে হীরা, জহরত এবং স্বর্ণালঙ্কারের ব্যবসা করতেন। প্রথমে তিনি নানা ধরনের নামিদামি হীরা, মানিক জহরতখচিত তাজ বা টুপির ব্যবসা করেছেন। ওই তাজ বিক্রির লক্ষ্যে এখানে হাট বসে, যা পরবর্তীতে বিরাট প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তার এ ব্যবসায়ের প্রসারের ফলে এখানে হীরা-জহরতের হাট বসত। এ তাজ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে জমিদারবাড়ীর নামকরণ করা হয় তাজহাট জমিদারবাড়ী। প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছে চমত্কার এই স্থাপনা তৈরিতে।

জাদুঘর :
১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রাসাদটিকে সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০৫ সালে রংপুর জাদুঘরকে সরিয়ে এ প্রাসাদের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে আসে। তাজহাট জমিদারবাড়ীর প্রাসাদ চত্বরে রয়েছে বিশাল খালি মাঠ, গাছের সারি এবং প্রাসাদের দুই পাশে রয়েছে দুটি পুকুর। মার্বেলের সিঁড়ি বেয়ে জাদুঘরে উঠলেই রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী কক্ষ, যাতে রয়েছে দশম ও একাদশ শতাব্দীর টেরাকোটা শিল্পকর্ম।

এ ছাড়া এখানে বিভিন্ন হস্তলিপি, পুরনো পত্রিকা, শিবপত্নী পার্বতীর মূর্তি, মাটির পাত্র, বিভিন্ন পোড়ামাটির ফলক, রাজা-বাদশাহদের ব্যবহূত জিনিসপত্র, মৃত্পাত্র, সরলা দেবীর ব্যবহূত সেগুন কাঠের তৈরি বাক্স, ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন পোড়ামাটির ফলক রয়েছে এখানে। এ ছাড়াও রয়েছে নারী মূর্তি, লোহার দ্রব্যাদি, সাঁওতালদের ব্যবহূত তীর, লাল পাথরের টুকরো, পাহাড়পুর বিহার থেকে সংগৃহীত নারী মূর্তি, পাথরের নোড়া, বদনা, আক্রমণাত্মক যোদ্ধার মূর্তি। মহাভারত, রামায়ণ, গাছের বাঁকলে লেখা সংস্কৃত হস্তলিপি, তুলট কাগজে লেখা হস্তলিপি, কবি শেখ সাদী ও বাদশাহ নাসির উদ্দিনের স্বহস্তে লেখা কোরআন শরিফ এবং ছোট্ট কোরআন শরিফও রয়েছে।

ভ্রমণ পিপাসুদের জেনে রাখা প্রয়োজন কখন জমিদারবাড়ীটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। তাজহাট জমিদারবাড়ী গ্রীষ্মকালে বেলা ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা এবং শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এ ছাড়া রবিবার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ দিবসসহ সরকারি সব ছুটির দিনে জমিদারবাড়ী জাদুঘর বন্ধ থাকে। প্রাসাদ চত্বরে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে চাইলে গাড়ির জন্যও নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে।

অবস্থান

তাজহাট রাজবাড়ী বাতাজহাট জমিদারবাড়ী বাংলাদেশের রংপুর শহরের অদূরে তাজহাট গ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক প্রাসাদ। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। রংপুরের পর্যটক ছাড়াও সারা দেশের অসংখ্য পর্যটকের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান। রাজবাড়ীটি রংপুর শহর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

কোথায় থাকবেন

রংপুরে অবস্থানের জন্য সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। রংপুরে ভালো হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল শাহ আমানত, হোটেল গোল্ডেন টাওয়ার, হোটেল দি পার্ক, হোটেল তিলোত্তমা, হোটেল বিজয়, আরডিআরএস।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে রংপুর যাওয়ার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম গ্রীন লাইন এবং টি আর ট্রাভেলস পরিবহন। এ ছাড়াও এ রুটে এস আর, শ্যামলী, হানিফ, কেয়াসহ আরও বেশ কয়েকটি বাস চলাচল করে। ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ছাড়ে এসব বাস। ভাড়া পড়বে ৬০০-১১০০ টাকা। পাশাপাশি ট্রেনেও ভ্রমণ করা যেতে পারে। সেখানে যে কোন অটোকে তাজহাট জমিদারবাড়ী বললেই নিয়ে যাবে।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: ভ্রমণ পাগল,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 23, 2018

তাজহাট জমিদারবাড়ী – রংপুর, সম্পর্কে পর্যটকদের রিভিউ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.