বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা – ঢাকা

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা(Bangladesh Jatio Chiriakhana) কিংবা ঢাকা চিড়িয়াখানা যে নামেই ডাকা হোক না কেন এটি দেশের প্রাচীন এবং সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখান। রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র হতে প্রায় ১৬ কিঃমিঃ দূরে মিরপুরে আবস্থিত এই চিড়িয়াখানাটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৫০ সালে হাইকোর্ট চত্বরে জীবজন্তুর প্রদর্শনশালা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় চিড়িয়াখানাটি কালের বিবর্তনে এবং বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে আজকের এই রুপ লাভ করেছে।

সুনিবিড় ছাড়াঘেড়া এ ঢাকা চিড়িয়াখানার আয়তন প্রায় ৭৫ হেক্টর।যার মধ্যে  ১৩ হেক্টরের দুটি লেক আছে । চিড়িয়াখানা তথ্যকেন্দ্র হতে প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায়, বর্তমানে ঢাকা চিড়িয়াখানায় ১৯১ প্রজাতির ২১৫০টি প্রাণী রয়েছে। জনসাধারণের বিনোদন, দূর্লভ, বিলুপ্তপ্রায় বন্য প্রাণি সংগ্রহ ও প্রজনন, প্রাণি বৈচিত্র সংরক্ষণ, শিক্ষা, গবেষণা এবং এ বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধি ঢাকা চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য।

বেঙ্গল টাইগারই ঢাকা চিড়িয়াখানার প্রধান আকর্ষণ। চিড়িয়াখানায় নানা রকম দেশী বিদেশী জীব-জানোয়ার ছাড়াও রয়েছে কয়েকশ প্রজাতির পাখি। রয়েছে আধাপ্রাকৃতিক লেক, লেকের উপর বিশালকায় পেলিক্যান পাখি। তার পাশে দেখা যায় প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঙ্গল টাইগার ও সিংহ। হরেকরকম পাখির মধ্যে রয়েছে ফ্লেমিংগো, রঙিন ফিজ্যাণ্ট, বিলুপ্তপ্রায় কুড়া, কাল শকুন এবং শঙ্খ চিল।

প্রবেশ পথেই চোখে পড়ে বানরের খাঁচা। ছোট-বড় অসংখ্য বানরের বাঁদরামি দেখতে দেখতে কখন যে সময় পার হয়ে যায় তা টেরই পাওয়া যায়না। সামনে এগুলেই হাতের বামে পড়বে বিশালাকায় এভিয়ারি। লম্বা পা আর বাঁকানো ঠোঁটের ফ্লেমিংগোর দেখা মেলে এখানেই। আরো রয়েছে কানিবক, পানকৌড়ি ও মাছরাঙার মত পাখি। বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারের (রয়েল শব্দটি বৃটিষদের দেয়া) আগেই দেখা মিলবে ভারতীয় সিংহের সাথে। সিংহের খাঁচা পেরোলেই বাঘ ও ভালুকের খাঁচা। রয়েছে চিতার (Cheeta) মত দ্রুতগতিসম্পন্ন প্রাণি। এ তো গেল চিড়িয়াখানার মধ্যাঞ্চলের কথা। উত্তরে রয়েছে উত্তর লেক, তার পাশেই প্রাকৃতিক পরিবেশে রাখা সুন্দরবনের বাঘ, পাশে সিংহ। কৃত্রিম জলাশয়ে রয়েছে জলহস্তি।

চিড়িয়াখানার উত্তর-দক্ষিণে লম্বাটে এলাকাজুড়ে রয়েছে ঘোড়া আকৃতির ওয়াটার বাক্ , জেব্রা সহ আরো কিছু প্রাণি। রয়েছে এদেশ থেকে বিলুপ্ত নীলগাই। প্রাণি জাদুঘরে আছে ২৪০ প্রজাতির স্টাফিং করা জীব-জন্তু-পাখি। একেবারে দক্ষিণে আছে দক্ষিণ লেক, তার মাঝে বাবলা দ্বীপ। পাশেই কেনিয়ার এক শিংওয়ালা গন্ডার। সঙ্গী হারিয়ে এখন সে বড় নিঃসঙ্গ। বাবলা দ্বিপের উন্মাতাল হাওয়া তার মনে বিন্দুমাত্র দোলা দেয়না। শিম্পাঞ্জীর দেখা মিলবে এখানেই। নারী শিশু সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এই শিম্পাঞ্জী। শক্ত গ্রীল ধরে লাফালাফি আর সঙ্গীর মাথার উকুন বেছেই কাটছে সময়।

চিড়িয়াখানায় আছে হাঁসজাতীয় নানা পাখি, লাভ বার্ড, মুনিয়া, উটপাখি, কেশোয়ারী ইত্যাদি। বের হওয়ার পথে দেখা যায় সুন্দরবনের প্রকৃতিক পরিবেশে চিত্রল হরিণ।

খোলা-বন্ধের সময়সূচীঃ

গ্রীষ্মকালীন —— ১ লা এপ্রিল থেকে ৩০ শে সে্প্টেম্বর —– সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা

শীতকালীন —— ১লা অক্টোবর থেকে ৩১ শে মার্চ —— সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা

সাপ্তাহিক বন্ধ: ঢাকা চিড়িয়াখানা প্রতি রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে।

টিকেট মূল্যঃ

  • এখানে প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা।
  • প্রবেশ দ্বারে মোট ৪টি কাউন্টার রয়েছে।
  • এছাড়া প্রাণী যাদুঘরে প্রবেশ ফি প্রতিজন ২ টাকা, হাতি প্রমোদ আরোহন ৫ টাকা, ঘোড়া প্রমোদ আরোহন ৩ টাকা।
  • চিড়িয়াখানা কর্তৃকপক্ষ বরাবর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আবেদন করলে শিক্ষার্থী শিক্ষা সফরে ৫০% থেকে ১০০% পর্যন্ত ছাড় দেয়া হয়।
  • এতিম ও মানসিক, শারিরীক প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১০০% পর্যন্ত ছাড় দেয়া হয়।
  • ০ থেকে ২ বৎসরের বাচ্চাদের প্রবেশের ক্ষেত্রে টিকেট সংগ্রহ করতে হয় না।

পিকনিক স্পটঃ

উৎসব ও নিরিবিলি পিকনিক স্পট সারাদিন ব্যবহারের জন্য যথাক্রমে ২,০০০ টাকা ও ১,০০০ টাকা চার্জ দিতে হয়।

দর্শনার্থী করণীয়ঃ

  • প্রানীদের প্রতি দয়াশীল হতে হয়।
  • চিড়িয়াখানার কর্মচারীদের প্রতি সহযোগীতা মূলক আচরণ করতে হয়।
  • সূর্যাস্তের পূর্বে চিড়িয়াখানা ত্যাগ করতে হয়।
  • সঙ্গে আসা বাচ্চাদের নজরে রাখতে হয়।
  • চিড়িয়াখানার প্রানীদের কাছ থেকে বাচ্চাদের নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হয়।
  • প্রানীদের খাঁচায় বা ঘরে হাত বা কাপড় দিতে হয় না।
  • চিড়িয়াখানার প্রানীদের খাবার দিতে হয় না।

দর্শণার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাঃ

  • চিড়িয়াখানাতে দর্শণার্থীদের পশুপাখী দর্শণ ছাড়াও নিঝুম ও উৎসব নামে ২টি পিকনিক স্পট, শিশুদের খেলাধুলা ও বিনোদনের ১টি শিশুপার্ক, পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
  • এছাড়া এখানে একটি কেন্দ্রীয় মসজিদও রয়েছে ।

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা কিংবা ঢাকা চিড়িয়াখানা কিভাবে যাবেন –

ঢাকা শহরের যেকোন জায়গা মিরপুর ১ নং সনি সিনেমা হল গোল চত্ত্বর থেকে যে রাস্তাটি উত্তর দিকে গিয়েছে সেটি সরাসরি চিড়িয়াখানার দিকে গিয়েছে। সনি সিনেমা হল থেকে রিক্সা বা বাস যোগে চিড়িয়াখানায় যাওয়া যায়। ভাড়া ২০/২৫ টাকা।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 7, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.