কার্জন হল – ঢাকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা মনে হলেই যে কয়েকটি ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে কার্জন হল(Curzon Hall)। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি ঐতিহাসিক ও স্বীকৃত পুরাকীর্তি হচ্ছে এ কার্জন হল। বহু ইতিহাসের সাক্ষি এ কার্জন হল বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও জীব বিজ্ঞান অণুষদের কিছু শ্রেনীকক্ষ ও পরীক্ষার হল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ফেব্রুয়ারি ১৪, ১৯০৪ সালে ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও গভর্ণর জেনারেল – জর্জ কার্জন এর ভিত্তি-প্রস্তর স্থাপন করেন। এবং তার নাম অনুসারে এ ভবনের নাম দেওয়া হয় কার্জন হল। এর পরের বছরই অর্থাৎ ১০০৫ সালে বাংলাকে বিভক্ত করা হয় এবং ঢাকা হয় নতুন প্রদেশ পূর্ববঙ্গ ও আসামের রাজধানী।

১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে এটি ঢাকা কলেজ ভবন হিসেবে ব্যবহূত হতে থাকে। পরে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে এ ভবন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের অংশ হিসেবে ব্যবহূত হতে শুরু করে এবং এখনও এভাবেই চলছে। অত্যন্ত যত্নসহকারে গড়ে তোলা প্রশস্ত বাগানে নির্মিত ইটের এ দ্বিতল ভবনে রয়েছে একটি বিশাল কেন্দ্রীয় হল। সে সাথে পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পার্শ্বে রয়েছে সংযোজিত কাঠামো যা অসংখ্য কক্ষ সমৃদ্ধ এবং চারপাশ দিয়ে বারান্দা ঘেরা।

কার্জন হল এর বাইরের রং লাল। ভবনটির সামনে রয়েছে একটি প্রশস্ত বাগান, সেখানে সবুজের বুক চিরে পশ্চিম থেকে পূর্বে চলে গেছে একটি রাস্তা। এর পেছনে রয়েছে একটি বিশাল পুকুর যার পশ্চিম পাড়ে শেরে বাংলা ফজলুল হক হলের মূল ভবন। দ্বিতল এ ভবন ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য হিসেবে বিবেচিত।

স্থাপত্যবিদদের মতে, সম্রাট আকবর নির্মিত ফতেহ্পুর সিক্রির দুর্গের সঙ্গে এ ভবনের স্থাপত্য নকশার মিল রয়েছে। বর্তমানে কার্জন হল ভবনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাজে ব্যবহৃত হলেও এটি ছাত্র-ছাত্রীসহ দেশ-বিদেশের পর্যটকদেরও বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রও বটে। প্রতিদিন বিকালে এখানে জমে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ও দেশ-বিদেশের বিনোদনপ্রিয় হাজারো মানুষের আড্ডা।

ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য হিসেবে বিবেচিত এ ভবনটিতে সংযোজিত হয়েছে ইউরোপ ও মুগল স্থাপত্য রীতির দৃষ্টিনন্দন সংমিশ্রণ। এটি বিশেষ করে পরিলক্ষিত হয় অভিক্ষিপ্ত উত্তর দিকের সম্মুখভাগের অশ্বখুরাকৃতি ও খাঁজকাটা খিলানের মাঝে। ঐতিহ্যিক শিল্পের সাথে আধুনিক কারিগরিবিদ্যার মিশ্রিত রীতি এবং মুগল কাঠামোর আনুকূল্য যা খিলান ও গম্বুজে বিধৃত, সম্ভবত পাশ্চাত্য থেকে ইসলামিক স্থাপত্য জগতে প্রবেশ করেছে।

কিভাবে যাবেন –

ঢাকার গুলিস্তান অথবা শাহাবাগ হতে রিকশা করে খুব সহজেই কার্জন হল যাওয়া যাবে।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 7, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.