কমলা রাণীর দিঘী – নেত্রকোণা

১৫ শতকের শেষ দিকে সুসং দুর্গাপুরের রাজা জানকি নাথ বিয়ে করেন কমলা দেবী নামে এক সুন্দরী মহিলাকে। রাণী কমলা দেবী যেমনি রূপেগুণে সুন্দরী ছিলেন তেমনি ছিলেন পরম ধার্মিক। রাজা জানকি নাথও ছিলেন পরম প্রজা হিতৈষী। রাণীর গর্ভে একপুত্র সন্তান জন্ম নিল। পুত্রের নাম রাখা হল রঘুনাথ।

রাজা জানকি নাথ প্রজাদের মঙ্গলার্থে পানির অভাব নিবারণের জন্য একটি পুকুর খনন করেন কিন্তু পুকুরে আর পানি উঠল না। রাজা মহা চিন্তায় পড়লেন। একরাতে রাজা স্বপ্নে আদিষ্ট হন রাণী কমলা দেবী যদি পুকুরের মাঝখানে গিয়ে পূজো দেন তাহলে পুকুরে পানি উঠবে। রাণী কমলা দেবী প্রজাদের মঙ্গলার্থে পুকুরের(Kamala Rani Dighi) মাঝখানে গিয়ে পূজোয় বসলেন। সহসা চারিদিক দিয়ে পানি উঠতে শুরু করল। পানি রাণী কমলা দেবীকে স্পর্শ করল। রাণী কমলা দেবী উঠে দাঁড়ালেন এবং কড়জোড়ে দেবতার উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। পানি বেড়েই চলল, পানি বাড়তে বাড়তে হাঁটু পেরিয়ে কোমরে পৌঁছালো। রাজা জানকি নাথ অস্থির হয়ে গেলেন। রাণীকে পাড়ে ভিড়ার জন্য চিৎকার দিতে শুরু করলেন। ততক্ষণে পানি রাণীকে ডুবিয়ে ফেলল। রাণী আর পানি থেকে উঠে এলেন না। পানিতে একাকার হয়ে মিশে গেলেন। রাজা জানকি নাথ এ দৃশ্য দেখে বিচলিত হলেন।

তিনি অস্থির হয়ে ঈশ্বরকে ডাকতে শুরু করলেন। কয়েক মাসের শিশু সন্তান রঘু যে মাতৃদুগ্ধ ছাড়া আর কিছুই খায় না। রাজা জানকি নাথ এই চিন্তায় কিংকর্তব্য বিমূঢ় হলেন। অবশেষে তিনি এক রাত্রে স্বপ্নে আদিষ্ট হলেন। শিশু সন্তান রঘুকে পুকুরের পাড়ে রেখে আসলে রাণী কমলা দেবী তাকে বুকের দুধ খাওয়াবেন তবে শর্ত যে, রাজা কখনো রাণীকে স্পর্শ করতে পারবেন না। রাজা জানকি নাথ গভীর রাতে শিশু সন্তানটিকে পুকুরের পাড়ে রেখে আসতেন আর রাণী কমলা দেবী তার সন্তানকে বুকের দুধ খাইয়ে আবার পানিতে চলে যেতেন। এই দৃশ্য রাজাকে খুব যন্ত্রনা দিত। একদিন মধ্যরাতে যখন রাণী কমলা দেবী তার সন্তানকে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন তখন রাজা জানকি নাথ কমলা দেবীকে ধরার জন এগিয়ে গেলেন। রাণী রাজাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন। পরে রাজা রাণীর চুলে ধরলেন কিন্তু রাণীকে আর রাখতে পারলেন না। রাণী পানিতে নেমে পানির সাথে একাকার হয়ে গেলেন। পর থেকে আর শিশু সন্তানটিকে দুধ খাওয়াতে এলেন না।

রাজা স্বপ্নে আদিষ্ট হন যদি আর ৭ দিন বুকের দুধ খাওয়ানো যেত তাহলে শিশু সন্তান রঘু দিক বিজয়ী, প্রতাপি বীর হিসাবে গণ্য হত। যতদুর জানা যায় রাজা রঘুর আমলেই সুসং দুর্গাপুর শক্তিশালী পরগনা হিসাবে গণ্য হয়েছিল। এই রাজা রঘুই জঙ্গল বাড়ী দূর্গ আক্রমণ করেন এবং বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদ রায়, কেদার রায়কে পরাজিত করেন। পরে তিনি মুঘল সম্রাট এর নিকট থেকে মহারাজা উপাধি লাভ করেন।

কিভাবে যাবেন:

ঢাকা থেকে বাস যোগে ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ ভায়া শ্যামগঞ্জ দুর্গাপুর অথবা ঢাকা থেকে বাসযোগে নেত্রকোণা, নেত্রকোণা থেকে দুর্গাপুর। উপজেলা পরিষদ থেকে রিক্সা বা মোটর সাইকেলে বিরিশিরি ব্রীজ পার হয়ে বামপাশে গুজরীকোণার পাকা রাস্তা দিয়ে ১.৫ কিলোমিটার পরে কমলা রাণী দিঘীর পাড়। উপজেলা সদর হতে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই কমলা রাণী দিঘী। এই কমলা রাণী দিঘী সাগর দিঘী নামে পরিচিত। দিঘীটি পুরোপুরি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও এর দক্ষিণ পশ্চিম পাড় এখনও কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: আবদুর রহমান,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 27, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.