কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পৈত্রিকবাড়ী – গোপালগঞ্জ

‘ছাড়পত্র’ খ্যাত সুকান্ত ভট্টাচার্য রবীন্দ্র-নজরুলোত্তর যুগের তরুণ কবি। যিনি বিপ্লবী কবি এবং গণজাগরণের কবি। যিনি সমাজতন্ত্রের আদর্শের কবি। যিনি চে গুয়েভারার মতো বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতেন। সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখতেন। যিনি নজরুলের মতোই তার কাব্যে উচ্চারণ করে গেছেন অন্যায়-অবিচার, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও সংগ্রামের শব্দমালা।

যিনি বিপ্লব ও গণমানুষের মুক্তির পক্ষের সংগ্রামে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন বারবার। লড়াকু সৈনিকের মতো কাজ করেছেন প্রলেতারিয়েত জনগোষ্ঠীর ও কৃষক-শ্রমিকের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে। এ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে যাওয়ার প্রত্যয়ে তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা কবি। বন্দিত্ব মোচনের লক্ষ্যে তিনি ছিলেন অগি্নরথের সারথি, উদ্দীপ্ত যৌবনের অগ্রপথিক।

সুকান্তের পৈতৃক নিবাস (Sukanta Bhattacharya’s House) গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার উনাশিয়া গ্রামে। তার জন্ম ১৯২৬ সালের ১৬ আগস্ট কলকাতার মহিম হালদার স্ট্রিটে মাতুলালয়ে।

জন্মের সময়ে তার পিতা চাকরি করতেন মাদারীপুরে ডাক বিভাগে। আর তখন কোটালীপাড়া ছিল বাকেরগঞ্জ জেলার (বর্তমান বরিশাল) মাদারীপুর মহকুমার একটি থানা। পরে মাদারীপুর মহকুমা ফরিদপুর জেলার সঙ্গে যুক্ত হয়। আর কোটালীপাড়া থানা অন্তর্ভুক্ত হয় গোপালগঞ্জ মহকুমার সঙ্গে। বর্তমানে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর পৃথক পৃথক পূর্ণাঙ্গ জেলায় পরিণত হয়েছে।

দেশ বিভাগের এক বছর আগে ১৯৪৬ সালে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের বাবা নিবারণ ভট্টাচার্য ডাক বিভাগের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ও উনাশিয়ার ঘরবাড়ি ফেলে রেখে কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে গিয়ে বইয়ের ব্যবসা শুরু করেন। নিবারণ ভট্টাচার্য কলকাতায় যাওয়ার সময় উনাশিয়া গ্রামে প্রায় ২ একর পরিমাণ জায়গার বসতবাড়ি ফেলে রেখে যান।

প্রায় ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ বাড়িটির গৌরব ও পরিচিতি ছিল এলাকায়। সুকান্তের পিতৃব্য ও পিতার ফেলে যাওয়া এ বাড়িটি বংশের সর্বশেষ পুরুষ দেবেন ভট্টাচার্য কিছু দিন আগলে রাখেন। পরে এ বাড়িটি অবৈধ দখলদারদের হাতে চলে যায়।

এক পর্যায়ে  বাড়িটি গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের স্মারক নাম্বার রাজস্ব-৪/৫৯/৩৭২, তারিখ ২৪.০৩.২০০৪ পত্র মোতাবেক তৎকালীন কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাড়িটির ঐতিহাসিক মূল্য বিচারে এখানে সুকান্তের স্মৃতি রক্ষার্থে ‘সুকান্ত স্মৃতি-পাঠাগার ও অডিটরিয়াম’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রায় ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এটির নির্মাণ কাজ শেষে ২০১২ সালে এর শুভ উদ্বোধন করা হয়।

সুকান্তের পৈতৃক নিবাস এখন সাহিত্যপ্রেমিকদের এক আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থান। প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে সুকান্তভক্তরা এসে এ বাড়িটি দেখে যান এবং সুকান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

 

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: আবদুর রহমান,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 6, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.