আন্ধারমানিক -বান্দরবান

নৈসর্গিক রহস্যঘেরা সৌন্দর্যময় আন্ধারমানিক (Andharmanik) বান্দরবান জেলার থানছি উপজেলার বড় মদক এলাকায় অবস্থিত। বড় মদকের পর আর কোনো সেনা বাহিনী বা বিজিবি ক্যাম্প না থাকায় নিরাপত্তার কারণে প্রায়ই এখানে যেতে অনুমতি দেয়া হয় না। তারপরও ভ্রমণপ্রিয় মানুষ যায় আন্ধারমানিকে অন্ধকারের তীব্র আকর্ষণে।

আন্ধারমানিক যেতে হলে প্রথমে দলিয়ান পাড়া থেকে রেমাক্রি ও ছোট মদক হয়ে বড় মদক যেতে হবে। রেমাক্রির পরে ওই পথে পর্যটক খুবই কম যান। আর বড় মদকের দিকে কেউ যায় না বললেই চলে। তবে দুই-এক জন যারা যায় তারা থানছি বা রেমাক্রি থেকে ট্রলারে করে যান। পথটি অফ ট্রেইল বলা যায়। রেমাক্রি থেকে ৮ ঘণ্টার হাঁটা পথ। যার ৬ ঘণ্টা সামান্য উঁচু-নিচু ও নদীর পাড় ধরে হলেও শেষ ২ ঘণ্টা ঝোপঝাড়পূর্ণ পাহাড়ি পথ। যেভাবেই হোক সন্ধ্যার আগে বড় মদক পৌঁছাতেই হয়। কারণ শেষ ২ ঘণ্টার পথ হেড ল্যাম্পের আলোতে যাওয়া কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়। আর অজানা কিছু ভয় তো থাকেই।

এই পথে কোনো বাঙালির দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আদিবাসীদেরও তেমন একটা দেখা যায় না। খৈসাপ্রু ও চাখাই পাড়ার পর সিঙ্গাফা ও ঠাণ্ডা ঝিরি সাঙ্গু নদীতে মিলিত হয়েছে। এর কিছুদূর পরে তুর্গ ঝিরি। এখান থেকে আবার পাহাড়ি পথ শুরু। এই পাহাড়ি পথের মূল সমস্যা শুকনো লতা-পাতার স্তূপ। অনেক জায়গায় পা ফেলার পর মনেহতে পারে পায়ের নিচে মাটি নেই।ফলে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয় সাবধানে।

বড় মদক পৌঁছে বিজিবি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হয়। তাদের অনুমতি ছাড়া আন্ধারমানিক যাওয়া সম্ভব না। কারণ ক্যাম্প থেকে সরাসরি ট্রলার ঘাট দেখা যায়।বড় মদক থেকে আন্ধারমানিক পর্যন্ত যাওয়া আসার জন্য রয়েছে নৌকা। ভাড়া প্রায় ২ হাজার টাকা। নদীতে পানি কম থাকায় মাঝে মাঝে নৌকা থেকে নেমে হাঁটতে হয়। এভাবে প্রায় ঘণ্টা দুই লেগে যেতে পারে আন্ধারমানিক পৌঁছাতে। আন্ধারমানিকের মূল আকর্ষণ হল নারেসা ঝিরি। ঝিরির দুই পাশ প্রায় ৬০/৭০ ফুট পাথরের দেয়াল সমান্তরাল ভাবে অনেক দূর চলে গেছে। মনে হবে কংক্রিটের ঢালাই দেয়া হয়েছে দুপাশের পাহাড়ী দেয়ালে। এক অদ্ভুত সৃষ্টি এই আন্ধারমানিক। সূর্যের আলো কম পৌঁছার কারণে জায়গাটিতে সব সময় অন্ধকার দেখা যায়।সম্ভবত এ কারণেই নামটা হয়েছে আন্ধারমানিক।পাহাড়, ঝর্ণা, পাথর আর সবুজের বন্যরূপের নৈস্বর্গীক সৌন্দর্যে ভরপুর আন্ধারমানিক। ঝিরি ধরে যাওয়া যায় দীর্ঘ সময়। স্বচ্ছ পানি।পানির নিচে পাথর। মূল নদী ধরে আরও কিছু দূর সামনে বাদুর ঝর্ণা।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে আন্ধারমানিক যেতে হলে প্রথমে বান্দরবান যেতে হবে। বাসভাড়া ৬২০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা পর্যন্তু। বান্দরবান থেকে থানছির বাসভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা। থানচি থেকে আন্ধারমানিক যাওয়া আসা ট্রলার রিজার্ভ বাবদ ১০,০০০ টাকার মতো। তবে বড় মদক বিজিবি ক্যাম্পের অনুমতির উপরই আন্ধারমানিক যাওয়া নির্ভর করে। ভ্রমণের সময় চারদিন হলে ভাল হয়। থাকার জন্যে রেমাক্রিতে কয়েকটি গেস্ট হাউজ আছে। ছোট মদক ও বড় মদকে আদিবাসীদের ঘরেও থাকা যেতে পারে। রেমাক্রিতে খাবার পাওয়া যায়। ছোট মদক ও বড় মদকে নিজেদের রান্না করে খেতে হবে।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: ভ্রমণ পাগল,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: এপ্রিল 13, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.