সিংগার মসজিদ – বাগেরহাট

বাগেরহাটে অবস্থিত ষাট গম্বুজ মসজিদের প্রায় তিনশ গজ দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সিংগাইর মসজিদ(Singer Mosjid)। এই মসজিদের একটিমাত্র গম্বুজ রয়েছে যা দৃঢ় ভাবে নির্মিত এবং প্রশস্ত গম্বুজ। ১৫ শতাব্দীতে পোড়া মাটির অলংকরণে মধ্যযুগীয় স্থাপত্য শৈলিতে নির্মিত মসজিদটি হযরত খান জাহান (রহ:)এর আমলের। বাংলাদেশ সরকার সিংগাইর মসজিদকে ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি হিসাবে ঘোষণা করে এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় সংরক্ষণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিশ্বের হারিয়ে যাওয়া ১৫টি ঐতিহাসিক নগরীর অন্যতম মধ্যযুগীয় শহর খলিফতাবাদ। হযরত খানজাহান (র.) নির্মিত প্রাচীন এই শহরকে ১৯৮৫ সালে এতিহাসিক মসজিদের শহর হিসেবে ৩২১ নম্বর ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো।

নির্মানশৈলীঃ

সিংগাইর মসজিদ একগম্বুজ মসজিদ। মসজিদটির প্রত্যেক বাহু বাইরের দিকে ৩৯ ফুট এবং ভেতরের দিকে ২৫ ফুট লম্বা। ইটের দেওয়াল গুলো গড়ে ২.১০ মিটার পুরু। ইট নির্মিত মসজিদটির প্রাচীরগুলো প্রায় ৭ ফুট প্রশস্ত। দেয়ালের প্রতিটি কোণার বাইরের দিকে গোলাকার ভাবে বর্ধিত একটি বুরুজ আছে। পূর্ব দেয়ালে তিনটি দরজা আছে। প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি অলংকৃত মিহরাব। তবে কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং সুসজ্জিত। অন্যান্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য ষাটগম্বুজ মসজিদের অনুরূপ। খান জাহান আলির নিজস্ব স্থাপত্যশৈলী অনুযায়ী গম্বুজটি পুরু দেয়ালের উপর দণ্ডায়মান এবং এর র্শীষে রয়েছে বাঁকানো কার্নিশ। মসজিদের ভিতরে পশ্চিম দেয়ালের মাঝের অংশে একটি অলংকৃত মেহরাব আছে। এরকম অলংকৃত পোড়া মাটির নকশা চোখে পড়ে দরজাগুলোর দুই পাশে।

অবস্থান:

সিংগাইর মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত। ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে মাত্র ২৫ মিটার দক্ষিণ-পূর্বে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের পাশে সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত এ মসজিদটি।

কোথায় থাকবেনঃ

বাগেরহাট সদরে বিভিন্ন হোটেল আছে । এছাড়াও সরকারি গেস্টহাউস আছে। এখানে রেল রোডে অবস্থিত মমতাজ হোটেলে থাকতে পারেন। এই হোটেলটিতে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান মোটামোটি ভাল এবং খরচও একটু বেশি। এছাড়া এই হোটেলের আশেপাশে থাকার জন্য আরো কিছু হোটেল রয়েছে। তাছাড়া খান জাহান আলীর মাজারের সামনে মেইন হাইওয়েতে থাকতে পারবেন হোটেল অভিতে। ভাড়া ৪০০ টাকা। ফোন: ০১৮৩৩৭৪২৬২৩।

এছাড়া বাগেরহাটে থাকার জন্যে হোটেলের মধ্যে কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন সংলগ্ন হোটেল আল আমিন (০৪৬৮-৬৩১৬৮, ০১৭১৮৬৯২৭৩৭, এসি দ্বৈত কক্ষ ১ হাজার টাকা, নন এসি কক্ষ ১শ’ থেকে ৪শ’ টাকা) এবং কর্মকার পট্টিতে হোটেল মোহনা (০৪৬৮-৬৩০৭৫, ০১৭২২৮৫৮৩১৩, ১শ’ থেকে ৪শ’ টাকায় নন এসি কক্ষ) আছে।

 

কিভাবে যাবেনঃ

ঢাকার সায়দাবাদ থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এবং সন্ধা ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত অনেকগুলা গাড়ী ছেড়ে যায় – মেঘনা (০১৭১৭১৭৩৮৮৫৫৩), বনফূল, পর্যটক (০১৭১১১৩১০৭৮), ফাল্গুনী, আরা, বলেশ্বর, হামিম ও দোলা।

এছাড়া গাবতলী থেকে সোহাগ (০১৭১৮৬৭৯৩০২), শাকুরা (০১৭১১০১০৪৫০), হানিফ ও ইগল পরিবহন ছেড়ে যায়। ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। যাতায়াতে সময় লাগে প্রায় ৭ ঘন্টা।

আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনা গিয়ে এরপর বাস ধরে বাগেরহাটে যেতে পারেন। রূপসা থেকে বাগেরহাটে যেতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগে।

বাগেরহাট জেলা থেকে বাস/রিক্সা/অটোযোগে ষাট গম্বুজ মসজিদে যাওয়া যায়। বাসে গেলে রূপসা গামী বাসে উঠলে মসজিদ গেটে নামিয়ে দিবে। রিক্সা/অটোযোগে ভাড়া ৫০-৭০ টাকা এবং মাজার গেট থেকে ১৫-২০ টাকা। ষাটগম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে রাস্তার বিপরীত পাশে মধ্যযুগীয় এই মসজিদটি অবস্থিত।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 24, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.