বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে ছোট ফেনী নদীর ওপর গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের আরেক ‘মিনি কক্সবাজার’ কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ক্লোজার (Muchapura Closure)। অনেকে এ স্পটটিকে ‘মিনি কক্সবাজার’, মূসাপুর সমুদ্র সৈকত হিসেবে ও চেনেন। এই ক্লোজার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য হিসেবে সুপরিচিত হয়ে উঠছে। জোয়ারভাটা, নদীর নৈসর্গিক দৃশ্য, মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ, জেলেদের মৎস্য উৎসব দেখতেই হাজার হাজার দর্শনার্থী প্রতিদিনই এখানে ভিড় জমাচ্ছেন।
প্রথম দেখাতে মনে হবে সৈকত। খানিক পরে ভ্রম কাটবে। খুঁজে পাবেন নদীপাড়ে সাগরের আবহ। এখানে আছে নদীর প্রাকৃতিক দৃশ্য, নৌকা ভ্রমণের অসাধারণ আনন্দ-অভিজ্ঞতা, সকালের শান্ত মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ, রাখালের গান, মাঝির গান, পাখির কলতান, জেলেদের মৎস্য উৎসব, গরু-মহিষ-ভেড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখিদের সৌন্দর্য ও বিকালের হিমেল হাওয়াসহ নানা গ্রাম্য ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক দৃশ্য।
মুছাপুর ক্লোজার এলাকায় চরের মধ্যে দক্ষিণ মুছাপুর মৌজায় ৮২১ দশমিক ৫৭ একর, চরবালুয়া (দিয়ারা) মৌজায় এক হাজার ৮৬১ দশমিক ১০ একর ও চরবালুয়া মৌজায় ৬শ দশমিক ১৫ একর সর্ব মোট তিন হাজার ২শ ৮২ দশমিক ৮২ একর বনবিভাগের জমি জুড়ে মনোরম বনাঞ্চল রয়েছে।
এর মধ্যে মুছাপুর ফরেস্ট বাগানটি অন্যতম। এই ফরেস্ট বাগানে রয়েছে ঝাউ, কেওড়া, পিটালী, খেজুর, লতাবল, গেওয়া, শনবলই, বাবুলনাটাই, আকাশমনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ।
এখানে রয়েছে ঘুঘুসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখির অভয়স্থল। শীতের মৌসুমে সুদুর থেকে আসা অতিথি পাখিরাও এখানে আসতে ভুল করে না। এখানে পরিকল্পিতভাবে ফরেস্ট বাগানটি শুরু হয় ১৯৬৯ সালে।
কোনো হিংস্র পশুর ভয় না থাকলেও বনে রয়েছে শিয়াল, বনবিড়াল ও সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু ও পাখি। তবে সাপগুলো নিশাচর। এছাড়া বন্য মহিষ, গরু, ভেড়াও দেখা যায়। এই বাগানের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটু ভেতরে প্রবেশ করলে মনে হবে এ যেন আরেকটি ভূবন। বনের ভেতরেই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট একখণ্ড শীতল ছায়াবিশিষ্ট মাঠ।
ইচ্ছে করলে এখানে একটু জিরিয়ে নেয়া যায়। পাশে রয়েছে বিশাল সমুদ্র সৈকত। পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমীরা ইচ্ছা করলে এ মুছাপুর ক্লোজারে এসে ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন। দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসুদের তৃষ্ণা মেটাতে মুছাপুর ক্লোজার একটি মনোরম অবকাশ কেন্দ্র।
যেভাবে যাওয়া যায়:
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট থেকে বাংলাবাজার। সেখান থেকে চৌধুরীবাজার পার হয়ে ২ কিলোমিটার রাস্তা হয়ে চার রাস্তার মোড় দিয়ে পূর্বদিকে জনতা বাজার, এরপর দক্ষিণে ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে একটু পূর্বে গেলেই মুছাপুর ক্লোজার। তবে, সেখানে এখনও নিরাপত্তার তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায়, দর্শনার্থীদের দিনে দিনেই ফিরে আসতে হয়।