মারমেইড ইকো রিসোর্ট – কক্সবাজার

ঢাকার বাইরের রিসোর্টগুলোর মধ্যে অন্যতম হল মারমেইড ইকো রিসোর্ট(Mermaid Eco Resort)। স্বপ্নিল সৌন্দর্যের এক আবাসভূমি মারমেইড ইকো রিসোর্ট। কক্সবাজারের প্যাঁচার দ্বীপে প্রাকৃতিক কোলে গড়ে উঠেছে এই রিসোর্টটি।

এক পাশে ঝাউবনসমৃদ্ধ সমুদ্রসৈকত, অন্য পাশে উঁচু পাহাড়। মধ্যভাগ দিয়ে সুদূর টেকনাফ পর্যন্ত চলে গেছে প্রায় ৮৪ কিলোমিটারের কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক। সড়কের পশ্চিম পাশে (রেজু খালের পাশ ঘেঁষে) নির্জন দ্বীপ পেঁচারদিয়া গ্রাম। আর  এটিই ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক স্বর্গের নাম পেঁচার দ্বীপ । সেখানে আপনি থাকবেন সম্পূর্ণ কোলাহলমুক্ত। যেখানে কাকপক্ষীটিও জ্বালাতন করতে আসবে না আপনাকে।

কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সোজা রেজুব্রিজের কাছেই মারমেইড ইকো রিসোর্ট।এই রিসোর্টের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এখানে সবকিছু প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হয়েছে।   রাস্তার ওপর থেকে তাকালে গাছপালার আড়ালে চোখে পড়ে ছোট-বড় অনেক কুটির। এখানকার থাকার ঘরগুলো ছাদ-চালা বাঁশ ও ছন দিয়ে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন তা গাছপালাগুলোর উচ্চতাকে ছাড়িয়ে না যায়। রিসোর্টের বাংলোর জানালা ও দরজারগুলো অনেক বড় করে নির্মিত যাতে অতিথিরা সুনির্মল বাতাস এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। বড় রাস্তার ঢাল বেয়ে নিচে নামতেই কানে আসে কলরব। দুই পাশের জলাধারে ঝিকমিক করে ভরদুপুরের রোদ্দুর। অভ্যর্থনা কক্ষে এগিয়ে গেলে কেউ একজন রঙচঙে বুনোফুলের গুচ্ছ তুলে দেন হাতে। তার পর আসে স্বাগত পানীয়, মানে ওয়েলকাম ড্রিংকস সদ্য গাছ থেকে পেড়ে আনা ডাব। ডাবের পানি শেষ করতে করতে বাংলো বরাদ্দের কাজ শেষ। যে বাংলোয় থাকার ব্যবস্থা হয়েছে তার নাম একবার শুনে মনে রাখা শক্ত রোড লাভার স্কুইড। বাকি গোটা ৩০ ভিলা এবং বাংলোর নামেরও একই হাল।

কিন্তু ঘরটা সত্যিই মন ভালো করে দেয়ার মতো। বাইরে স্রেফ কুটিরের মতো দেখালেও ভেতরে মোটামুটি আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা মজুদ। স্নানঘরটায় ঢুকলে মুহূর্তেই মন ভালো হয়ে যায়। প্লাস্টিকের বোতলে ভর্তি বাজারি শ্যাম্পুর বদলে কাচের পাত্রে ভেষজ উপায়ে বানানো শ্যাম্পু। সেটা আবার সবুজ গাছের পাতা দিয়ে কায়দা করে ঢাকা। দুই পাশে দুটো কাঠগোলাপ ফুল গুঁজে দেয়া। সাবান, শ্যাম্পু রাখা হয়েছে নারকেলের লম্বা একটা খোলের মধ্যে। মারমেইড ইকো রিসোর্টে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন সব জিনিস যথাসম্ভব কম ব্যবহার করা হয়েছে। পেঁচার দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ বহাল রেখেই সব বাংলো তৈরি করা হয়েছে। ইয়োগা সেন্টার, স্পা, নৌকা ভ্রমণ, সম্মেলন কক্ষ, প্রেক্ষাগৃহ সবকিছুরই এখন ব্যবস্থা আছে এ পরিবেশবান্ধব অবকাশ যাপন কেন্দ্রে। মারমেইড ইকো রিসোর্টের মূল নকশা করেছেন স্থপতি জিয়াউদ্দিন খান।

নাগরিক কোলাহল কিংবা হাঁকডাক নেই। দুপুরের রোদ মরে এলে কুটিরের সামনের বাঁশেরবেঞ্চে গা এলিয়ে দিয়ে বসলে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। এ সময়টা নৌকা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার জন্যও বেশ উত্তম হয়। বাংলোর সারি আর নারকেল গাছ পেরিয়ে হেঁটে গেলে রেজু খালের পাড় পাওয়া যায়। সেখানে নীলচে রং ধরতে শুরু করেছে সবে সাগরের শাখা রেজু খালের পানিতে। পাশদিয়ে ভেসে যায় বাহারি সাম্পান। দূরে আদিগন্ত বিছিয়ে থাকা সমুদ্র যেখানে নৌকা থামবে ওপারের কোনো এক অজানা চরে। বালুকাবেলায় পা রাখতেই হুটোপুটি করে ছুটে পালাবে একপাল লাল কাঁকড়ার দল। দখিনা বাতাসের দোলায় মাথা নেড়ে যেন অভিবাদন জানাবে বিশাল ঝাউবন। তারপর ইচ্ছেমতো নির্জন সাগরতীরে ছুটোছুটি, আনন্দে হারিয়ে যাওয়া। কোন ফাঁকে বেলা পেরিয়ে যাবে তা আপনি টেরই পাবেন না। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও কোনক্ষতি নেই।

যত তাড়াই থাকুক, বোট ক্লাবের পাটাতনে পেতে রাখা ঢাউসকেদারায় একবার বসে না গেলে অনেক কিছুই মিসকরবেন। আকাশে পূর্ণচন্দ্র, সামনে সাগরের বিশাল জলরাশি। আশ্চর্য মৌনতায় ডুবেআছে সমস্ত এলাকা। মন চাইলে গা এলিয়ে বসে থাকুন গভীর রাত পর্যন্ত। একটি কাকপক্ষীটিও জ্বালাতন করতে আসবে না আপনাকে।

যাওয়ার উপায়ঃ

কক্সবাজারের কলাতলী থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চেপে করে যেতে পারেন পেঁচার দ্বীপে। ভাড়া নিবে প্রায় ২০০ টাকা। এছাড়া কক্সবাজার এয়ারপোর্ট থেকে সিএনজি নিয়ে সরাসরি চলে যাওয়া যায়। সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট।

কোথায় থাকবেনঃ

মারমেইড ইকো রিসোর্টে বাংলো আছে অনেক রকম। তবে বাংলো বুকিংয়ের ব্যবস্থা করে ফেলতে হবে যাওয়ার আগেই। এ রিসোর্টে কটেজ আছে ৩০টি। এখানকার কটেজে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম রয়েছে। প্রথম ক্যাটাগরির কটেজের রুম ভাড়া ২ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা আর দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে ৮ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা। থ্রি স্টার হোটেলের যাবতীয় সুবিধা আছে এ রিসোর্টটিতে।

যোগাযোগঃ

ওয়েবসাইটঃ http://mermaidecoresort.com

ফোনঃ +৮৮০ ০১৮৪১৪১৬৪৬৪-৯

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: ভ্রমণ পাগল,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 12, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.