ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার – গাইবান্ধা

গাইবান্ধা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গাইবান্ধা-বালাসি সড়ক ঘেঁষে তারকাটায় ঘেরা একটি বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। খুব কাছে গেলেও বুঝবার উপায় নেই যে এখানে পৃথিবী খ্যাত একটি স্থাপনা ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার (Friendship Center) লুকিয়ে আছে। ভবনের ছাদ আর ভূপৃষ্ঠ একই লেভেলে হওয়ায় দূর থেকে ভবনটি দেখা যায় না। ছাদে সবুজ ঘাসের আচ্ছাদন থাকায় ছাদ ও গ্রাউন্ডের নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করেছে। প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার মহাস্থানগড় থেকেই নেয়া হয়েছে এর নির্মাণ শৈলীর ধারণা। মাটির নিচে নির্মিত এ ভবনটিকে উপর থেকে দেখলে অনেকটা প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের মতোই দেখায়।

২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর গাইবান্ধা-বালাসী সড়ক ঘেঁষে ফুলছড়ি উপজেলার মদনেরপাড়া গ্রামে প্রায় ৮ বিঘা জমির মাটির নিচে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি গড়ে তোলা হয়। ৩২ হাজার বর্গফুট ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারে ২টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে, থাকার জন্য ২৪টি কক্ষ, উন্নত খাবার ব্যবস্থার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ খেলাধুলা, বই পড়ার জন্য লাইব্রেরি ব্যবস্থা আছে। আছে ইন্টারনেট সুবিধা, উন্নতমানের শব্দযন্ত্র, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা । এখানকার জমিতে চাষ করা হয় বিষমুক্ত সবজি।

এছাড়া এখানে আছে ঔষধি গাছের বাগান। আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতিতে প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতে একটি উঠান থাকে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারেও তেমনি উঠানের অংশ রাখা হয়েছে। এসব তদারকির জন্য সেন্টারে মোট ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি কাজ করে যাচ্ছেন।

প্রশিক্ষণ সেন্টার হওয়ায় প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য নিরিবিলি ও শান্ত একটি পরিবেশ তৈরি এবং পর্যাপ্ত আলো আর বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভবনের ছাদে সবুজ ঘাসে ঢাকা ও কক্ষগুলো মাটির নিচে থাকায় প্রাকৃতিকভাবেই অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা থাকে। চারপাশের কক্ষগুলো ছাড়া অন্য ঘরের প্রাকৃতিক আলোর উৎস স্কাই লাইট। ভেন্টিলেসন ব্যবস্থাও প্রাকৃতিক।

প্রতিটি ব্লকের উচ্চতা সমান, পুরো বিল্ডিংয়ে লাইট কোর্ট ও উন্মুক্ত চাতাল আলো-ছায়ার দারুণ সমাহার তৈরি করে। ভবন এলাকায় ৫টি ওয়াটার পুল আছে। পুরো ভবনে অভিন্ন ইট আর সিমেন্টের গাঁথুনি প্লাস্টার ব্যবহার হয়নি। ছাদে যাতে কোনো পানি জমে না থাকে সে জন্য পুরো ছাদজুড়ে চমৎকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা। কিছু কিছু স্থানে খুব যত্ন সহকারে ড্রেনকে দৃষ্টির আড়াল করা হয়েছে।

গড়ে তোলার লক্ষ্য : প্রান্তিক ও সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠী মর্যাদা এবং আশা নিয়ে জীবন-যাপনের সুযোগ করে দিতেই ২০০২ সালে ফ্রেন্ডশিপ-এর যাত্রা শুরু। উত্তরবঙ্গের চর এলাকা এবং দক্ষিণাঞ্চলের ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত এলাকার ঝুঁকিপ্রবণ মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কাজ করছে ফ্রেন্ডশিপ।ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারে সুবিধা বঞ্চিত সেই সকল জনগোষ্টিকে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বি করে তোলা হয়। নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান তাদের সভা-সমাবেশ করার জন্য ভাড়া দেয়া হয় ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার।

মনে রাখতে হবে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি জনসাধারণের জন্য উন্মোক্ত নয়। পূর্বানুমতি সাপেক্ষে এর ভেতরটা পরিদর্শন করা যেতে পারে।

যেভাবে যাবেন :

গাইবান্ধা জেলা শহরের বাস টার্মিনাল থেকে ব্যাটারি চালিত টমটম অথবা সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে গাইবান্ধা-বালাসীঘাট সড়কে ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলে দেখা মিলবে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের। এ ক্ষেত্রে আপনাকে ২০/২৫ টাকা ভাড়া গুনতে হবে।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: ভ্রমণ পাগল,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: মার্চ 14, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.