নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা ছোট্ট একটি ভূ-খন্ডের না্ম নিঝুম দ্বীপ (Nijhum Dwip)। বল্লার চর, কামলার চর, চর ওসমান ও চর মুরি এই চারটি প্রধান দ্বীপ ও বেশ কয়েকটি ছোট চরের সমন্বয়ে ১৯৫০ সালের শুরুর দিকে দ্বীপাঞ্চলটি জেগে ওঠে। যার আয়তন প্রায় ১৪,০৫০ একর। প্রথমে স্থানীয় জেলেরা দ্বীপটি আবিষ্কার করে। তারা এর নাম দেয় বালুয়ার চর, যা পরবর্তীতে বল্লার চরে রূপান্তরিত হয়।
তবে কেউ কেউ বলেছেন, দ্বীপটির প্রাচীন নাম চর ওসমান। ওসমান নামের এক ব্যক্তি মহিষের দল নিয়ে সর্ব প্রথম এই দ্বীপে বসবাস শুরু করেন। দ্বীপটি সম্পূর্ণ নিরব হওয়ায় এর নামকরণ করা হয় নিঝুম দ্বীপ(Nijhum Dwip)।
নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অর্ন্তগত নিঝুম দ্বীপ। একে ‘দ্বীপ’ বলা হলেও এটি মূলত একটি ‘চর’। নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম ছিলো চর-ওসমান। ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তার মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম দ্বীপে বসত গড়েন। তখন এই নামেই এর নামকরণ হয়েছিলো। পরে হাতিয়ার সাংসদ আমিরুল ইসলাম কালাম এই নাম বদলে নিঝুম দ্বীপ নামকরণ করেন।
মূলত বল্লারচর, চর ওসমান, কামলার চর এবং চুর মুরি- এই চারটি চর মিলিয়ে নিঝুম দ্বীপ। প্রায় ১৪,০৫০ একরের দ্বীপটি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে জেগে ওঠে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের আগ পর্যন্ত কোনো লোকবসতি ছিলো না, তাই দ্বীপটি নিঝুমই ছিলো।
বাংলাদেশের বনবিভাগ ৭০-এর দশকে বন বিভাগের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চার জোড়া হরিণ ছাড়ে। নিঝুম দ্বীপ এখন হরিণের অভয়ারণ্য। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের হরিণশুমারি অনুযায়ী হরিণের সংখ্যা ২২,০০০। নোনা পানিতে বেষ্টিত নিঝুম দ্বীপ কেওড়া গাছের অভয়ারণ্য। ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে সুন্দরবনের পরে নিঝুম দ্বীপকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বলে অনেকে দাবী করেন।
নিঝুম দ্বীপে হরিণ এবং মহিষ ছাড়া অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী নেই। হরিণের সংখ্যা প্রায় ২২,০০০ (প্রেক্ষাপট ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ)। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি। এছাড়াও শীতের মৌসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথির পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় নিঝুম দ্বীপ।
নিঝুম দ্বীপে বিশাল এলাকা পলিমাটির চর। জোয়ারের পানিতে ডুবে এবং ভাটা পড়লে শুঁকোয়। এই স্থানগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের বসবাস। জোয়ারের পানিতে বয়ে আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এদের একমাত্র খাবার। বর্ষা মৌসুমে ইলিশের জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত। এই সময় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা নিঝুম দ্বীপে মাছ কিনতে আসে। এছাড়া শীত কিংবা শীতের পরবর্তী মৌসুমে নিঝুম দ্বীপ চেঁউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। জেলেরা এই মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি করেন। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে কেওড়া গাছ। ইদানিং বনবিভাগ কিছু নোনা ঝাউও রোপণ করছে। এছাড়াও রয়েছে প্রায় ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম এবং ২১ প্রজাতির অন্যান্য গাছ।
কোথায় থাকবেনঃ
নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের থাকার জন্য অবকাশ পর্যটন নির্মাণ করেছে নিঝুম রিসোর্ট এবং নামার বাজার মসজিদ কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করেছে মসজিদ বোর্ডিং।
নিঝুম রিসোর্টঃ এই রিসোর্টে ৯টি ডাবল ও ট্রিপল বেডের রুম এবং ৩টি ডরমিটরি রয়েছে যেখানে মোট ২২টি বেড রয়েছে। পুরো নিঝুম রিসোর্টে ৬০ জনেরও বেশি সংখ্যক মানুষ একসঙ্গে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। নিঝুম রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের নিজস্ব জেনারেটরের ব্যবস্থা রয়েছে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের জন্য।
রিসোর্টের রুম ভাড়া: ২ বেডের (১টি বাথরুম) ডিলাক্স রুমের ভাড়া ১ হাজার টাকা। ৬ বেডের ফ্যামিলি রুমের (১টি চার বেডের রুম ও অন্যটি ২ বেডের রুম এবং ২টি বাথরুম) ভাড়া ২ হাজার টাকা। ১২ বেডের ডরমিটরির (৩টি বাথরুম) ভাড়া ২৪০০ টাকা এবং ৫ বেডের ডরমিটরির (২টি বাথরুম) ভাড়া ১২০০ টাকা। রুমে অতিরিক্ত কেউ থাকলে জনপ্রতি গুনতে হবে ১শ’ টাকা।
নিঝুম রিসোর্ট বুকিং করতেঃ –
ঢাকায় যোগাযোগ – অবকাশ পর্যটন লিমিটেড, আলহাজ শামসুদ্দিন ম্যানশন (৯ম তলা), ১৭ নিউ ইস্কাটন রোড, ঢাকা। ফোন: ৮৩৫৮৪৮৫, ৯৩৪২৩৫১, ৯৩৫৯২৩০, ০১৫৫২৩৭২২৬৯।
নিঝুম রিসোর্টে যোগাযোগ: ইনচার্জ, নিঝুম রিসোর্ট, হাতিয়া, নোয়াখালী। ফোন: ০১৭২৪-১৪৫৮৬৪।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকার মহাখালী, কমলাপুর ও সায়েদাবাদ থেকে এশিয়া লাইন, এশিয়া ক্লাসিক, একুশে এক্সপ্রেস ও হিমাচল এক্সপ্রেসের বাস যায় নোয়াখালীর সোনাপুর। ভাড়া ৩৫০-৪৫০ টাকা। সেখান থেকে সিএনজিতে চেয়ারম্যান ঘাট। ভাড়া ১০০ টাকা। এরপর ট্রলারে চড়ে যেতে হবে নলচিরা ঘাট। ভাড়া ১৫০ টাকা। সেখান থেকে আবার বাসে জাহাজমারা বাজার। ভাড়া ৭০ টাকা। জাহাজমারা বাজার থেকে মোটরসাইকেলে মুকতারা ঘাট। ভাড়া ৭০ টাকা।
মুকতারা ঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকায় নিঝুম দ্বীপ ঘাট। ভাড়া ১০ টাকা। সেখান থেকে আবার মোটরসাইকেলে যেতে হবে নামার বাজার (নিঝুম দ্বীপ)। ভাড়া ৬০ টাকা। তবে সময়ের বিবর্তনে ভাড়ার ক্ষেত্রে তারতম্য হতে পারে। তাই যাতায়াতের শুরুতেই পরিবহন সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ভাড়া জেনে নিয়ে বাহনে চড়বেন।