হাজীগঞ্জের দুর্গটি মূলত জলদুর্গ। তৎকালীন সময়ে ঢাকাকে রক্ষা করতে নির্মাণ করা হয় “ট্রায়াঙ্গল ওয়াটার ফোর্ট” বা “ত্রিভুজ জলদুর্গে” । ১৬৫০ সালের কিছু আগে-পরে নির্মিত হয়েছিল এই সব দুর্গ। এই তিনটি জলদুর্গের একটি হচ্ছে হাজীগঞ্জ দুর্গ।
অপর দুটি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা জলদুর্গ(Sonakanda Durgho) ও মুন্সীগঞ্জের ইদ্রাকপুর জলদুর্গ। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত এই জলদুর্গটি কে নির্মাণ করেছেন তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। মুন্সি রহমান আলী তাঁর এক গ্রন্থে লিখেছেন, মীর জুমলা দুর্গটি নির্মাণ করেন। অন্যদিকে আহম্মাদ হাসান দানি তার ‘মুসলিম আর্কিটেক্টচার ইন বেঙ্গল’ গ্রন্থে বলেছেন, ইসলাম খান ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করার পর এটি নির্মাণ করেন। তাছাড়া দুর্গে কোন শিলালিপি না থাকায় বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গা নিয়ে এই দুর্গটি বিস্তৃত। একটা সময় এই দুর্গের নাম ছিলো খিজিরপুর দুর্গ। পাঁচ কোণাকার এই কেল্লা বা দুর্গটি দৈর্ঘ্যে পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ২৫০ ফুট আর উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ২০০ ফুট । দুর্গের ভেতরে দক্ষিণ কোণে একটি উঁচু মানমন্দির বা ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে যা আজ প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত।
মঞ্চটিতে দুটি বৃত্তাকার অংশ আছে, অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের অংশটি যথাক্রমে ১৫.৭০ মি এবং ১৯.৩৫ মি ব্যাস বিশিষ্ট। মঞ্চটি ৬.০৯ মি উঁচু এবং বেষ্টনীপ্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত। দুর্গ প্রাচীরের পশ্চিম পার্শ্বের কোণার বুরুজগুলি পূর্বপার্শ্বস্থ বুরুজগুলি অপেক্ষা অধিক প্রশস্ত। পূর্ব বুরুজের ব্যাস ৪.২৬ মিটার এবং পশ্চিম অংশের দুটি বুরুজের ব্যাস ৬.৮৫ মিটার।
দুর্গটিতে দুটি প্রধান অংশ আছে। একটি অংশ বিশাল আয়তনের মাটির ঢিবিসহকারে গঠিত দুর্গপ্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত, যার মধ্যে গোলা নিক্ষেপের জন্য বহুসংখ্যক প্রশস্ত-অপ্রশস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র আছে। অপর অংশটি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, যা দুর্গের অভ্যন্তরে পশ্চিমাংশে নির্মিত। সুরক্ষিত দেওয়ালের অভ্যন্তরে উঁচু মঞ্চটি ব্যতীত আর কোন স্থায়ী ইমারতের সন্ধান পাওয়া যায় নি। দুর্গপ্রাচীরের সর্বত্র গুলি ছোড়ার ব্যবস্থাসহ মারলোন দ্বারা সজ্জিত; এ মারলোনগুলির গড় উচ্চতা ১ মিটার।
অবস্থিতঃ
এটি একটি মোঘল জলদুর্গ। দুর্গটি নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার শীতলক্ষা নদীর পূর্বতীরে অবস্থিত। মোঘল আমলে কিছু জলদুর্গ নির্মাণ করা হয়েছিল ঢাকার পানিপথকে সুরক্ষিত করার জন্য। সোনাকান্দা দুর্গ তাদের মধ্যে একটি। এটি ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত।