প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের থানচিতে অবস্থি আমিয়াখুমের ঝর্ণা থেকে সামান্য উপরে উঠলেই শুরু হয় ছোট-বড় অনেক পাথর দিয়ে সাজানো পাথুরে রাস্তা। খুব সাবধানাতর সাথে রাস্তুটুকু পার করার পরে সামনে পড়বে বিশাল আকৃতির পাথরের পাহাড় আর তার মাঝে সবুজ, শান্ত ও স্বচ্ছ জলধারা। আর এখান থেকেই শুরু সাতভাইখুম (Shatvaikhum)।
অনেকে একে ভেলাখুমও (Velakhum) বলে। পরের পথটু যেতে হবে বাঁশের ভেলায় করে। ভেলায় চড়ে যাত্রা শুরুর পর আপনার মনে হবে, হঠাৎ যেন কোনো এক পাথুরে দুর্গের মধ্যে প্রবেশ করলেন। এবার শুধু বাকরুদ্ধ হয়ে অবাক মুগ্ধ চোখে দেখার পালা। আর সেই সাথে অনুভব হবে দুপাশের আকাশ ছোঁয়া পাথরের পাহাড় যেন গাম্ভীর্য নিয়ে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে সবুজ অরণ্যে। অরণ্য রাজ্যে আপনাকে আলিঙ্গন করছে আর সবুজ টলটলে জলপথ যেন আপনাকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানাচ্ছে।
সাতভাইখুম এর রূপ-সৌন্দর্যের বিবরণ দিতে সকল উপমা ব্যবহার করলেও হয়তো এর সৌন্দর্য বর্ণনায় কার্পণ্য করা হবে। সাতভাইখুমের সবুজ অরণ্য, জলপথের গিরিপথ আর পাথুরে পাহাড়ী রাজ্য থেকে ফেরার পথে আপনার সঙ্গী হবে দুরন্ত, দুর্গম আর ভয়ানক রোমাঞ্চকর ভ্রমণের দারুণ এক অনুভুতি।
স্থানীয়দের মতে, সাতভাইখুম এর নামকরণ হয়েছে সাতটি পাথর থেকে। দেবতার পাহাড় থেকে যে বিশাল বিশাল বোল্ডারগুলো ভেঙে পড়েছে, সেগুলোর মধ্যে যে সাতটি পাথর সবচেয়ে বড় তার উপর ভিত্তি করে সেখানকার নাম রাখা হয়েছে সাতভাইখুম। তার প্রথম পাথরটি গতবছর ভেঙ্গে দু’টুকরো হয়েছে।
“পাহাড় থেকে যেভাবে গাছ কেটে নেয়া হচ্ছে সেই জন্য দেবতার পাহাড়ের অভিশাপ থেকে সে পাথরটা ভেঙে গিয়েছে।” – বলে তারা মনে করেন।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে বান্দরবানের যে কোনো বাসে প্রথমে বান্দরবান।ঢাকা থেকে রাতের বাসে রওনা দিলে সকালে বান্দরবান শহরে গিয়ে পৌঁছে যাবেন। তারপর বান্দরবান শহর থেকে চান্দের গাড়ি কিংবা বাসে থানচি। এখানে আপনার দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগবে। থানচি থেকে বোটে চড়ে রেমাক্রি। রেমাক্রি পৌঁছাতেও দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগবে। রেমাক্রি থেকে পায়ে হেঁটে আমিয়াখুম।
রেমাক্রি থেকে নাফাকুম হয়ে, নাইক্ষ্যং ঝিরি ধরে জিনা পাড়া পৌঁছাবেন। এখানে আপনার সময় ব্যয় হবে প্রায় চার ঘণ্টায়। এতেই প্রথম দিন রাত হয়ে যাবে। সেই রাত জিনাপাড়ায় আপনাকে অবস্থান করতে হবে। জিনাপাড়া থেকে পরের দিন হেঁটে দেবতা পাহাড় দিয়ে আমিয়াখুম পৌঁছে যাবেন। সময় লাগবে মাত্র দুই ঘণ্টা। সেখান থেকে ভেলায় চড়ে সাতভাইখুম।