বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের জন্য বিখ্যাত চাঁদপুর। চাঁদপুরকে তাই ‘ইলিশের বাড়ি’ বলা হয়। চাঁদপুর শহরটি আরো অনেক প্রসিদ্ধ স্থান থাকলেও সূর্যাস্ত দেখার আদর্শ এক স্থান – বড় ষ্টেশন (Boro Station) যা পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মিলনস্থল। যা মোলহেড নামেও বেশ পরিচিত। এখানে দূর থেকে পানির রং দেখে সহজেই নদীগুলোকে চেনা যায়। কমলা রঙের সূর্য ধীরে ধীরে অস্তে যাচ্ছে, আকাশ কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন, একটু দূরে ছোট ছোট নৌকা ভেসে বেড়াচ্ছে, স্রোতের শ্রুতিমধুর শব্দ আপনার কান পর্যন্ত ধ্বনিত হচ্ছে, ঘরে ফেরা পাখিগুলোর কলকাকলিতে চারিদিক মুখর হয়ে আছে, এ দৃশ্য যেন স্বর্গীয় দৃশ্যকেও হার মানায়।
চাইলে ট্রলার, স্পীডবোট কিংবা ডিঙি নৌকায় করে ঘুরে আসতে পারবেন ১/১.৫/২ কি.মি দূরের বেশ কয়েকটা চর থেকে। দেখবেন তিন নদীর (পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া) মোহনার বিশালতা।
বড় ষ্টেশন থেকে একটু হেঁটে গেলেই মাছ ঘাট। এখানে ইলিশ মাছ প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং জেলেরা নদীতে ইলিশ মাছ ধরার পর এখানেই নিয়ে আসে। মাছঘাট পুরাতন রেল ষ্টেশনের ঠিক বিপরীত পাশেই। এটা মূলতঃ ইলিশের পাইকারী বাজার। বাজারের আড়তজুড়ে ইলিশ আর ইলিশ। ট্রলার থেকে ঝাঁকায় ঝাঁকায় মাছ আসছে। সেগুলো মেঝেতে থরে থরে বরফ দিয়ে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে, তারপর হচ্ছে ‘ডাক’। ডাক মানে নিলামে পাইকারেরা মাছ কিনে নিয়ে আবার বরফকুচি দিয়ে বড় বড় ককশীটের বাক্সে মাছগুলো রাখেন। এরপর ছোট বা বড় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন সারা দেশে, এমনকি বিদেশেও।
আড়তে ইলিশের দাম নির্ভর করে এর ওজন আর কয়টা কিনবেন তার ওপর। ৬০০ থেকে শুরু করে ২২০০ টাকা কেজি পর্যন্ত দাম চাইলেন বিক্রেতারা। ওজন ৬০০গ্রাম থেকে ১কেজি ৮৫০গ্রাম পর্যন্ত। এখানে হাজারো ইলিশের ভিড়ে কেনাকাটা করতে গেলে মুলোমুলিটা ভালোই করতে হবে।
আর হ্যা, চাঁদপুর গেলে অবশ্যই শহরের কালীবাড়ি মোড়ে (লঞ্চঘাট থেকে ১০ টাকা অটো ভাড়া) “ওয়ান মিনিট” এর ইনস্ট্যান্ট আইসক্রিম খেতে ভুলবেন না। ৪০ টাকার এক কাপ আইসক্রিমের স্বাদ মুখে লেগে থাকবে অনেকদিন। এছাড়া এই দোকানের গরম গরম রসগোল্লা আর দধির স্বাদও অসাধারণ।।
কিভাবে যাবেনঃ
সদরঘাট থেকে সকাল ৭ টা থেকে প্রতি ঘন্টায় লঞ্চ ছেড়ে যায় চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। ডেকের ভাড়া জন প্রতি ১০০ টাকা । বিজনেস ক্লাস চেয়ার ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। কেবিন ভাড়া ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা।
সকালের লঞ্চে রওনা দিলে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টায় পৌছানো যাবে চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে। ঘাট থেকে ৩০ থেকে ৪০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে যেতে পারবেন বড় স্টেশন তিন নদীর মোহনায় যেটা পদ্মা, মেঘনা এবং ডাকাতিয়ার মিলনস্থল নামে পরিচিত।
এছাড়া সায়েদাবাদ থেকে বাসযোগে চাঁদপুর যাওয়া যায় এবং কমলাপুর থেকে ট্রেনে লাকসাম নেমে সেখান থেকে চাঁদপুরে যাওয়া যায়। তবে লঞ্চে যাওয়ার মজাই আলাদা। সেখানে মেঘনার তাজা ইলিশ দিয়ে.১০০ থেকে ১৫০ টাকায় দুপুরের খাবার সেড়ে নিতে পারেন। কিছুক্ষন ঘুরে বিকাল ৫ টার লঞ্চে আবার ঢাকা ফিরে যেতে পারবেন রাত ৯ টার মধ্যেই।