এখানে ঘুরতে আসা অনেক পর্যটকই বার্ড প্রতিষ্ঠানটির নাম শুনলে ভাবেন এখানে অনেক অনেক পাখি থাকবে। যেমন নাম তেমনটা হওয়া উচিত। এর আশা দুইই। ছায়া সুনিবিড়ি মমতা ঘেরা রাস্তা। দু’পাশে নানা রকমের নানা রংয়ের ফুল ও ফলের বাগান। পাখির কূজন আর ফুলের গন্ধে চারদিক ঘিরে রেখেছে বার্ডকে। কিস্তর সবুজের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে কৃষ্ণচূড়া আর রঙ্গন। এ অপরূপভার গড়ে তোলেন ড. আখতার হামিদ খান। বার্ড মূলত বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত মানুষের প্রশিক্ষন একাডেমি।
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী(Bangladesh Palli Unnayon Academy) সংক্ষেপে বার্ড । এত পরিচ্ছন্ন একটি প্রতিষ্ঠান, এত সুন্দর শৈল্পিক তার অবকাঠামো, এক বিল্ডিং হতে অপর বিল্ডিয়ে আসা যাওয়ার জন্য ছাদযুক্ত ওয়াকওয়ে, আর তারই পার্শ্বে নানাহ রঙ্গের ফুলের বাগান কার না চোখে পড়ে।
কুমিল্লা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার এবং ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা বাইপাস নন্দনপুর থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে লালমাই আর শালবন পাহাড়ের পাদদেশে কোটবাড়ীর নয়নাভিরাম সৌন্দর্যমন্ডিত সবুজ গ্রামীণ পরিমন্ডলে ১৫৬ একর জমির উপর একাডেমীর অবস্থান। একাডেমীর পশ্চিমে কুমিল্লাস্থ বিজিবি- এর হেডকোয়ার্টার; দক্ষিণে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ; শালবন বিহার; আর নব প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়; পূর্বে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এবং উত্তরে কুমিল্লা সেনানিবাস।
আমার চোখে এটি একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ ও পরিচ্ছন্ন প্রতিষ্ঠান। বার্ড ক্যাম্পাসে রয়েছে ব্যাংক, ডাকঘর, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য মেডিকেল সেন্টার, ৩৫০ জনের আবাসনের জন্য রয়েছে ভিআইপি স্যুাট, গেষ্ট হাউজ, বন কুটির, রাণী কুটিরসহ ৭টি হোস্টেল; স্বল্পমূল্যে আপ্যায়নের জন্য রয়েছে উন্নত মানের বড় পরিসরের ২টি ক্যাফেটেরিয়া; শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যাপিঠ হিসেবে রয়েছে শিশু বিতান বার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়; খেলাধুলাসহ বিনোদনের জন্য রয়েছে ক্রীড়া ও বিনোদন কেন্দ্র; রয়েছে এক গম্ভুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ এবং একটি আধুনিক গ্রন্থাগার।
বার্ডের প্রধান ফটকের ভিতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সুসজ্জিত মসজিদ। এই ক্যাম্পাসে রয়েছে ১৪৫টি বিরল প্রজাতির ২৫৫৮২টি গাছ। তার মধ্যে ৬১টি প্রজাতির ফলজ গাছের সংখ্যা ১১৪৪৯টি, ৪৩টি প্রজাতির ফুল গাছের সংখ্যা ১২৮৬টি এবং ৪১ টি প্রজাতির বনজ গাছের সংখ্যা ১২৮৪৭টি। ৬১টি প্রজাতির ফলজ গাছের মধ্যে স্টার আপেল একটি গাছ। মসজিদ প্রাঙ্গনে রয়েছে আশ্চার্য এই ফলজ গাছটি। এ গাছের বৈশিষ্ট্য হলো পাতার দু’পিঠ দু’রং-এর। যা বার্ডে আগত প্রশিক্ষণার্থী দেশ বিদেশের সরকারী-বেসরকারী গণ্যমাণ্য অতিথিবর্গের দৃষ্টি নিমিষেই আকর্ষণ করে থাকে। নিস্তব্ধ সন্ধায় শিয়ালের হুক্কা হুয়া ডাকে পর্যটক/অতিথি/প্রশিক্ষণার্থী ও ক্যাম্পাসে বসবাসকারীদের মনে শিহরণ জাগালেও ভোরে নানাহ পাখির কিঁচির মিচির শব্দে তাঁদের ঘুম ভাঙ্গে। রোদের কিরণে ঝলমলে লাবন্যময় সবুজ শ্যামলিমার দৃশ্য মনের অকপটে কখন যে দাগ কেটে যায় তা বুঝাই যায় না।
কুমিল্লা কিভাবে যাবেন –
ট্রেনে করে আসলেঃ কুমিল্লা স্টেশন আসতে পারবেন ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম, চাঁদপুর, নোয়াখালী ইত্যাদি স্থান থেকে, কুমিল্লা নেমে চলে আসবেন অটো-রিক্সা বা রিকশা করে কান্দিরপাড়, তার পর যাবেন নিচের বর্ণনা অনুসারে ভাড়া নিবে ১০ টাকা প্রতিজন। ট্রেন ভাড়া সম্পর্কে রেলওয়ে স্টেশনের নিজস্ব ওয়েব সাইট হতে জেনে নেবেন।
ঢাকা থেকে কুমিল্লা – ঢাকা যাত্রাবাড়ি থেকেএশিয়া ট্রান্সপোর্ট, এশিয়া লাইন বা তিশা ট্রান্সপোর্ট (এসি,নন-এসি দুটুই আছে), কমলাপুর থেকে রয়েল কোচ এয়ার কন্ডিশেন করে আসতে পারেন । রয়েল কোচ অনেক কমফোর্টেবল কিন্তু স্লো। যেকোনটিতে ঊঠে পড়ুন, আসার সময় দেখবেন বুড়িগঙ্গা ব্রিজ, মেঘনা ব্রিজ, দাউদকান্দি ব্রিজ আর দুপাশের রাস্তায় সকালের সুর্যিমামার আলোরশ্মি আপনাকে বিমহিত করবেই । আপনি প্রকৃতিপ্রেমি বিদায় নয়ন জুড়ানোর জন্য অন্য কিছু প্রয়োজন হবে না। দেখতে দেখতে চলে আসবেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এসে নেমে যাবেন অথবা কোটবাড়ি বিশ্বরোডে ও নামতে পারেন। ভাড়া নেবে ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত। ২থেকে ২.৫ ঘন্টা সময় লাগবে।
কোটবাড়ি বিশ্বরোডে থেকে কোটবাড়ি যেতে সি.এন.জিতে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ২০/৩০।
চট্রগ্রাম থেকে কুমিল্লা – সৌদিয়া ট্রান্সপোর্টে (এসি,নন-এসি) চড়ে আসবেন কুমিল্লার পাদুয়ার বাজার বিশ্বরোড দিয়ে জাঙ্গালিয়া নেমে যাবে, ভাড়া নেবে ২০০-২৫০ টাকা। ২.৫থেকে ৩ ঘন্টা সময় লাগবে। চট্রগ্রাম বাসীদের কুমিল্লা-চট্রগ্রামে রোডের আশে পাশের দৃশ্য বর্ণনা করে দিতে হবে না, অপূর্ব সুন্দর এই পথের দু দিক। যাই হওক, জাঙ্গালিয়া নেমে চলে আসবেন টমছমব্রিজ অটোতে করে ৫টাকা নিবে।
কুমিল্লা শহর থেকে কোটবাড়ি- কুমিল্লা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার এবং ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা বাইপাস নন্দনপুর থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে লালমাই আর শালবন পাহাড়ের পাদদেশে কোটবাড়ীর।
কুমিল্লা টমছমব্রিজ চৌমুহনী হতে পশ্চিম দিকের রাস্তায় দাঁড়ানো সিএনজি যোগে কোটবাড়ি যেতে পারবেন। ভাড়া ২০ টাকা। দৌলতপুর হয়ে যাবে।
সিএনজি থেকে নেমেই দেখতে পাবেন তাক লাগানো বার্ডের গেট। তবে বার্ডের ভিতরে ঢুকতে দিবে না কারও রেফারেন্স ছাড়া। অবশ্য জাতীয় দিবসগুলোতে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে।
বার্ড একটি আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান। বার্ড মূলত 3টি বিষয়ের উপর কাজ করে গবেষণা, প্রায়োগিক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ।
বার্ড এর ইংরেজি রূপ-Bangladesh Academy for Rural Development. (বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি) ।
বার্ড সম্পকিত তথ্য গুলো আপডেট করতে হবে।