বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্ব দক্ষিণে টেকনাফ উপজেলা। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে টেকনাফের দূরত্ব প্রায় ৮৬ কিলোমিটার। টেকনাফ শহর ছাড়িয়ে দক্ষিণে আরও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে এখানকার সমুদ্র সৈকত(Teknaf Samodra Soikot)।
টেকনাফ সমুদ্র সৈকত (Teknaf Beach) দেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর সৈকত গুলোর একটি। পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ (৮০ কিলোমিটার) বালুময় সৈকত হল টেকনাফ উপত্যকা। দীর্ঘ এ সৈকতে বেড়াতে ভালো লাগবে সবার। জেলেদের আনাগোনা এ সৈকতে বেশি। বিশেষ করে খুব সকাল কিংবা সন্ধ্যায় জেলেদের বেশি মাছ ধরতে দেখা যায় এ সৈকতে। এছাড়া দেশের অন্যান্য সৈকতগুলো থেকে একেবারেই আলাদা এ সৈকত। এত রঙিন বাহারি জেলে নৌকা বাংলাদেশের আর কোন সমুদ্র সৈকতে দেখা যায় না। যারা নির্জনে সমুদ্র উপভোগ করতে চান তাদের জন্য টেকনাফ আদর্শ জায়গা। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের তুলনায় টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের পানি অধিক পরিষ্কার।
টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় সারিবদ্ধভাবে জেলেদের মাছ ধরার বর্ণিল সব ইঞ্জিন চালিত নৌকা। লাল, নীল, বেগুনি ইত্যাদি বাহারি রঙের পতাকা দিয়ে জেলেরা তাদের নৌকা গুলোকে সাজিয়ে রাখেন। নৌকাগুলোর গায়েও থাকে রংতুলির শৈল্পিক আঁচড়।
ইন্দো-হিমালয় এবং ইন্দো-মালায়ান পরিবেশে জন্মানো উদ্ভিদের বেড়ে উঠার জন্য টেকনাফ হল আদর্শ স্থান। এখানে বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর পাশাপাশি দেখা মিলবে ম্যানগ্রোভ, লেগুন, মাডফ্ল্যাটসহ নানা পদের উদ্ভিদের। টেকনাফে প্রাকৃতিকভাবেই ম্যানগ্রুভ বন রয়েছে। এই ম্যানগ্রুভ বন প্রায় ১৬১ প্রজাতির মাছের জীবন ধারনে সাহায্য করে আসছে।এছাড়া এ সৈকতের পাশে একটু দূরেই আছে ঘন ঝাউবন।এখানে আছে সৈকত লাগোয়া জেলেদের বেশ কিছু বসতি। পূর্ণিমার জোয়ারের ঢেউ টেকনাফ সৈকত বিশাল আকার ধারণ করে। এসময় সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ এসে একেবারে তীরে আছড়ে পড়ে।
এখান থেকে উত্তর দিকে সৈকতের পাশ দিয়ে আকাশ ছুঁয়েছে তৈঙ্গা পাহাড়। সাগর আর পাহাড়ের নিবিড় বন্ধুত্ব দেখা যাবে এখানে। তাছাড়া এত সুন্দর, এত সাজানো বেলাভূমি দেশের অন্য কোন সৈকতে কমই দেখা যায়।টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের মূল প্রবেশ পথ থেকে হাতের বাঁ দিকে চলে গেলে যাওয়া যায় শাহ পরীর দ্বীপের কাছাকাছি। আর হাতের ডান দিকে চলে গেলে যাওয়া যাবে হাজামপাড়া, শিলখালী কিংবা শামলাপুর সৈকতের দিকে।
টেকনাফ সৈকতের আরেক আকর্ষণ সকাল-বিকাল জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য উপভোগ করা। চিংড়ির পোনা শিকারীরা এ সৈকতে নিজস্ব কৌশলে সর্বদা ব্যস্ত থাকেন পোনা ধরতে। আর দূর সমুদ্র থেকে নৌকা বোঝাই মাছ নিয়ে শত শত জেলে এখানেই আসেন সকাল-বিকাল।
কোথায় থাকবেন
টেকনাফে থাকার জন্য আছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল নে টং (০৩৪২৬-৭৫১০৪), এসি ডবল রুম ১ হাজার ৯শ’ টাকা। এসি রুম ৩ হাজার ১শ’ টাকা এবং সাধারণ দ্বৈত কক্ষ ১ হাজার ৩শ’ টাকা।
পর্যটনের এই মোটেল টেকনাফ শহরের প্রায় আট কিলোমিটার আগে। ঢাকার পর্যটন করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় থেকে এই মোটেলে বুকিং করা যায়।
তবে যারা টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের একেবারে কাছাকাছি থাকতে চান তাদের জন্য আছে সেন্ট্রাল রিসোর্ট (০১৮৩৮৩৭৯৩৭২-৭৩)।
এখানকার দামি রুমের ভাড়া ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৩শ’ টাকা। ইকনোমি রুমের ভাড়া ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৮শ’ টাকা।
এছাড়া এখানে সাগরকনা, মেঘ বালিকা ও নীলাচল নামে তিনটি কটেজ আছে। প্রতিটি কটেজে আছে দুটি করে রুম। ভাড়া ২ হাজার টাকা করে।
ঢাকা থেকেও এেই রিসোর্টে আগাম বুকিং দেওয়া যায়। যোগাযোগ- সর্দার প্লাজা, ৫ম তলা, ৯৬, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, নর্থ সাউথ রোড, ঢাকা ১১০০। ফোন ০২-৭১৬৫৫২৮, ৯৫৫০৯১৪, ০১৭১১৫৩৪২০৫।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ যাওয়া যায় সড়ক পথে। এ পথে চলাচলকারী এসি বাস হল সেন্টমার্টিন সার্ভিস। ভাড়া ১ হাজার ২শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা।
এছাড়া শ্যামলী পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, ইউনিক সার্ভিস, হানিফ এন্টারপ্রাইজের নন এসি বাসও চলে এই পথে। ভাড়া ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা।
কক্সবাজার থেকে বাস ও মাইক্রোবাসে টেকনাফ যাওয়া যায়। বাস ভাড়া ৮০ থেকে ১২০ টাকা। আর মাইক্রোবাসে ১শ’ থেকে ১৫০ টাকা।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফের বাস ছাড়ে আন্তঃজিলা বাস টার্মিনাল থেকে আর মাইক্রোবাস ছাড়ে শহরের কলাতলী এবং টেকনাফ বাইপাস মোড় থেকে।
টেকনাফ শহর থেকে সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যাবে অটো রিকশায়। সময় লাগে আধা ঘণ্টার কম।
প্রয়োজনীয় তথ্য
টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে লাইফ গার্ডের কোন ব্যবস্থা নেই। জোয়ার-ভাটার সাংকেতিক কোন চিহ্ন থাকেনা এ সৈকতে। এখানকার জেলেদের কাছে জোয়ার-ভাটার সময়ের সঠিক তথ্য থাকে।
তাই সমুদ্র নামতে চাইলে জোয়ার ভাটা সম্পর্কে জেনে নিন। ভাটার সময় কিংবা একাকী সমুদ্রে নামবেন না।