গাজিপুর জেলার টংগীর পুবাইলে প্রাকৃতিক এক ভূমিকে অবিকৃত রেখে ডিজাইনারের নিপুণ ছোঁয়ায় আরো প্রাকৃতিক করা হয়েছে একটি রিসোর্ট যার নাম জল জঙ্গলের কাব্য রিসোর্ট (Jol O Jongoler Kabbo) তা আবার অনেকের কাছে পাইলট বাড়ি হিসেবে পরিচিত। জোছনা দেখতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন জল জঙ্গলের কাব্য থেকে। বিলের ওপর জোছনার আলো এক অন্য রকম অনুভূতি দিবে আপনাকে। অল্প খরচে সারাদিন ঘুরে আসার জন্য এর চেয়ে ভাল জায়গা হবে না। প্রাকৃতিক গাছপালা আর শান্তু বিলের পারে বসে কাটিয়ে দিন ১ টা দিন। ঢাকার আসে পাশে একদিনের মধ্যে ঘুরে আসার জন্যে এর থেকে ভালো জায়গা খুব কমই পাবেন।
গ্রামীণ পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে পুরো এলাকাটাতে। ১০-১২টা শেড রয়েছে পুরো এলাকায়। ঘুরতে আসা গ্রুপের সদস্য সংখ্যা অনুসারে শেড বন্টন করা হয়। প্রতিটি শেডের আলাদা নাম আছে। যেমন বকুল তলা, বট তলা…। রিসোর্টের মাঝখানটা দেখতে একদম গ্রামীণ হাটের মতো। একদিকে ঢাক আর দো-তারার সুরে গায়েন গেয়ে উঠেন লোকসংগীত। একপাশে ঢেঁকীতে চাল গুড়া করা হচ্ছে; চালের আটা দিয়ে রুটি আর চিতই পিঠা তৈরি হবে। এক পাশে বিশাল হেসেলঘর- সবচেয়ে ব্যস্ততম জায়গা, ৭-৮ জন পুরোদমে খাবার প্রস্তুত করছেন। একদিকে বেশ বড় জায়গা নিয়ে চা-ঘর, একজন অবিরাম চা কফি বানাচ্ছেন। সারাদিনে যত কাপ ইচ্ছা খান; আলাদাভাবে টাকা দিতে হবে না। চা-ঘরের পাশেই গাছের ছায়ায় আছে আড্ডার ব্যবস্থা।
পাশেই বেশ কয়েকটি নৌকা বাঁধা। ইচ্ছা হলে জলের সাথে সখ্যতা করে আসেন। একটু বিলের ভেতর গেলে দেখতে পাবেন সারি-সারি ছোট নৌকাতে মৎস্য শিকারিরা পানির দিকে অধীর আগ্রহে বকের মতো তাকিয়ে আছেন। মাছ পাবার আশায়। বিলে শাপলার অভাব নেই। জল-জংগলে এখন প্রায় ২০ জন লোক কাজ করেন। সকল কর্মীই জল-জংগলের প্রতিবেশি।
‘জল-জংগলের কাব্যে’ গেলে সবার মনেই একটা কমন প্রশ্ন ঘুর-পাক খায়, রিসোর্টটির আয়তন কত? রিসোর্ট সংশ্লিষ্ট সবাই বলেন ৯০ বিঘা। সঠিক তথ্যটি হচ্ছে প্রায় ৭৫ বিঘা (তথ্যসূত্রঃ কামাল মাহমুদ, সত্ত্বাধিকারী, জল-জঙ্গল)। রিসোর্টটির নিজস্ব ভূমি ৭৫ বিঘা হলেও এটি বিস্তীর্ণ ও দিগন্তসম বিলের সাথে সংযুক্ত; তাই জল কাব্য মাপজোখের মধ্যে না রাখাই ভালো।
জল জঙ্গলের কাব্য পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে গড়ে তোলা। এর ঘরগুলো বাঁশ-বেড়ার। বেলাই বিল মানে ওয়াটার বডিকে কেন্দ্রীয় চরিত্র রেখে তৈরি করা হয়েছে জল জঙ্গলের কাব্য। নিজস্ব জমির শাক-সবজি ও ধান দিয়ে খাবার তৈরি হয়। বিল থেকে মাছও ধরা হয়। সকালে চালগুঁড়ার রুটির কথা অনেকে মনে রাখেন। রিসোর্ট কর্মীরা পেশাদার, তবে বাণিজ্যিক নয়।
খরচঃ
এখানে জনপ্রতি নেয়া হয় ৩০০০ টাকা নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার সহ। খরচটা একটু বেশী মনে হতে পারে। তবে খাবার বহরা দেখলে তা আর মনে হবে না। সারাদিনের জন্যে ১৫০০ টাকা জনপ্রতি (সকালের সাস্তা, দুপুরের খাবার আর বিকেলে স্ন্যাক্স)। শিশু (৫-১০ বছর), কাজের লোক ও ড্রাইভার – ৬০০ টাকা জনপ্রতি।
যোগাযোগ : ০১৭৯২৯২৯৭২৭, ০১৯১৯৭৮২২৪৫।
কিভাবে যাবেনঃ
মহাখালি থেকে নরসিংদি বা কালিগন্জগামী যে কোন বাসে উঠুন। ১ ঘন্টা পর পুবাইল কলেজ গেট এলাকায় নেমে পড়ুন। ভাড়া নেবে ৪০ টাকা। এরপর একটা ব্যাটারীচালিত রিক্সায় করে পাইলট বাড়ি। পুবাইল কলেজগেট থেকে জল-জংগলের কাব্য মাত্র ৩ কিলোমিটার। গেলে এসে ফোন করুন, গেট খুলে দেবে। তবে অবশ্যই আগে বুকিং থাকতে হবে।
অথবা ঢাকার সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, আজিমপুর, মহাখালী থেকে গাজীপুর পরিবহন, ঢাকা পরিবহন, ভিআইপি পরিবহন ও বলাকা পরিবহনে শিববাড়ী চলে যাবেন। ভাড়া ৭০ টাকা। শিববাড়ী থেকে অটোরিকশায় ভাদুন (ইছালি) জল জঙ্গলের কাব্য রিসোর্ট। ভাড়া ৮০-১০০ টাকা।
জয়দেবপুর রাজবাড়ির পাশদিয়েও যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে গেলে টঙ্গী স্টেশন রোড বা ৩০০ ফিট দিয়ে যাওয়া যায়।
ধন্যবাদ ।Very Goooooood