এই প্রথম কোন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রমোদতরী বাংলাদেশে আসছে যা দেশের পর্যটনশিল্পকে বিকশিত করতে সাহায্য করবে এবং খুলে দিবে পর্যটনের দিগন্ত। জাহাজটি ১০০ জন পর্যটক এবং সমসংখ্যক ক্রু নিয়ে এ মাসের মাঝামাঝি দেশে আসছে।
এই জাহাজের পর্যটকরা বাংলাদেশে সুন্দরবন এবং মহেশখালী দ্বীপ ঘুরে দেখবেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় একক প্যারাবন (ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট) সুন্দরবনের খ্যাতি রয়েছে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে। এছাড়া, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈতকখ্যাত কক্সবাজারের কাছে মহেশখালী দ্বীপের অবস্থান।
সিলভারসির স্থানীয় অংশীদার জার্নি প্লাসের প্রধান নিবার্হী তৌফিক রহমান বলেন, “প্রমোদতরীর এই সফর বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে তুলে ধরবে।”
তিনি আরো জানান যে এই জাহাজের পর্যটকদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের নাগরিক। ভ্রমণের জন্য জনপ্রতি ভাড়া পড়েছে ১৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা বা ১৭,১৫০ ডলার।
সিলভারসির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, মহেশখালীতে বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবেশের নৈসর্গিক রূপ দেখতে পাওয়া যায়। এখানে পর্যটকরা স্থানীয় বাহন রিক্সা ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে পারবেন। এছাড়াও, এখানে রয়েছে একটি বৌদ্ধ মন্দির। এখানকার ঠাকুরতলা গ্রামে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রাখাইনদের একটি বসতি।
এই ভ্রমণকে সার্থক করতে বিভিন্ন মন্ত্রনালয় এবং সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির সর্বাত্মক সহযোগিতা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তৌফিক বলেন, পর্যটন সচিবকে প্রধান করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। সেই টাস্কফোর্সটি সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রমোদতরীভিত্তিক পর্যটনের বিষয়টি সমন্বয় করছে।
বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের নির্বাহী অফিসার একেএম রফিকুল ইসলাম জানান, জাহাজেই এই পর্যটকদেরকে তাদের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
“আমরা এর মাধ্যমে ভিসা ফি হিসেবে হয়তো কিছু টাকা পাবো। অথবা ভ্রমণ কর, খাবার খরচ, যাতায়াত এবং আবাসন বাবদ হয়তো আরো কিছু টাকা আসবে, তবে এর ফলে যে সুনাম আসবে তা থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবো।” তিনি আরো বলেন, “এতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল হবে এবং ভবিষ্যতে দেশের পর্যটনশিল্প আরো প্রসারিত হবে।”
বাংলাদেশ অনেকদিন থেকেই এমন মহাসাগর ক্রুজ পর্যটনের তালিকায় নাম লেখানোর জন্যে চেষ্টা করে আসছিল। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশি দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপের মতো বাংলাদেশও হয়ে উঠুক একটি পর্যটন গন্তব্য। সম্প্রতি বাংলাদেশের আরেক প্রতিবেশি মায়ানমার এই তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
কয়েক বছর প্রচেষ্টার পর সিলভারসিকে রাজি করাতে সমর্থ হয় জার্নি প্লাস। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি মহেশখালী ও সুন্দরবন অঞ্চলের অবকাঠামো ও নিরাপত্তা বিষয়টি সরেজমিনে দেখার জন্য একটি দল পাঠায়।
“কলম্বো থেকে কলকাতা এশিয়া অভিযাত্রা ক্রজ” নামের এই অভিযাত্রা শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় শুরু হবে ১১ ফেব্রুয়ারি এবং ১৬ দিনের ভ্রমণের পর শেষ হবে ভারতের কলকাতায়।
শ্রীলঙ্কার কলম্বো, গ্যালি, কিরিন্দা এবং ত্রিনকোমালি এবং ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ঘুরে প্রমোদতরীটি বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করবে। সফরের ১২তম দিনে জাহাজটি বাংলাদেশের মহেশখালী দ্বীপে এসে পৌঁছাবে।
এর ১৩ ও ১৪তম দিনে পর্যটকরা আসবেন রয়েল বেঙ্গলখ্যাত সুন্দরবনে। জাহাজটি তখন পশুর নদীতে অবস্থান করবে এবং স্থানীয় গাইড ও রেঞ্জারদের সহায়তায় তারা ঘুরে দেখবেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় একক নোনাবন।
সুন্দরবনে পর্যটকরা বন্যপ্রাণীর অভরায়ণ্যও দেখতে পাবেন। পরিসংখ্যানে বলা হয় এই বনে ৩৫০টির মতো রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে ছোট লেজওয়ালা বানর, ধুসর নকুল, চিতা বিড়াল, বন বিড়াল, নোনা পানির কচ্ছপ, বন্য শুকর, বাদুর এবং চিত্রল হরিণ।
ভ্রমণের ১৫তম দিনে প্রমোদতরীটি বাংলাদেশের সীমানা ছেড়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করবে। এরপর জাহাজটি হুগলি নদীর ভেতর দিয়ে কলকাতায় পৌঁছাবে।