মুক্তাগাছা রাজবাড়ী – ময়মনসিংহ

মুক্তাগাছার রাজবাড়ী(Muktagachara Rajbari) বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন জমিদার বাড়ী। ময়মনসিংহ থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে ময়মনসিংহ টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জামালপুর মহাসড়কের সংযোগ স্থল থেকে ১ কিলোমিটার উত্তর পূর্বদিকে মুক্তাগাছার রাজবাড়ির অবস্থান। মুক্তাগাছার তদানীন্তন জমিদার বৃটিশ রাজন্য কর্তৃক প্রথমে রাজা এবং পরে মহারাজা উপাধি পেয়েছিলেন বিধায় জমিদারের বাসভবন রাজবাড়ী হিসেবে আখ্যায়িত হতো।

জমিদার আচার্য চৌধুরী বংশ মুক্তাগাছা শহরের গোড়াপত্তন করেন । আচার্য চৌধুরী বংশ শহরের গোড়াপত্তন করে এখানেই বসতি স্থাপন করেন। আচার্য চৌধুরী বংশের প্রথম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরী ছিলেন বগুড়ার বাসিন্দা। তিনি মুর্শিদাবাদের দরবারে রাজস্ব বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তিনি ছিলেন নবাবের খুবই আস্থাভাজন। নবাবের দরবারে রাজস্ব বিভাগে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১১৩২ সালে তিনি সেই সময়ের আলাপসিং পরগণার বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন।

মুক্তাগাছার জমিদারির মোট অংশ ১৬টি। অর্থাৎ ১৬জন জমিদার এখানে শাসন করতেন।

বাড়ির বেশ মুখে রয়েছে বিশাল ফটক। ফটক পেরিয়ে ভেতরে গেলে জীর্ন প্রায় বাড়িটির পরতে পরতে সৌন্দর্যে চোখে জুড়িয়ে যাবে।

প্রায় ১০০ একর জায়গার ওপর নির্মিত এই রাজবাড়ি প্রাচীন স্থাপনা শৈলীর অনন্য নিদর্শন। বর্তমানে রাজবাড়িটি প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের অধীন।

বাড়িরটি ভেতরে গেলে দেখা পাবেন একতলা একটি ভবনের। লোহার পাত আর কাঠের পাটাতন দিয়ে করা ছাদ- চমৎকার। তাছাড়া লোহার পাতের নানা রকম নকশা এ বাড়ির চারপাশে দৃষ্টি এড়াবেনা। এখানে রয়েছে একটি রঙ্গমঞ্চ।

দৃষ্টিনন্দন রাজ রাজেশ্বরী মন্দিরটির দেখা পাবেন রাজবাড়ি প্রবেশ মুখেই। রাজকোষাগার, টিন আর কাঠের নির্মিত অসাধারণ এক দুইতলা রাজপ্রাসাদ, রানীর অন্দরমহল।

এখানকার লম্বা লম্বা করিডোরেও আছে ভীষণ মুগ্ধতা। তাছাড়া আরও আছে লাইব্রেরি, দরবার হল, কাচারিঘর, লক্ষীপূজা আর দূর্গাপূজার ঘর।

রাজবাড়ির পেছনে রয়েছে একটি গোপন সূরঙ্গ। মুক্তাগাছা রাজবাড়ির পাশেই আরও দুটি রাজবাড়ি আছে। শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ- এর মধ্যে একটি, অন্য বাড়িটি ছিল সে সময়কার হাতিশালা। বর্তমানে যা আমর্ড ব্যাটেলিয়ান পুলিশ হেডকোয়ার্টার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কোথায় থাকবেন

সময় নিয়ে গেলে ময়মনসিংহ শহরে থাকার ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমির ইন্টারন্যাশনাল এবং হোটেল মুস্তাফিজ’য়ের ওপর ভরসা রাখা যায়। আমির ইন্টারন্যাশনাল এবং হোটেল মুস্তাফিজ সহ ময়মনসিংহ শহরের অন্যান্য হোটেলের গুলোর বিস্তারিত দেখতে এখানে ক্লিক করুন। 

খাবার নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। প্রেসক্লাব ক্যান্টিনের মোরগ পোলাওয়ের খুব নামডাক। আর আছে হোটেল ধানসিঁড়ি ও হোটেল সারিন্দা।

ময়মনসিংহ শহরে যাবেন আর বিখ্যাত মুকুল ভাইয়ের চায়ের দোকান ঢুঁ মারবেন না তাকি করে হয়। মুকুল ভাইয়ের চা, সিঙ্গারা আর পুরি দারুণ মুখরোচক।

সেদিক থেকে মুক্তাগাছা অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও মুক্তাগাছার মণ্ডার সুখ্যাতি সারা দেশজুড়ে। পেট পুরে খেয়ে আসুন সঙ্গে নিয়েও আসুন!

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সরাসরি ময়মনসিংহ বাস সার্ভিস সারাদিন চলাচল। মহাখালি থেকে চলা সেসব বাসের মধ্যে অন্যতম হল নিরাপদ, আলম এশিয়া, শামীম এন্টারপ্রাইজ, এনা এবং সৌখিন। ভাড়া এসি ৩৭০ টাকা, নন এসি ২৫০টাকা।

ময়মনসিংহ থেকে মুক্তাগাছা বাস সার্ভিস রয়েছে। চাইলে মুমিনুন্নেসা মহিলা কলেজ মোড় থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চড়েও মুক্তাগাছা যেতে পারেন। মাথা পিছু ভাড়া পড়বে ২০ টাকার মতো।

ময়মনসিংহ-মুক্তাগাছা একদিনে ভ্রমণ সারতে চাইলে নিজস্ব বাহন ভালো।

 

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: আবদুর রহমান,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: February 27, 2018

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.