নাওডাঙ্গার জমিদার বাড়ি – কুড়িগ্রাম

কালের সাক্ষী নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি(Naodanga zamindar Bari)। অবিভক্ত ভারতবর্ষে অনেক আগে নাওডাঙ্গা পরগনার জমিদার বাহাদুর প্রমদারঞ্জন বক্সী এটি নির্মাণ করেন। তার শাসন আমলে এই পরগনার অধীন ছিল কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিদ্যাবাগিশ, শিমুলবাড়ী, তালুক শিমুলবাড়ী, কবির মামুদ প্রভৃতি। পাঙ্গা এলাকায় এ জমিদারের আরেকটি জোত ছিল।

এটির দেখাশোনাসহ পূর্ণ পরিচালনার ভার ন্যস্ত ছিল শিবপ্রসাদ বক্সীর ওপর। তার ছিল তিন ছেলে। বীরেশ্বর প্রসাদ বক্সী, বিশ্বেশ্বর প্রসাদ বক্সী ও বিপুলেশ্বর প্রসাদ বক্সী। এর মধ্যে বীরেশ্বর প্রসাদ বক্সীকে পরে জমিদারের দায়িত্বভার দেওয়া হয়। সে সময় একটি মাইনর স্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলেন তিনি।

এখন তার পাশে গড়ে উঠেছে একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। তার ইচ্ছায় সে সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুণ্য জন্মতিথি প্রতি দোলপূর্ণিমায় বাড়ির সামনে বিস্তীর্ণ ফাঁকা মাঠে দোলের মেলা বসত। সে সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে দোল সওয়ারিরা বাহারি সাজে সজ্জিত হয়ে সিংহাসন নিয়ে এই দোলযাত্রার মেলায় অংশ নিতেন। আমোদ-ফুর্তিতে মেতে উঠত দোলযাত্রার মাঠ। পর্যায়ক্রমে প্রথা অনুযায়ী সবকিছুই চলছিল যথানিয়মে।

১৩০৪ সনের ভূমিকম্পের পর অন্য দুই ভাই কোচবিহার রাজ্যে স্থায়ী বসবাসের জন্য একটি বাড়ি কেনেন। অনেক অনুনয়-বিনয় করে বাবাকে সেখানে পরে নিয়ে যান। ভারতের ওই নতুন বাড়িতে শিব প্রসাদ বক্সী শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর জমিদার শিব প্রসাদ বক্সী সবকিছু ছেড়ে তিনিও চলে যান ভারতে। সীমান্তঘেঁষা ফুলবাড়ী উপজেলায় ক্ষয়িষ্ণু অবয়ব নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি। জমিদার, জমিদারি শাসন, প্রজা, গোমস্তাবিহীন সেটি এখন অরক্ষিত। ইট, চুন, সুরকির নিপুণ গাঁথুনির বিল্ডিংগুলো অসাধু ব্যক্তিরা ভেঙে নিয়ে গেছে। পশ্চিম পাশের একটা দোতলা বিল্ডিং তারা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।

এটির দেখাশোনাসহ পরিচালনার ভার দিয়েছিলেন শিব প্রসাদ বক্সীকে। কুমার বাহাদুর বীরেশ্বর প্রসাদ বক্সী, বিশ্বেস্বর প্রসাদ বক্সী ও বিপুলেশ্বর প্রসাদ বক্সী এ তিনজন জমিদার ছিলেন। মেয়ে ছিল পুটু। বিয়ে হয় রংপুর জেলার মীরবাগের জমিদারের সঙ্গে। তার প্রথম ছেলে বীরেশ্বর প্রসাদ বক্সী পাশ্চাত্যে পড়ালেখা করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কলকাতায় আইন পেশায় কর্মময় জীবন শুরু করেন। তিনি একজন বিচারক ছিলেন।

তার দ্বিতীয় ছেলে বিশ্বেস্বর প্রসাদ বক্সীর হাতে জমিদারির ভার ন্যস্ত করে জমিদার প্রমদা রঞ্জন অবসর নেন। তৃতীয় ছেলে বিপুলেশ্বর প্রসাদ বক্সী ছিলেন প্রকৌশলী। কথিত আছে, পরবর্তী জমিদার জমিদারির ভার নেওয়ার আগে তৎকালীন সময়ে পর পর তিনবার প্রবেশিকা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। তার বাবা জমিদার প্রমদারঞ্জন বক্সী তার ছেলেকে বলেন, ‘তোমার ভাগ্য খারাপ। অনেক ভাগ্যগুণে তুমি আমার সন্তান হিসেবে জন্ম নিয়েছ। বাকিরা যেহেতু পড়ালেখা শিখে অন্য কিছু হতে চায় সেহেতু তোমাকেই আমি আমার জমিদারির ভার দিতে চাই।’ পরে তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়। সে আমলে সেখানে তিনি একটি মাইনর স্কুল গড়ে দেন।

সেটি বর্তমানে নাওডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার পাশাপাশি শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি জমিদার বিশ্বেস্বর প্রসাদ বক্সী ছিলেন সমান অনুরাগী। তার ইচ্ছায় সে সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূর্ণ জন্ম তিথি উপলক্ষে প্রতি বছর দোল পূর্ণিমায় জমিদার বাড়ির সামনে বিস্তীর্ণ ফাঁকা মাঠে দোলের মেলা বসতো।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: February 21, 2018

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.