জিনজিরা প্রাসাদ – ঢাকা

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার দক্ষিনাংশ বর্তমান পুরান ঢাকার কেরাণীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কয়েক শ’ গজ দূরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি জিনজিরা প্রাসাদ(Jinjira Prashad)। ১৭ শতকের শেষার্ধ্বে বাংলার মুগল সুবাহদার দ্বিতীয় ইবরাহিম খান তাঁর প্রমোদকেন্দ্র হিসেবে প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। চার দিকে সুনীল জলরাশির মাঝখানে একখণ্ড দ্বীপ ভূমি জিনজিরা।  এ কারণেই ওই  স্থানে নির্মিত প্রাসাদটির নামকরণ হয় কস্রজাজিরা বা দ্বীপের প্রাসাদ। নারিকেল-সুপারি, আম-কাঁঠালসহ দেশীয় গাছগাছালির সবুজের সমারোহে ফুলে ফুলে শোভিত অপূর্ব কারুকার্যখচিত মোগল স্খাপত্যশৈলীর অনুপম নিদর্শন জিনজিরা প্রাসাদ।প্রাসাদটি নদীর তীর ঘেষে নির্মিত হয়েছিল, এবং  আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে শহর থেকে জিনজিরার মধ্যে চলাচলের জন্য একটি কাঠের পুল ছিল যা দ্বারা বড় কাটরার নিকটে ঢাকা নগরীর সঙ্গে প্রাসাদটির সংযোগ স্থাপিত ছিল। স্থানীয়দের মতে মোগল আমলে লালবাগ দুর্গের সঙ্গে জিঞ্জিরা প্রাসাদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার জন্য বুড়িগঙ্গার তলদেশ দিয়ে একটি সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করা হয়েছিল। এপথে মোগল সেনাপতি ও কর্মকর্তারা আসা-যাওয়া করত। লালবাগ দুর্গেও এমন একটি সুড়ঙ্গ পথ রয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। বলা হয়ে থাকে এই সুড়ঙ্গ পথে যে একবার যায় সে আর ফিরে আসে না। তবে ইতিহাসে এ সম্পর্কে জোরালোভাবে কিছু বলা নেই।

এ প্রাসাদটির বড়কাটরার আদলে নির্মাণ  হলেও কক্ষ ও আয়তন অনেক কম।পশ্চিমাংশে দু’টি সমান্তরাল গম্বুজ, মাঝ বরাবর ঢাকনাবিহীন অন্য একটি গম্বুজ ও পূর্বাংশ দোচালা কুঁড়েঘরের আদলে পুরো প্রাসাদের ছাদ। প্রাসাদের পূর্বাংশে ছাদ থেকে একটি সিঁড়ি নিচে নেমে গেছে। স্খানীয়রা এ প্রাসাদকে হাবেলী নগেরা বা হাওলি নগেরা বলে।  এ প্রাসাদের তিনটি বিশেষ অংশ আজো আংশিক টিকে আছে­ তাহলো­ প্রবেশ তোরণ, পৃথক দু’টি স্খানে দু’টি পৃথক প্রাসাদ, একটি দেখতে ফাঁসির মঞ্চ ও অজ্ঞাত অন্যটি প্রমোদাগার।

পলাশীর যুদ্ধে সর্বস্বান্ত সিরাজদ্দৌলার পরিবার পরিজনকে জরাজীর্ণ জিনজিরা প্রাসাদে প্রেরণ করা হয়েছিল। আর সেই সাথে নবাব আলিবর্দী খাঁর দুই কন্যা­ঘসেটি বেগম ও আমেনা বেগমকেও আনা হয়। তারা দু’জনই পিতার রাজত্বকালে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।অবশেষে এক দিন পরিচারিকাদের সাথে একই নৌকায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। সে দিন বুড়িগঙ্গার তীরের জিনজিরা প্রাসাদে বন্দীদের নিয়ে রক্ষীদল উপস্খিত হয়েছিল। উল্লেখ্য, নবাব আলিবর্দী খাঁ ও তার পরিবার আগেই এখানে স্খান লাভ করেছিল। এভাবে পরাজিত নবাবের পরিবার-পরিজন জিনজিরা প্রাসাদে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তার পর মীরজাফরের পুত্র মীরনের চক্রান্তে ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দের গ্রীষ্মের কোনো এক সন্ধ্যায় সিরাজ পরিবার জিনজিরা প্রাসাদ থেকে নেমে বুড়িগঙ্গা নদীর বুকে এক নৌকায় আরোহণ করে।  নৌকা যখন বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরীর সঙ্গমমূলে ঢাকাকে পেছনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন মীরননিযুক্ত ঘাতক বাকির খান নৌকার ছিদ্রস্খান খুলে দিয়ে নৌকাটি ডুবিয়ে দেয়।কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবাই তলিয়ে যান বুড়িগঙ্গায়।

ইতিহাস বিখ্যাত জিনজিরা প্রাসাদ বর্তমানে নিশ্চিহ্নপ্রায়। একদা এটা ছিল নির্জন গ্রাম­ যার নাম হাওলি বা হাবেলী। বর্তমানে ঘিঞ্জি বসতি।  এর আদিরূপ ধ্বংস হয়েছ। বর্তমানে প্রাসাদটির দুইটি অংশ পৃথকভাবে টিকে রয়েছে। এর একটি পূর্বাংশের তিনতলা সমান একটি স্থাপনা। এটি অনেকটা ফাঁসির মঞ্চ বা সিঁড়িঘর বলে মনে হয়। প্রাসাদের মূল তোরণটির ভগ্নাংশ এ অংশের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। ভগ্ন কয়েকটি কক্ষবিশিষ্ট অপর অংশটিও জীর্ণ অবস্থায় টিকে রয়েছে। টিকে থাকা স্থাপনাটুকুও ভেতরে-বাইরে অবর্জনায় পূর্ণ। দীর্ঘদিনের অব্যবহার ও অযত্নের ফলে গাছের শিকড় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ফেলেছে ভঙ্গুর দেয়ালগুলো। দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে জন্মেছে পরগাছা। ছাদ থেকে ভিত্তি পর্যন্ত ছোট-বড় ফাটল ও গর্তে পূর্ণ। প্রাসাদ এলাকাসহ সন্নিহিত এলাকায় বাড়ি-ঘর ও দোকানপাট গড়ে উঠেছে। ফলে একেবারে নিশ্চিহ্নপ্রায় প্রাসাদটির কাছে না গেলে দূর থেকে এর অস্তিত্ব বোঝা যায় না।

সর্বশেষ মালিকানাঃ পুরো প্রাসাদ ও এর আশপাশ মালিকি ও তত্ত্বাবধায়ক পরিবারের পূর্বপুরুষ হাজী অজিউল্যাহ ব্রিটিশ আমলে ১৪ শতক জমি সাফ কবলা মূলে খরিদসূত্রে মালিক। ওয়ারিশসূত্রে বর্তমান মালিক ও পরিবার প্রধান জাহানারা বেগম (জাহারা) ৬২। হাজী অজিউল্যাহ তার শ্বশুর।

কীভাবে যাবেনঃ

গুলিস্তান থেকে থেকে সদরঘাট গামী যে গাড়িতে অথবা রিক্সা করে আপনি চলে আসতে পারেন সদরঘাট । সদরঘাট থেকে বুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে সোয়ারীঘাট সংলগ্ন বড় কাটরায় গিয়ে যে কাউকে করলেই পাওয়া যাবে জিনজিরা প্রাসাদ ।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: February 7, 2018

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.