ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর(Bangladesh Jatio Jadughar) সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। একদিনে সমগ্র বাংলাদেশ ঘুড়তে না পারলেও একদিনের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারনা নিতে পারবেন জাতীয় জাদুঘর থেকে। বাচ্চাদের সঙ্গে নিতে পারেন, যাতে তারাও বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে।
১৯১৩ সালের ৭ আগস্ট ‘ঢাকা জাদুঘর’ নামে যাত্রা শুরু করেছিল জাতীয় জাদুঘর। তৎকালীন বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি কক্ষে এর উদ্বোধন করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৮৩ সালে একে ‘বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর’ নামে অভিহিত করা হয়।
চারতলা এই ভবনের স্থাপত্য নকশা অত্যন্ত নজরকাড়া। ২০ হাজার বর্গমিটারের এই ভবনটির ৪৬টি গ্যালারিতে রয়েছে প্রায় ৮৩ হাজারের বেশি নিদর্শন। কেবল বাংলাদেশেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ জাদুঘর। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের ইতিহাস ও সভ্যতার প্রতিটি ধাপের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এই প্রতিষ্ঠান বর্তমানে রয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে।
টিকেট কেটে মূল ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে জাদুঘর ভবনের। ভবনটির চারদিকে রয়েছে প্রচুর গাছপালা, যা এক মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ভবনের প্রবেশদ্বারে রয়েছে সুসজ্জিত দুটি কামান। ভবনটির ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে নান্দনিক নভেরা ভাস্কর্য। নিচতলায় রয়েছে শুভেচ্ছা স্মারক বিপণি, সে সঙ্গে রয়েছে ব্যাগ রাখার স্থান ও কয়েকটি খাবারের দোকান। সিঁড়ি বেয়ে ওপরের দিকে উঠলেই পাবেন গ্যালারি নির্দেশক। প্রতিটি তলাতেই রয়েছে এই নির্দেশক, যা দর্শনার্থীকে প্রতিটি তলার গ্যালারি সম্পর্কে অবগত করে।
জাদুঘরের প্রথম তলাটি যেন পুরো বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ। বাংলাদেশের মানচিত্র দিয়ে শুরু হওয়া এই তলাতে আরো দেখতে পাবেন বাংলাদেশের গাছপালা, প্রাণী, সুন্দরবন, উপজাতীদের জীবনধারা, খনিজ শিলা, ভাস্কর্য, মুদ্রা এবং প্রাচীন যুগের নানাবিধ ভাস্কর্যের।
ভবনটির দ্বিতীয় তলায় দেখতে পাবেন বাংলাদেশের সভ্যতা ও ইতিহাসের ক্রমবিবর্তন। বিভিন্ন সময়ের অস্ত্র, বাদ্যযন্ত্র, চীনামাটির হস্তশিল্প, কুটিরশিল্প, পাণ্ডুলিপি, সমকালীন শিল্পকলা এবং বাংলাদেশের নানাবিধ ঐতিহ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে এই তলা।
ভবনের তৃতীয় তলায় রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্যক্তির প্রতিকৃতি, চিত্রকর্ম ও বিশ্বসভ্যতার নানা নিদর্শন।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের রয়েছে আনুমানিক ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার বইসংবলিত নিজস্ব গ্রন্থাগার। গবেষণার কাজে এই গ্রন্থাগার বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ ছাড়া রয়েছে জাদুঘর মিলনায়তন, যা বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার বা সভার কাজে ব্যবহার করা হয়।
বিদেশি নাগরিকদের সুবিধার্থে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সাতজন গাইডের ব্যবস্থা করেছে।
জাতীয় জাদুঘরের বিভাগগুলো হচ্ছেঃ-
- ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা
- জাতিতত্ত্ব ও অলঙ্করণ শিল্পকলা
- সমকালীন শিল্পকলা ও বিশ্বসভ্যতা
- প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগ
- সংরক্ষণ গবেষণাগার
নিয়ন্ত্রণাধীন জাদুঘরঃ
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের নিয়ন্ত্রণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জাদুঘরগুলো পরিচালিত হচ্ছে।সেগুলো হলোঃ-
- আহসান মঞ্জিল জাদুঘর, ঢাকা।
- শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, ময়মনসিংহ।
- ওসমানী জাদুঘর, সিলেট।
- জিয়া স্মৃতি যাদুঘর, চট্টগ্রাম।
- পল্লীকবি জসীম উদ্দীন সংগ্রহশালা, ফরিদপুর।
- সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘর, কুষ্টিয়া।
- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর ও জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর, কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা।
খোলা থাকার সময়
- এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর (গ্রীষ্মকাল) – শনি-বুধ: ১0.৩0 -১৭,৩0 অপরাহ্ণ
- অক্টোবর থেকে মার্চ (শীতকাল) শনি-বুধ: 0৯.30 পূর্বাহ্ণ -১৬,৩0 অপরাহ্ণ
- রমজান শনি-বুধ: 0৯.30 পূর্বাহ্ণ -১৫,00 অপরাহ্ণ
- শুক্রবার বিকেল ৩.00 থেকে রাত ২0,00 পর্যন্ত
প্রবেশ মুল্য
-
- বাংলাদেশী নাগরিক: ২০ টাকা
- বাংলাদেশী নাগরিক: ৩ থেকে ১২ বছর বয়সীদের জন্য পাঁচ ৫ টাকা,
- সার্ক দেশগুলির নাগরিকদের:২০ টাকা
- অন্যান্য বিদেশী নাগরিক: ১০০ টাকা
তবে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে, যেমন—পয়লা বৈশাখ, ২৬ মার্চ, ২১ ফেব্রুয়ারি প্রভৃতি দিনে শিশু ও ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ।
কিভাবে যাবেনঃ
গুলিস্তান বা ঢাকার যে কোন বাসে করে শাহবাগ চলে আসুন। শাহবাগ মোড়ের দক্ষিন পশ্চিম পাসেই জাতীয় জাদুঘর।